লিউকোট্রিন কি?
লিউকোট্রিন হচ্ছে একপ্রকার inflammatory mediator। এটি মূলত লিউকোসাইটের মধ্যে উৎপন্ন হয়। প্রদাহের সময় প্রোস্টাগ্লান্ডিন আর হিস্টামিনের সাথে কিছু পরিমান লিউকোট্রিন উৎপন্ন হয়। শরীরের কোথাও যখন কোনো প্রদাহ হয়, তখন সেখানে অতিরিক্ত প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরি হয়ে পেইন রিসেপ্টর গুলিকে স্টিমুলেট করে। আর সেইজন্য ব্যথা অনুভব হয়। প্রদাহের সময় হিস্টামিন সমূহ ক্যাপিলারি পারমিয়াবিলিটি বাড়িয়ে দেয়, তাই ফ্লুইড Exudation হয়ে সেখানে swelling হয়। আর যেই কিছু পরিমান লিউকোট্রিন তৈরি হয়, সেখানে যদি কোনো লিউকোট্রিন রিসেপ্টর না থাকে, তাহলে লিউকোট্রিন এর কাজ মোটামুটি হিস্টামিনের মত।
লিউকোট্রিন রিসেপ্টর
যদি শ্বাসতন্ত্রে কোনো প্রদাহ হয়, হোক, তা ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া কিংবা কোনো এলার্জেন দ্বারা,
তখন inflammation এর নিয়ম অনুযায়ী সেখানেও প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরি হবে, মাস্ট সেল থেকে হিস্টামিন রিলিজ হবে, আর লিউকোসাইট থেকে লিউকোট্রিন তৈরি হবে।
শ্বাসতন্ত্রে লিউকোট্রিনের প্রভাব
শ্বাসতন্ত্রের মাঝে কিছু লিউকোট্রিন রিসেপ্টর রয়েছে। শ্বাসতন্ত্রে যখন কোনো প্রদাহ হয়, তখন সেখানে লিউকোটেরিন উৎপন্ন হলে লিউকোটোরিন সমূহ লিউকোটেরিন রিসেপ্টর কে Active করে।
শ্বাসনালিতে লিউকোট্রিনের কাজ
১। শ্বাসনালিতে প্রদাহ হলে যেই লিউকোট্রিন তৈরি হয়, তা শ্বাসনালীর smooth muscle সমূহকে সংকুচিত করে, এতে করে শ্বাসকষ্ট হয়, আর তখন শ্বাসতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক রাখতে ইরিটেন্ট পদার্থ সমূহকে শ্বাসনালী থেকে বের করে দেওয়ার জন্য Cough Reflux Activated হয় এবং কাশি আসে।
আল্টিমেটলি এই লিউকোটেরিন Broncho Constriction এর মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট এবং কাশি তৈরি করে।
২। Asthma রোগীদের শ্বাসতন্ত্র মূলত এলার্জেন পদার্থের প্রতি অতিমাত্রায় রেসপন্সিভ থাকে, আর এলার্জেন সমূহ দ্বারা প্রদাহ হবার কারণে লিউকোট্রিন তৈরী হয়, আর এই লিউকোট্রিন এর কারণে শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত হয়ে Asthma রোগীদের শ্বাসকষ্ট ও কাশি হয়।
৩। এই লিউকোট্রিনের পরিমান বেড়ে গেলে তা ক্যাপিলারি পারমিয়াবিলিটি বাড়িয়ে দেয়, তাই তখন ব্লাড ভেসেল থেকে ফ্লুইড বেরিয়ে চলে আসে, এবং মিউকাস তৈরী করে, যার কারণে Productive Cough তৈরী হতে পারে।
৪। এলার্জিক রাইনাইটিসের সময় মাস্ট সেল থেকে যখন প্রচুর পরিমান হিস্টামিন রিলিজ হয়, তখন লিউকোসাইট থেকে লিউকোট্রিনও তৈরি হয়, আর দুইটাই ক্যাপিলারি পারমিয়াবিলিটি বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রচুর নাকের পানি নির্গত হয়।
উপরের এই প্যাথোফিজিওলজি থেকে আমরা যেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি –
