২০ জুন ২০২০, শনিবার
ডা. জাহিদুর রহমান
ভাইরোলজিস্ট
সহকারী অধ্যাপক,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
দুটো কারণে ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, সংক্রমণ চক্র ভাঙার জন্য আক্রান্তকে অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।
দ্বিতীয়ত, আক্রান্ত রোগির চিকিৎসা। যতদিন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হচ্ছে, যতদিন পৃথিবীর কমপক্ষে ৭০-৮০ ভাগ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হচ্ছে, ততদিন টেস্ট করে যেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড মেথড হিসেবে শুধুমাত্র আরটি-পিসিআর করা হচ্ছে। কিন্তু টেস্টের সংখ্যা এবং মান, সবদিক থেকেই সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যে কারণেই হোক, সংক্রমণ বৃদ্ধির সমানুপাতিক হারে আমরা পিসিআর টেস্ট সংখ্যা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছি। পিসিআর টেস্ট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলায় মলিকুলার ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। গত কয়েক মাসে স্বাস্থ্যখাতের যে ভগ্ন দশা জাতির সামনে উম্মোচিত হয়েছে, তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যারা কয়েক মাস সময় পেয়েও বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকা কয়েকশ পিসিআর মেশিনকেই সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকর করতে পারেনি, তারা নিজেরা এতগুলো পিসিআর ল্যাব স্থাপন করবে, এটি এক ধরণের দুরাশা।
পিসিআর টেস্টের ফল পেতে যদি ৭-১০ দিন সময় লাগে, তাহলে সেটি করা আর না করার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। আক্রান্ত হলেও রোগি এই সময়ের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায় অথবা সবার মধ্যে সংক্রমণ যা ঘটানোর, ঘটিয়ে ফেলে। যেখানে সব নিয়ম মেনে সংরক্ষণ করলেও নমুনার মধ্যে করোনাভাইরাসের আরএনএ ৩ দিনের বেশি কার্যকর থাকে না, সেখানে ৫-৭ দিন আগের সংগ্রহ করা নমুনা দিয়ে পিসিআর করে কার লাভ হচ্ছে? মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, স্বাস্থ্যসেবা দানকারীরা পন্ডশ্রম করছেন এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। তাই এখন পিসিআর টেস্টের সম্পূরক হিসেবে এন্টিজেন এবং এন্টিবডি নির্ভর rapid test চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রথম দিকে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ে এন্টিজেন এবং এন্টিবডি নির্ভর rapid test গুলোর প্রধান সমস্যা ছিল প্রচুর পরিমানে ফলস পজিটিভ এবং ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসা। তবে বর্তমানে কয়েকটি কোম্পানি যে এন্টিজেন এবং এন্টিবডি নির্ভর rapid test বাজারজাত করা শুরু করেছে সেগুলোর sensitivity এবং specificity ৮৫ থেকে ৯৫ শতাংশ। Sensitivity বেশি হওয়া মানে ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট কম হওয়া এবং specificity বেশি হওয়া মানে ফলস পজিটিভ রেজাল্ট কম হওয়া। সুতরাং আমরা যদি এই টেস্টগুলোকে পিসিআর এর সাথে সমন্বয় করে একটি সার্বজনীন প্রটোকল তৈরি করতে পারি, তাহলে রোগিদের যেমন ভোগান্তি কমবে, সরকারেরও অর্থ সাশ্রয় হবে। উদাহরণ হিসেবে লক্ষনসহ রোগিদের প্রথমে এন্টিজেন টেস্ট করা যায়, তাতে পজিটিভ হলে ট্রু পজিটিভ এবং নেগেটিভ হলে পিসিআর করে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার সনাক্তের ১৪দিন পর এন্টিবডি টেস্ট করা যায়। পজিটিভ হলে ট্রু পজিটিভ এবং নেগেটিভ হলে পিসিআর করা যায় অথবা আবার এক সপ্তাহ পর এন্টিবডি টেস্ট করা যায়।
কোন এলাকার সংক্রমণের হার নির্ণয় করা, লকডাউন শিথিল করা, প্লাজমা দান করা ইত্যাদি কয়েকটি ক্ষেত্রেও এন্টিবডি টেস্টের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন আছে। জনগণকে কয়েকশ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ করে দিলেই সেটি তাদের জন্য বিশাল এক স্বস্তির ব্যাপার হবে।
আমরা আমজনতা হিসেবে কেবল পরামর্শ দিতে পারি। তবে সবকিছু নির্ভর করে সঠিক পদে সঠিক ব্যক্তিকে পদায়নের উপর। যিনি নিজে বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা বুঝেন এবং অন্যকে বোঝাতেও পারেন। যিনি rapid test কে পিসিআর এর বিকল্প ভাববেন না, অন্যান্য দেশের মত সম্পূরক হিসেবে বিবেচনা করবেন।
(র্যাপিড টেস্ট বলতে গণস্বাস্থ্যের কিট বোঝানো হচ্ছে না। অনেক ধরনের র্যাপিড টেস্ট আছে।)