ডাক্তার হিসেবে একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার দ্বারপ্রান্তে ছিলাম আজ….
কাগজে কলমে আজকেই আমার মেডিসিনের প্রথম ডিউটি ছিল। সন্ধার আগে আগে ওয়ার্ডে যখন পেশেন্ট দেখছিলাম তখন হঠাৎ প্রচুর চিতকার চেঁচামিচি কানে আসলো। বাইরে বের হয়ে দেখি মেডিসিন ফোর ইউনিটের বারান্দায় আর সামনে প্রায় শ খানেক মানুষ জমে গেছে। ওখানে আজকে এডমিশন ছিল। এগুতে এগুতেই শুনলাম পাশের কেডিসি এলাকার একজন মারা গেছে। কিছু মানুষের প্রচন্ড উত্তেজনা দেখে বুঝলাম ঘটনা স্বাভাবিক না, ঘাপলা আছে। দূর থেকেই দেখলাম একজন মিডলেভেল ডাক্তার আর একজন ইন্টার্ন রোগী দেখছে আর আশেপাশে মানুষজন ঘিরে ধরে প্রচুর চিল্লাপাল্লা করছে। অবস্থা বেগতিক, নিজের পীঠ বাঁচানো ফরজ। তাই কাঁধ থেকে স্টেথো আর বিপি নামিয়ে পাশে একজনের কাছে দিলাম। তারপর ভীড় ঠেলে ডাক্তারদের কাছে গেলাম। সম্ভবত হার্ট ফেইলিউরের রোগী, ডায়াগনসিস সম্ভব ছিল না, অলরেডী মারা গেছে অনেকক্ষণ হল। রোগীর লোকদের অভিযোগ, রোগী উপরে আনতে আনতে মারা গেছে, নীচেই ট্রীটমেন্ট দেয়া হল না কেন। ওদিকে ইমারজেন্সীতে ডাক্তার নামাজ পড়ছিল, রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে অথবা মারা গেছে সেটা বুঝতে না পেরে ব্রাদার দ্রুত উপরে পাঠিয়ে
দিয়েছে। অবস্থা বুঝে শুনে রোগীর উত্তেজিত লোকদের কাউন্সেলিং করার চেষ্টা করলাম, আর চিতকার করে আশেপাশের মানুষদের সড়িয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ণ্ত্রনে আনার চেষ্টা করা হল। এরি মধ্যে দেখি কিছু যুবক বয়সীরা ফোনটোন করে আরো মানুষ আসতে বলছে। তারমানে কাহিনী আরো বাকী আছে। মোটামুটি বাইরের পার্ট চুকিয়ে ভেতরে গিয়েই ফোন করলাম বরিশাল পুলিশের ডেপুটী কমিশনারকে, আগে থেকেই তার সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল। দ্রুত ফোর্স পাঠারনোর আশ্বাস পেলাম।
কিছুক্ষন পরে শুনলাম রোগীর লোকজন নীচে নেমে সাথে সাথেই তান্ডব শুরু করে দিয়েছে, এক ব্রাদারকে ধরে মারধোর করেছে। সৌভাজ্ঞক্রমে ডাক্তার অক্ষত রয়েছেন। পুলিশ এসে দুইজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই হল পরিস্থিতি।
আজকে হয়তো আমাদের কারো কোন কিছু হয় নি, কিন্তু কালকে??? কেউ মারা গেলে বা পান থেকে চুন খসলেই যেভাবে মানুষজন চড়াও হয় তাতে সত্যি খুব অসহায় লাগে। মানুষ ভুলে যায় ডাক্তারও একজন মানুষ।
ডাক্তারী জীবন শুরু করার শুরুতেই যেসব ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি তাতে অসহায় লাগাটাই স্বাভাবিক
পাঠিয়েছেন : ডা. মোঃ আসিফ উদ্দিন খান
when did this happen?