প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৩ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
মহাভারতে এক চরিত্র ছিল বর্বরিক। তিনি শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কিন্তু মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন শুধু দুর্বলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন কৌরব বা পাণ্ডব এক পক্ষ নিতে হয় তিনি উভয় পক্ষ নিলেন। অর্থাৎ তিনি এক পক্ষের হয়ে যুদ্ধ করতে থাকবেন যতক্ষণ না অপর পক্ষ দুর্বল হচ্ছে। তারপর নতুন পক্ষের হয়ে যুদ্ধ করবেন আগের পক্ষ দুর্বল হওয়া পর্যন্ত। এভাবে একসময় তিনি ছাড়া আর সবাইকে তিনি হত্যা করে ফেলবেন।
যুদ্ধের শুরুতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেখলেন এ তো এক বিপদ। তিনি তাকে অমরত্ব দানের কৌশলে সরিয়ে ফেললেন। এতদিন পর বর্বরিকের গল্প মনে পড়লো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমি বেশ জোরেশোরেই রোহিঙ্গা সমর্থনে ছিলাম। আমি একা নই অনেকেই ছিলেন। এখন সময়ের সাথে প্রমাণ হচ্ছে আমরা ভুল ছিলাম। দুর্বলের পক্ষে থাকাই হয়তো সবসময় ধর্ম নয়। আজ এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে মনে হলো আমি এখনোও পক্ষ ছাড়তে পারিনি। বিবেক ও বুদ্ধির লড়াইয়ে বিবেককে জিতিয়ে দিচ্ছি। যেটা বিপদজনক। আমার লেখাগুলো নির্লজ্জ প্রকৃতির শুধু আমার কথাই বলে। সাহিত্যকারের যে শৈল্পিক প্রতিভা এক মসৃণ তল সৃষ্টি, যেখানে অনেক আত্মা প্রতিফলিত হয়- সে আমার লেখায় অনুপস্থিত। এতো দিন পর ডায়েরি চালিয়ে যাওয়া বা না যাওয়ার কোনো চাপ আমার উপর নেই। কিন্তু নতুন কিছু যখন হচ্ছে না তখন বন্ধ করে দেয়াই ভাল। এটি সিদ্ধান্ত নয় জাস্ট ফুটনোট এক দুইজনের জন্য। মানুষ কী দিন তারিখ সব মনে রাখতে পারে? পারে না। একটি বিশেষ বছর বা দিনকে মনে রাখে। পারবেই বা কেন! একটি উপবৃত্তাকার পথে ঘূর্ণায়মান চলন্ত বস্তুর কখনো পূর্ব পশ্চিম হয়? হয় না। পৃথিবীতে আমরা পূর্ব পশ্চিম বানিয়ে রেখেছি। তা দিয়েই অতীত ভবিষ্যৎ বিচার করছি। অথচ মহাকালের কোনো দায় নেই চলার পথে এক বিন্দুর পরিচয় ধরে রাখার। অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, মিনিট সব মানুষের তৈরি। মানুষ তো প্রকৃতির বাইরে নয়। তাই যে দিনটি সে মনে রাখে তার পরে যা আসে সব তার জন্য অতিরিক্ত অথবা প্রতীক্ষা। সে কবে শেষবার আলাপ- তার আশেপাশে সব ধূসর হয়ে গেছে শুধু সে মুহূর্ত বাদ রেখে। এর নাম স্মৃতি। সব অতীতই স্মৃতি নয়।
কথায় বলে লজ্জার সাথে ভালোবাসার অনেক সখ্যতা। নির্লজ্জ ‘ভালোবাসা’ একসময় কেবল দায়িত্ব হয়ে পড়ে থাকে। নতুন তো সারাজীবন রাখা যাবে না, পুরাতনকে নতুন রাখার চেষ্টাটিই মহান।