কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে আগত রোহিংগাদের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা তথা আমাদের নিজেদেরও আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর অধীনে ডাক্তারসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মী একদম শুরু থেকেই কাজ করছে।
এ মুহুর্তে প্রায় ২১ টি মোবাইল মেডিকেল টীম কাজ করছে। সারা দেশ থেকে ২৪ জন ডাক্তারকে ২ মাসের জন্য সেখানে নেয়া হয়েছে এবং আরো দ্বিগুন সংখ্যক নেয়া হবে। শুধু সরকারি ডাক্তাররাই নন, সেখানে MSF, IOM, UNiCEF এবং অন্যান্য এনজিওতে প্রচুর ডাক্তার রোহিংগাদের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করছে। UNICEF এর হয়ে এ মুহুর্তে সেখানে আছেন সিডিসির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ ।
ইউনিসেফ আরো নতুন ডাক্তার নেবার ঘোষনা দিয়ে সার্কুলার দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বিগত ১ সপ্তাহ সেখানে অবস্থান করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
এই সকল চিকিতসকগণ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে নিয়ে এপিডেমিওলজিক্যাল সিচুয়েশন এনালাইসিস, রুটিন এবং ইমার্জেন্সি ট্রিটমেন্ট, ভ্যাকসিনেশন, ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্টেশন, ডিওয়ার্মিং, টিবি ডায়াগ্নসিস ও ট্রিটমেন্ট এবং ম্যালেরিয়া ডায়াগনোসিস ও ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি সেবা দিচ্ছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। গত সপ্তাহে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সরেজমিনে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করে প্রায় ২০০ অপেক্ষমান রোগী দেখতে পান এবং সেবাদান প্রচেস্টার প্রশংসা করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শরনার্থীদের মাধ্যমে আসা ঝুকিপূর্ণ জীবানু সংক্রমন থেকে যেন ছড়িয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে তাদের রেজিস্ট্রেশিন, টীকা দান ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে টারশিয়ারি হাসপাতাল পর্যন্ত সর্বত্র তাদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে বিশেষত গানশট বা মাইন বিস্ফোরনে আহত রোগীদের জরুরী সার্জারিও করা হচ্ছে।
UNICEF ইতিমধ্যে সেখানে অফিস স্থাপন করেছে, MSF তাদের ১০ বেডের হাসপাতালকে ৫০ বেডে উন্নীত করেছে।রোহিংগাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন থাকতে স্বাস্থ্য সচেতনামূলক লিফলেট রোহিংগাদের বোধগম্য বার্মিজ ভাষায় প্রিন্ট করে দেবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
রোহিংগাদের মূল স্বাস্থ্য সমস্যা অপুষ্টি। ক্যাম্পে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুবিধাজনক নয়। এখন পর্যন্ত ২১-২২টি টিবি ও ২-১জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ম্যালেরিয়া রোগী এখনো সনাক্ত হয়নি। সক্ষম দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা সেবাদান ও সামগ্রী বিতরন, প্রসূতিদের সেবা, আপদকালীন মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদান ও চলছে।
আমাদের চিকিতসকদের এত ততপরতা ও সেবাদান এর বিষয়টি চোখে পড়েছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে আসা বিদেশী প্রতিনিধিদের। ফলে বিশ্ব অংগনে আমাদের চিকিতসা খাতের সক্ষমতা ইতিবাচকভাবে ফুটে উঠছে যা সর্বোপরি বাংলাদেশকে তুলে ধরছে বিশ্ব মঞ্চে।যে পরিকল্পনা ও কর্মততপরতা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যখাত আগাচ্ছে তাতে শরনার্থীসেবায় মাইলফলক স্থাপন করতে যাচ্ছি আমরা।
প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবনে রোহিংগা শরনার্থী অঞ্চলে কর্মরত, নতুন যারা গিয়েছেন এবং সামনে যারা আসবেন তাদের সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা জানাই।
ডাঃ মারুফুর রহমান অপু, medical officer, Management information system, DG health।
ছবি ঃ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