১। লিউকোট্রিন দিয়ে যেহেতু Asthma, শ্বাসকষ্ট, কাশি, এমনকি এলার্জিক রাইনাইটিস হতে পারে, তাই লিউকোটেরিন তৈরির পথ কে ইনহিবিট করে আমরা উল্যেখিত উপসর্গের পরিমান কমাতে পারি। অর্থাৎ লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট ড্রাগ যথা মন্টিলুকাস্ট দিয়ে আমরা উল্যেখিত উপসর্গ তথা Asthma, শ্বাসকষ্ট, কাশি, এলার্জিক রাইনাইটিস ইত্যাদি কমাতে পারি।
২। Respiratpry tract এ যদি কোনো ভাইরাল ইনিফেকশন কিংবা ব্যাক্টেরিয়াল ইনিফেকশন হয়,
তখন সেখানে প্রচুর পরিমান লিউকোট্রিন তৈরি হতে পারে এবং কাশি তৈরি করতে পারে। তাই একিউট ইনফেকশনের সময় যথা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। কিংবা Rhinovirus ইত্যাদি দিয়ে শ্বাসনালী আক্রান্ত হয়ে যদি জ্বর চলে আসে এবং সাথে কাশি থাকে, তাহলে কাশি কমানোর জন্য লিউকোট্রিন কমাতে হবে, তাই Post viral cough এর চিকিৎসায় লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট তথা মন্টিলুকাস্ট ইত্যাদি ভূমিকা রাখে। তবে রিসেন্টলি কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, মন্টিলুকাস্ট Asthma associated কাশি কমাতে যেই পরিমান ভূমিকা রাখে, Common Cold জনিত কাশির ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম ভূমিকা রাখে।
৩। asthma রোগীদের যেহেতু এলার্জেন এর প্রতি হাইপাররেসপন্সিভনেস রয়েছে, আর এলার্জেন যেহেতু ধুলা-বালি, খাবার দাবার ইত্যাদি সব কিছুতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এলার্জেন দ্বারা যেনো তাদের লিউকোটেরিন তৈরি না হয়, সেইজন্য asthma রোগীদের প্রোফাইলেক্সিস ম্যানেজমেন্ট হিসাবে লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট ড্রাগ মন্টিলুকাস্ট ইত্যাদি দেওয়া হয়।
৪। হার্ট ফেইলুর কিংবা উচ্চ রক্তচাপ এর জন্য যারা ACE inhibitor মেডিসিন নেয়, তাদের ব্র্যাডিকাইনিন এর পরিমানের বেড়ে যায়, আর ব্র্যাডিকাইনিন শ্বাসনালিতে লিউকোট্রিন উৎপাদন এর মাধ্যমে শুকনা কাশি তৈরি করে, তাই ACE inhibitor ব্যবহার জনিত শুকনা কাশি বন্ধ করার জন্য লিউকোট্রিন এন্টাগনিস্ট হিসাবে মন্টিলুকাস্ট দেওয়া হয়।
প্রেগনেন্সিতে মন্টিলুকাস্ট
মন্টিলুকাস্ট এর প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি হচ্ছে B ক্যাটাগরি, আর B ক্যাটাগরি ড্রাগ প্রেগনেন্সি তে নির্ভয়ে ব্যবহার করা যায়, ফিটাসের উপর এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই, তাই যেইসব গর্ভবতি মহিলার এ্যজমা কিংবা কাশি রয়েছে, তারা মন্টিলুকাস্ট ব্যবহার করতে পারবেন।
মন্টিলুকাস্ট এর ডোজ
মন্টিলুকাস্ট ১০ মিঃগ্রাঃ করে প্রতিদিন সন্ধায় আহারের পরে কিংবা আগে খাওয়া যায়।
এন্টি লিউকোট্রিন ড্রাগসমূহ
১. Montelukast (সর্বাধিক ব্যবহৃত)
২. Zafirlukast
৩. Pranlukast
ডা. ইসমাইল আযহারি
DCMC/2013-14