ডেঙ্গুর আক্রমণে ত্রতব্যস্ত সারাদেশ। রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার ছড়িয়েছে অন্যান্য জেলাতেও । বাদ নেই গাজীপুরেও। সে বিষয়ে জানতেই গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন প্ল্যাটফর্ম প্রতিনিধিরা। জানা গেছে,গত ৩০ জুলাই হতে এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। ডেঙ্গু রোগীর আগমনের সাথে সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ ও সুচিকিৎসার লক্ষ্যে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছেন ১৫১ জন রোগী।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক ডাঃ দেব এর কাছ হতে জানা যায়, সকল রোগীকেই ভর্তি করছেন না তারা। শুধুমাত্র জ্বর নিয়ে যারা আসছেন , তাদেরকে বাসায় বিশ্রাম নেবার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কারণ এ অবস্থায় সাধারণত রোগীর তেমন কোন জটিলতা হয় না। সাধারণত জ্বর চলে যাবার পর যদি কোন জটিলতার সৃষ্টি হয় অথবা জ্বরের সাথে কোন জটিলতা সহ রোগী আসে সেক্ষেত্রেই রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২০২ জন। যার মধ্যে এই প্রতিবেদন এর সময় ভর্তি ছিলেন ৫১ জন। যার মধ্যে ৩১ জন পুরুষ, ১২ জন মহিলা ও আটজন শিশুও আছে।
রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সাধারণত লক্ষণ অনুযায়ী। রোগীদের কোন জটিলতা তৈরী হচ্ছে কিনা, বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগীদের সবচেয়ে কমন যে জটিলতা “প্লাজমা লিকেজ” তা মনিটর করার প্রতিদিন সকাল বিকেল রক্তচাপ পরীক্ষা, প্রতিদিন সিবিসি করা হচ্ছে। জটিলতা না হলে প্যারাসিটামল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্লুইড প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ আমির হোসাইন রাহাত স্যারের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকায় প্রথম থেকেই ডেঙ্গু রোগীর ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রয়োজনীয় সকল টেস্ট যেমন Dengue NS1, CBC সব বিনামূল্যে করা হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ হাসপাতালে আছে এবং ডেঙ্গু রোগীদের থেকে ডেঙ্গু যাতে আরো না ছড়াতে না পারে ,তাই প্রত্যেক রোগী সরবরাহ করা হচ্ছে মশারী। ডেঙ্গু রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেবার জন্যে হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল অর্থাৎ চিকিৎসক ,নার্স আছে বলে তিনি জানান।
এই সংকট থেকে মোকাবিলার মূল উপায় হচ্ছে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এডিস মশা যাতে বংশবৃদ্ধি না করতে পারে তা নির্মূল করা জানিয়ে এই বিষয়ক কর্মকান্ডে সকলকে যুক্ত হবার আহবান জানার তিনি এবং হাসপাতালের উদ্যোগে এই বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় , এই হাসপাতালে ভর্তিকৃত সকল রোগীর অবস্থাই সন্তোষজনক। মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাজ্জাদ হোসেন স্যার এর সাথে কথা বলে জানা যায় , ডেঙ্গু রোগী ম্যানেজ করতে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের এখনো এবং কোন রোগীরই তেমন জটিলতার সৃষ্টি হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে তৈরীকৃত ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন মেনেই সকল রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। সাম্প্রতিক সময়ে জনসাধারণের মনে ডেঙ্গু মানেই প্লেটলেট দিতে হবে এমন ধারনার সম্পর্কে তিনি বলেন, ডেঙ্গু হলেই বা প্লেটলেট কমে গেলেই প্লেটলেট দিতে হবে এমন নয়। গাইডলাইন মেনে যখন প্লেটলেট দিতে হবে তখন চিকিৎসক প্লেটলেট দিবেন। এই হাসপাতালের যতগুলো রোগী ম্যানেজ করা হয়েছে এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে একজনকে শুধু রক্ত দিতে হয়েছে। বাকী রোগীরা যে চিকিৎসা তাদের দেয়া হয়েছে তাতেই ভালো হয়েছেন।
হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশিরভাগ রোগীই গাজীপুর সদর হতে আগত। এছাড়া কালিয়াকৈর ও কাপাসিয়া থেকেও এসেছেন রোগীরা। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই সচেতন হতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফিচার রাইটারঃ
জামিল সিদ্দিকী (TA-03)
(session: 2015/16)
তথ্য সংগ্রহঃ
জান্নাতুন নাঈম ( TA-03) (2015/16)
নাসরিন ইসলাম ( TA-03) (2015/16)
নাহিদা হীরা (TA-02) (2014/15)
platform feature writer
Sumaiya Nargis
STAMC
Session: 2016/17