প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
‘একজন মহিলা সাইক্রিয়াটিস্ট আবশ্যক যিনি সময় দিয়ে রোগী দেখবেন এবং ধৈর্য সহকারে কথা শুনবেন’। আমি গিয়ে লিখলাম ‘তুমি আগে ঠিক করো কী চাচ্ছো- মেয়ে ডাক্তার না ধৈর্য সহকারে কথা শোনা’! পোস্টদাতা আমার পূর্ব পরিচিত। একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। এডমিন ‘অসভ্যতা’র অভিযোগে অভিযুক্ত করলেন।
সভ্যতাহীনতা অনেকের কাছে মনে হচ্ছে হয়তো। তবে আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কমেন্টটি করি নি। কে যে কোন কথায় কিভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলা কঠিন। উনার কথায় আমার একটু খারাপ লেগেছে। ভাবছি গ্রুপ ছেড়ে দিব। কোনো গ্রুপে একটিভ না থাকা, কমেন্ট শেয়ার না করা, বিশেষত মেয়েদের থেকে শতহস্ত দূরে থাকা- আমার পুরনো নীতিই নিরাপদ।
এক বিষ খাওয়া রোগীকে কাউন্সিলিং করছিলাম। বলছিলো- ‘ভাল কিছু বলুন’। বললাম ‘বিষ খাওয়ার মধ্যে ভাল কিছু নেই’। সব ভালরও একটি বিষক্রিয়া আছে। পজিটিভিটির যেমন আছে ‘টক্সিক পজিটিভিটি’। কেন ভাববো টানেলের শেষ মাথায় আলো আছে? ঝড়ের রাত একসময় শেষ হবে? এও কী অসুস্থতা নয়- নিজের ভেতর সূর্যের আলো লোড দেয়া। বিশেষত যেখানে প্রতিনিয়ত রাত্রির অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পথ চলতে হয়। জরুরি বিভাগে এক বাচ্চার ড্রেসিং হচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদছে। বাবা মা স্বান্তনা দিচ্ছে ‘ছিঃ বাবা, বড় হয়েছো না!’ কোনটা ভাল? বড় হওয়ার সুনামে কান্না গিলে ফেলা, না চিৎকার করে সবাইকে জানান দেয়া যে কষ্ট হচ্ছে? আমি দ্বিতীয় পক্ষে।
বিরক্ত লাগে। অর্থনৈতিক ভগ্নদশা চলছে, মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন কম দিচ্ছে, পরিচিতরা প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে, ক্ষণেক্ষণে কেউ মারা যাচ্ছে- আর আরেকদল বলছে ‘স্টে পজিটিভ, বি পজিটিভ’। সততা কি? নির্বোধকে নির্বোধ না বলাই কী সততা! ভদ্রতা কি? গালি খেয়ে চুপ থাকার নামই ভদ্রতা! তবে অসৎ ও অভদ্র হওয়াই ঢের ভাল। অন্তত তারা সৎ নিজের কাছে।
ওই যে একটি ম্যাক্সিম আছে না- ‘যত কঠিন খোঁজাই খুঁজো, কাকের মুখ থেকে কখনো দাঁত বেড়োবে না’। কারন কোনো পাখির মুখে দাঁত নেই। পাখি খাবার সরাসরি গিলে খায়। প্রশংসা বা স্তব বাক্য বা উচ্চাসন গাধাকে সিংহ বানিয়ে দেয় না।
এদিকে হংকং য়ের গবেষকেরা নিশ্চিত করেছেন করোনাভাইরাস রি-ইনফেকশন করতে পারে। সেক্ষেত্রে সিম্পটম আসবে না, আসলেও সামান্য। তবে তার মাধ্যমে যার এখনো হয় নি তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। কতদিনের মাথায় পূণরায় আক্রান্ত হতে পারে এটি নির্ভর করবে ব্যক্তি ইমিউনিটির উপর। তিন মাস চার মাস ছয় মাস.. দুই বছর। WHO এখনো এ বিষয়ে একমত হয় নি। সেক্ষেত্রে যারা আক্রান্ত হয়ে বসে আছেন তারা অন্তত কিছু স্বস্তি পাবেন।
এতোদিন রোগী এসেছে করোনার সিম্পটম নিয়ে। এখন আসছে করোনার আফটার ইফেক্ট নিয়ে। করোনা রোগটি খুব ভাল নয়। এমনকি যাদের মাইল্ড সিম্পটম ছিল তাদেরও পার্মানেন্ট স্কার মার্ক থেকে যাচ্ছে। পোস্ট ভাইরাল দুর্বলতা, বুকে ধড়পড়, বুকে ব্যাথা, একটু কাজ করতে গেলে শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি- হচ্ছেই। তুলনামূলক কম বয়সীরা ভাল আছেন। তাদের এসব নেই।
…
গোল কাগজ এক ভাঁজের মতো এক চাঁদ উঠেছে। পরিষ্কার আকাশ, অসংখ্য তারা। মেঘ দূরে কোথাও ভেসে বেড়াচ্ছে নিজের মতো। যখন যেখানে মন খারাপ একটু মানুষের মতো করে কেঁদে নিচ্ছে। অনেকদিন পর আবার কর্মস্থলের ডর্মিটরিতে। সারা রাত ধরে আকাশ দেখবো। সপ্তর্ষিমণ্ডল তো সারাবছর দেখা যায় না!
সবচেয়ে বেশি বদলাচ্ছে আকাশ। দুই আকাশ কখনো এক নয়। অথচ মানুষ কোথায় কোথায় যায়, একবার ঘাড় উঁচু করে আকাশ দেখে না। হিন্দুরা বিশ্বাস করে মানবদেহ পাঁচ উপাদানে গঠিত। অগ্নি, বায়ু, জল, মাটি, আকাশ। এ আকাশ সে আকাশ, বিশাল শূন্যতা। আমরা আকাশ পানে চেয়ে কতকিছুই না দেখি- সপ্তর্ষিমণ্ডল, চাঁদ, মেঘ, সূর্য, পাখি, ঘুড়ি। সবচেয়ে বেশি যে ‘শূন্যতা’ সেটি খুঁজি না।
হুবুহু মানুষ দেখার মতো। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ভীড়ে সবচেয়ে বেশি থাকে ঘিরে থাকা শূন্যতারা। সে বাদ দিয়েই ‘মানুষ’ দেখি।