প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার
বাংলায় আশ্বিনের শেষ প্রায়, শীত যেন কড়া নাড়ছে বাংলায় দরজায়। এই ক্রান্তিকালে উত্তরে হাওয়া বাংলাদেশে এসে পড়বার আগেই বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা।বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, শীতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নতুন করে বাড়তে পারে। সংক্রমণের সম্ভাব্য ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বিষয়টি আছে আলোচনার শীর্ষে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই ঝুঁকি আসলে কতটা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সেপ্টেম্বরেই জানিয়েছিল, শীতের আগেই উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। সেই সাথে শীতকালে মহামারী আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে বলে সতর্কও করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশেও যে শীত মৌসুমে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, সেই শঙ্কার কথা জানিয়ে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধানের নির্দেশনার পর রোডম্যাপ ধরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর বলেন, “শীতপ্রধান দেশগুলোতে শীতের দিনে ঝুঁকি যতটা বাড়বে, উষ্ণমণ্ডলের দেশ বাংলাদেশে তেমনটা নাও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা যত কমবে, এসব ভাইরাসের স্থায়ীত্বকাল তত বাড়ে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। শীত আসবে বলে রিল্যাক্স হয়ে যাওয়া বা অনেক ভয় পেয়ে যাওয়ার কিছু নেই। আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।”
শীতকালে যদি করোনাভাইরাস অনেক বেশি ভয়ঙ্কর না হয়েও ওঠে, তারপরও বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে শীতকালে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণের কথা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য মতে, ঋতু পরিবর্তনের সময় পরিস্থিতি কতটা নাজুক হবে তা নির্ভর করছে মানুষের আচরণ, মৌসুমী রোগ এবং সরকারের ব্যবস্থাপনার ওপর। তবে ভ্যাকসিন বা কার্যকর কোনো ওষুধ যেহেতু এখনও তৈরি হয়নি, তাই গ্রীষ্মের মত শীতেও করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় একটিই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যুক্তরাজ্যের একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেস এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, শীতের সময় যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ হলে সেপ্টেম্বর থেকে আগামী জুন পর্যন্ত সময়ে কোভিড হাসপাতালগুলোতে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। করোনা মহামারীর প্রথম ধাক্কায় যুক্তরাজ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। গত জুলাই থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসছিল, কিন্তু গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার মৃত্যু বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের মত শীতপ্রধান অনেক দেশেই ঋতু পরিবর্তনের পর করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই ধারণা।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “শীতের সময় মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আসে, সে কারণেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। শীতে যেহেতু দরজা- জানালা বন্ধ থাকে, বদ্ধ ঘরে করোনা ভাইরাস আসলে বাড়ে। সেজন্য বলা হয়, আলো-বাতাস ঠিকমত চললে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম। কিন্তু বদ্ধ ঘরে এটা বাড়ে। এ কারণে একটা ভয় থেকেই যায়। তিনি আরও বলেন, চীনে এই সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত শীতে। শীতপ্রধান দেশে এর ভয়াবহতা বেশি দেখা গেছে। অনেক শীতপ্রধান দেশে এখন তা বাড়ছে। সব মিলিয়ে আসছে শীতে আবার এটা বাড়তে পারে।”
এদিকে ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে এই মহামারীর একদম শুরু থেকেই নিয়মিত হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। শীতের সময় ঠাণ্ডার কারণে যদি মানুষ হাত ধোয়ায় অবহেলা করে অথবা শারীরিক দূরত্বের নিয়ম মেনে না চলে তাতেও বিপদ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারে।