শিশুদের জ্বর জনিত খিঁচুনি নিয়ে আতংকিত নয়, প্রয়োজন মা- বাবার সচেতনতা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার  

ডা. মোঃ সুলতান মাহমুদ                                        মেডিকেল অফিসার, (৩৩ তম বিসিএস), ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর।

Febrile convulsion (জ্বরজনিত বাচ্চার খিঁচুনি): খুবই কমন এবং বাবা মায়েদের জন্য মারাত্মক চিন্তার রোগ হলো ফেবরাইল কনভালশন বা জ্বর জনিত বাচ্চার খিঁচুনি।

জ্বর জনিত খিঁচুনি কীঃ
এক কথায় জ্বরের জন্য যে খিঁচুনি হয় তাকেই জ্বর জনিত খিঁচুনি বা Febrile convulsion বলে। আমাদের ব্রেইনে কনভালশন ও এন্টি কনভালশন সিস্টেম দুটিই আছে। এর মধ্যে এন্টি কনভালশন সিস্টেম, কনভালশন সিস্টেমটিকে suppress করে রাখে। দ্রুত জ্বর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই balance টি imbalanced হয়ে যায়। অর্থাৎ কনভালশন সিস্টেমটি আপার হ্যানড নেয়, যার ফলে বাচ্চার খিঁচুনি হয়। সাধারণত ভাইরাল জ্বরে এই খিঁচুনি বেশি হয়। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনেও হতে পারে। জ্বর যেমন কোন রোগ নয়, তেমনি ফেবরাইল কনভালশনও কোন রোগ নয়, রোগের সিম্পটম মাত্র। জ্বর হলে যেমন কারণ খুঁজতে হয়, তেমনি ফেবরাইল কনভালশনেরও কারণ খুঁজতে হয়।

কী কারণে হয়ঃ
সবচেয়ে কমন হলো ভাইরাস জনিত জ্বর- সর্দি, কাশি। এছাড়াও টনসিলের ইনফেকশন, কানের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে ফেবরাইল কনভালশন কখনোই ব্রেনের ইনফেকশন নয়। তাই এটি একটি বিনাইন কন্ডিশন।

ফেবরাইল কনভালশনের বা জ্বর জনিত খিঁচুনির বৈশিষ্ট্য :

১. সাধারণত ৬ মাস – ৬ বছর বয়সে এই জ্বর জনিত খিঁচুনি হয়। সবচেয়ে বেশি হয় ১৮ মাসে।
২.যাদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি পজিটিভ অর্থাৎ বাবা অথবা মায়ের ছোটবেলায় এই ধরনের সমস্যা ছিল, তাদের বেশি হয়।
৩.জ্বর শুরু হওয়ার ১২ – ১৮ ঘন্টার মধ্যেই খিঁচুনি শুরু হয়।
৪. খিঁচুনি সাধারণত জেনারালাইজড অর্থাৎ বাচ্চা একসাথে চার হাত পা ছেড়ে দেয়, দু- চোখ উল্টিয়ে দেয় এবং মুখে ফেপড়া তুলে ফেলে।
৫.সাধারণত একবার জ্বর আসলে, একবার খিঁচুনি হয়। খুব রেয়ারলি ২ বার হতে পারে।

৬. খিঁচুনি সাধারণত ৫-১৫ মিনিটের বেশি কখনোই স্থায়ী হয় না।

৭. খিঁচুনির পর বাচ্চা ঘুমিয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠার পর বাচ্চা সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যায়। দেখে বোঝার উপায় নাই যে, বাচ্চা অসুস্থ।

৮.খিঁচুনির পরে যদি ব্রেইনের ই-ই-জি পরীক্ষা করা হয়, তাহলে রিপোর্ট নরমাল আসবে।

টেনশনের কারনঃ                                             

১. যদি বাচ্চার জ্বর জনিত খিঁচুনি ৬ মাসের আগে অথবা ৬ বছরের পরে হয়।

২.যদি প্রথম আক্রমণ ১২ মাসের মধ্যে হয়।

৩.যদি জ্বর ছাড়া খিঁচুনি হয়।

৪. খিঁচুনি যদি জেনারালাইজড না হয়। অর্থাৎ শরীরের কোন এক অংশে হয়, পুরো শরীরে না হয়।

৫. যদি খিঁচুনি ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে হয়।

৬. যদি খিঁচুনির পরে বাচ্চা নেতিয়ে পড়ে এবং সহজে সজাগ না হয়।

পরীক্ষাঃ
সাধারণত ফেবরাইল কনভালশন ডায়াগনোসিস করার জন্য কোন পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। একজন কোয়ালিফাইড ডাক্তার ইতিহাস শুনলেই রোগটা ধরে ফেলবেন। তবে ডাক্তার যদি সন্দেহ পোষণ করেন, তাহলে বাচ্চার পীঠ থেকে পানি নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও টেনশনের কারণ ১-৬ এর যে কোন একটা থাকলে পীঠ থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে।

চিকিৎসাঃ
ফেবরাইল কনভালশন একটি বিনাইন কন্ডিশন। সুতরাং, বাবা- মা কে কাউন্সিলিং করতে হবে।  খিঁচুনি একবার হলে পরবর্তীতে যতবার জ্বর আসবে ততবারই খিঁচুনি উঠতে পারে, ৬ বছর বয়স পর্যন্ত। সুতরাং খিঁচুনি উঠলে, ভয় না পেয়ে বাচ্চাকে বাম কাত করে নাক মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে। শরীরের কাপড় সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে(কুসুম কুসুম গরম পানি সম্ভব হলে) ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। হাল্কা করে ফ্যান দিয়ে বাতাস করে বাচ্চার ভেজা শরীর শুকাতে হবে। জ্বরের জন্য নাপা সিরাপ, ৮ কেজি ওজনের জন্য ১ চামচ করে ৬ ঘন্টা পর পর খাওাতে হবে। প্রথম বার হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার বাচ্চার পায়ু পথে খিঁচুনির ঔষধ দিবেন এবং কেন হলো তার কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা দিবেন।

পরবর্তীতে করণীয়ঃ
যেহেতু ৬ মাস থেকে ৬ বছর পর্যন্ত যতবারই জ্বর আসবে, ততবারই খিঁচুনি হতে পারে, সেহেতু বাচ্চার বয়স ৬ বছর না হওয়া পর্যন্ত নাপা সিরাপ ও খিঁচুনির জন্য ডায়াজিপাম (সেডিল ট্যাবলেট) বাসায় বাচ্চার নাগালের বাহিরে রাখতে হবে। পরবর্তীতে জ্বর আসলেই জ্বরের ঔষধ ও খিঁচুনির ঔষধ খিঁচুনি ওঠার আগেই খাওয়াতে হবে। তারপর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে জ্বরের কারণ খুঁজে বের করার জন্য।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

৫০ টিরও অধিক দেশে বিশ্ব অস্থিমজ্জা দাতা দিবস উদযাপন

Sat Sep 19 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার আজ শনিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব অস্থিমজ্জা দাতা দিবস বা ওয়ার্ল্ড বোন ম্যারো ডোনার ডে (ডাব্লিউএমডিডি)। এই দিনটি সারা বিশ্বে ৫০ টিরও অধিক দেশের মানুষের দ্বারা পালিত হয়ে আসছে যা গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই ক্যাম্পেইনটি মূলত ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের একটি ইউরোপীয় ইভেন্ট […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo