প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩১ অক্টোবর ২০২০, শনিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
কাল যখন বাসে রাত তখন আগত প্রায়। বাসের ভেতরে বাতি নেভানো। অন্ধকার বাস যেন বাইরের অন্ধকার থেকে অন্ধকার চুরি করছে। যে মহান শিল্পী ছবি আঁকছেন তার হাতে শুধু কালো রঙ। আকাশ কালো, দূরের গাছগুলো কালো, হঠাৎ দেখা একদুই মানুষ কালো। বৃষ্টি, সন্ধ্যা, সূর্যদেবের ছেড়ে যাওয়া আলো, একাকীত্ব- সব মিলিয়ে মোহনীয় মুহূর্ত।
আমি ঢাকা আসছি পূজা উপলক্ষে। পূজার ছুটি শুরু হয়ে গেছে। ছুটি শব্দের যে আনন্দ তার সাথে পূজার আনন্দ মেলানো যাবে না। পূজা আমাদের জীবনে কেবল ছুটির আনন্দ নিয়ে আসে, পূজার কোনো আলাদা আনন্দ নেই। শহুরে জীবনে দেবী স্বয়ং তার সিংহবাহিনী নিয়ে নাগরিক নিয়মে বন্দী। আমরা এমন এক পাড়ায় থাকি যেখানে কোনো পূজা হয় না। ঢাকের শব্দ নেই, মন্ত্রোচ্চারণ নেই, আলো সাজানো নেই, গান বাজনা নেই, তাড়াহুড়ো নেই। আনন্দকে অনুভব করতে আনন্দের কাছে যেতে হয়। আনন্দ নিজে এসে ধরা দেয় না। আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি এমন উৎসবে। পূজা হচ্ছে কোথাও এ তথ্যই যথেষ্ট আমাদের ভাব সাগরে ভেসে যাওয়ার জন্য। এক ভদ্রলোক এসেছিলেন রোগী পরিচয়ে। বলছিলেন তার মেয়ে ভাল ছাত্রী ছিল। ফাইভে এইটে ভাল রেজাল্ট করেছে, ক্লাস দশে এক ছেলের সাথে প্রেম শুরু করে। তিনি বাধা দেয়ায় পালিয়ে যায়। পালিয়ে তারা বিয়ে করে। এখন মেনে নিয়েছেন কিন্তু তার শান্তি নেই। প্রেমে পড়ার কী কোনো বয়স আছে? দশ বছর আগে যে নিজেকে বড় ভাবতো এখন দশ বছর পর নিজেকে কি ভাবে? সময় একজনের যে কত চরিত্র তৈরি করে, এরা একে অপরকে দেখলে কী বুঝতে পারে একই মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মুখ।
অধিকাংশ মানুষের মতে ভালোবাসা কোনো জিনিস যে কারো জন্য তুলে রাখা যাবে। অথবা কেউ কারো কাছ থেকে চুরি করে নিতে পারবে। অথচ বিষয়টি অন্যরকম। মোমবাতি আলো শেয়ার করে। এক মোমবাতি আরেক মোমবাতির কাছ থেকে আলো চুরি করতে যায় না। ভালোবাসা-কে এরকম বলা যেতে পারে। না সে মেয়েটি না তার বাবা সত্যি ভালোবাসা বুঝেছে। নিদ্রাবিহীন রজনী এক ভালোবাসা শুন্য অন্ধকারের প্রতিশব্দ। সেখানে ডাক্তার অনর্থক। কখনো কখনো ক্ষতিকারক। প্রয়োজন উপদেষ্টার। মাঝে এক রোগী মারা গেল। একপ্রকার বিনা চিকিৎসায়। তার ছেলে, ছেলের বউ, নাতিরা কাঁদছিলো। বয়স তাদের ভাষ্যমতে ১০৭। দেখলাম কিছুই বদলালো না। বাইরে যেমন রোদ যেমন বৃষ্টি তেমনই আছে। প্রকৃতি বা সময়ের কোনো দুঃখবোধ নেই। পৃথিবীর কাছে একশত সাত বছরের কোনো আলাদা মূল্য নেই। একদিন আমিও মারা যাব। মাটিতে মেশার পর এই সদ্যপ্রয়াত বৃদ্ধার সাথে কী পার্থক্য। শ্মশান বৈরাগ্যভাব মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখলেই উদয় হয়। কবীর সুমন পোস্ট দিয়েছেন তাঁর সবকিছু যেন কলকাতার পৌরসভার গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তারা সব পুড়িয়ে ফেলবে। কীর্তি ছাড়া আর কিছুই তো থাকে না। তিনি সেটুকুও রাখার পক্ষপাতী নন। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীর নৌকাটিও তিনি ডুবিয়ে দিতে চান। তিনি ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাচারী, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর এন্টি সোশ্যাল।
পায়েসের বাটি আর ডুবে থাকা চামচের মুখের মতো হতে পারলে বেশ হতো। সংসারের মিষ্টির সাথে লেগে থাকলাম, স্বাদ নিলাম না। যোগমায়ার পুজো চলছে। মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তির শিক্ষা না নিলে ব্যর্থ এ আরাধনা। মায়া ধরে রাখার বিদ্যা- বেগ, মহামায়া মুক্তিবেগ।