রবিবার, ৫ই এপ্রিল, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। কোনো অজানা সময়ের গল্প নয়। এটি একদিন আগের সিএনএন, রয়টার্সের সংবাদ। দেশটির নাম ইকুয়েডর। শহরটির নাম গুয়াকুইল। রোগটির নাম কোভিড ১৯।
হাসপাতালে আর কোনো জায়গা নেই রোগী নেয়ার। বৃদ্ধদের গেট থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মৃতদেহ সংকুলান করার জায়গা নেই মর্গ অথবা কবরস্থানে। মানুষ লাশ রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে। বাড়িতে প্লাস্টিক আর কার্ডবোর্ডে পেঁচিয়ে ফ্যান দিয়ে রেখে দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে ‘আমরা চেষ্টা করছি’। একদিন, দুইদিন, তিনদিন, চারদিন, পাঁচদিন!
প্রকৃত কতজন করোনায় মারা গেছেন সংখ্যাটি জানা যাবে না। কেউ কেউ জানেন তার আত্মীয় ভাইরাল ফিভারে ভুগছিলেন। কেউ কেউ কিছুই জানেন না, কারণ হাসপাতাল পর্যন্তই পৌঁছানো যায় নি। সরকারি হিসেব মতে ৪০০ এর বেশি লাশ ঘর থেকে উদ্ধার হচ্ছে। ১৫০ এর বেশি মৃতদেহ রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে। হিসেবগুলো একদিনের! পুরো শহরের বাতাস দুর্গন্ধে ভারী হয়ে আছে। মানুষ দেখছে প্রিয়জনের পঁচে যাওয়ার দৃশ্য।
মেয়র বুঝে পাচ্ছেন না- হঠাৎ করে কী হলো! পুরো সিস্টেম একদম ধ্বসে গেলো! বিশ্বাস করুন- ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান, ডেথ চার্ট, বা ডে টু ডে কমপেয়ার- অনেক কথাই বলছে না। হাসপাতালে অপেক্ষায় থেকে থেকে হুইলচেয়ারে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, সেটি টের পাওয়া গেছে পাক্কা চার ঘন্টা পর!
শহরের লোকসংখ্যা ২৫ লক্ষ। সরকারি হিসেব মতে ১০০ এর কিছু বেশি করোনায় মারা গেছেন। টেস্ট করা হচ্ছে কম, তাই বলে মৃত্যু থেমে নেই।
গোথাম সিটির জোকার ময়লা স্তুপে বড় বড় ইঁদুরের গর্ত থেকে এমনি এমনি জন্ম নেয় না! একই দৃশ্য কনটেম্পোরারি পৃথিবীতে অন্য কোনো শহরে ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করি না! কিন্তু এটি লোভের সময় নয়, এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের সময় নয়, এটি সিদ্ধান্তহীনতার সময় নয়। আমাদের দেশটি ছোট, আমরা জনসংখ্যায় অনেক বেশি। আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। আমাদের কর্তৃপক্ষ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস মালিক, বণিক সম্প্রদায়, ধনী সম্প্রদায়ের আরেকটু দায়িত্ব নিতেই হবে।
মৃত্যু সংখ্যা, আক্রান্ত সংখ্যা, সময়ের গ্রাফ- কিছুই আমাদের ভাবাচ্ছে না! মানুষ হাঁটছে, মসজিদে যাচ্ছে, বাজারে যাচ্ছে। কর্মস্থল খুলে যাচ্ছে। ইকুয়েডরের এ শহরটি যদি একটু ভাবায়! মৃত সরানোর লোক নেই, কবর দেয়ার লোক নেই, কবরের জন্য স্থান নেই।
দি আর্থ ইজ নট আওয়ারস!
লেখা: ডা. শুভদীপ চন্দ