ডা. এবিএম কামরুল হাসান
এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম),
সহকারী রেজিস্ট্রার, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে গেলে (হাইপোথায়রয়েড) থাইরয়েড হরমোন ওষুধ হিসেবে লেভো-থাইরক্সিন সেবন করতে হয়। সাধারণতঃ মুখে খাবার ট্যাবলেট লেভোথাইরক্সিন সেবনের মাধ্যমে এই হরমোনের ঘাটতি পূরণ করা হয়। বেশিরভাগ রোগীর জন্য হাইপোথাইরয়ডিজম সারাজীবনের রোগ, তাই সারা জীবন ওষুধ খেয়েই ঘাটতি পূরণ করে যেতে হবে।
রামাদানে হাইপোথায়রয়েড রোগীর করণীয়:
১। হাইপোথায়রয়েড রোগীদের রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই, অন্য সুস্থ মানুষদের মতো তারা একইভাবে রোজা রাখতে পারবেন। তবে যাদের পিটুইটারি গ্রন্থির অকার্যকারিতার কারণে থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি হয়, তাদের কথা ভিন্ন। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখলে বিপদ হতে পারে।
২। রোজায় সময় অনেক রোগীই লেভোথাইরক্সিন বাদ দিয়ে দেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোনো উৎসব-পার্বণ বা অন্য কোনো অবস্থাতেই এটি বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। থায়রয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে রোজার আগের সময়ের সমপরিমাণ ওষুধ রোজার সময় খেয়ে যেতে হবে। আর থায়রয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আগেভাগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩। লেভোথাইরক্সিন সবসময়ই একদম খালিপেটে সেবন করতে হয়। খালিপেটে সেবন করলে ওষুধের শতকরা ৮০ ভাগই আমাদের শরীরে শোষিত হয়, পক্ষান্তরে ভরাপেটে সেবনে শোষণের হার ৬০ ভাগে নেমে আসে।
৪। বছরের অন্য সময় সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওষুধটি খেয়ে নেয়া ভালো। ওষুধ খাওয়ার সময় থেকে সকালের নাস্তার ব্যবধান অন্ততঃ একঘণ্টা হওয়া উত্তম।
৫। রোজায় খাবার গ্রহণের সময়ের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তাই একদম খালিপেটে খেতে হলে ইফতারের সময় ওষুধ খেয়ে এক ঘণ্টা পর খাবার খাওয়া অথবা সেহরি খাওয়ার একঘণ্টা আগে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনেক রোগীই এভাবে ওষুধ খেতে অসুবিধা বোধ করবেন। সেহরির সময় ঘুম থেকে উঠেই ওষুধটি খেয়ে নেয়া যেতে পারে, তারপর খাবার রান্না ও প্রস্তুতির জন্য কিছু সময় ব্যয় হয়, এরপর খাবার খেলে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় ব্যবধান হয়ে যাবে। এই নিয়মে ওষুধ খাওয়া মহিলা রোগীদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য হতে পারে।
৬। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওষুধ খাওয়া রোগীদের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগের দুইঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে।
৭। কোনো কারণে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে তখনি খেয়ে নিন, তবে তা খালিপেটে (আহারের অন্ততঃ ১-২ ঘণ্টা আগে বা পরে) হলে ভালো। সেদিন মনে না পড়লে পরদিন একবারে দুইদিনের ডোজ খেয়ে নিতে পারেন।
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর