প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০
রাস্তায় জন্মদিনের কেক হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন চিকিৎসক সাবরিনা শাহরিন। সময় ব্যবধানে কেকটি কাটলেন তিনি। সামনেই একটা গাড়ির ভেতরে একমাত্র শিশু সন্তান নিস্বর্গ। কেক কাটার সময় চিকিৎসক মায়ের চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছিল, গাড়ির গ্লাসের ওপাশে সন্তানের চোখেও ছিলো পানি। জড়িয়ে ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসক মা তার সন্তানকে ! বুধবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল লা ভিঞ্চির সামনের রাস্তায় দেখা যায় এই অভূতপূর্ব দৃশ্য।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক সাবরিনা শাহরিন। হাসপাতালটিতে সম্প্রতি চালু হওয়া করোনা ইউনিটে তিনি ১৬ই মে, থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এজন্য নিয়ম মেনে বাসায় যেতে পারছেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব পালন শেষে লা ভিঞ্চি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে তাকে।
গত বুধবার, তার জন্মদিন ছিলো। ১১ বছরের নিস্বর্গ বাসা থেকেই মায়ের জন্য কেক তৈরি করে এনেছিল ওই হোটেলে। কিন্তু একমাত্র সন্তানের আহবানে চিকিৎসক মা হোটেল কক্ষ থেকে নিচে আসলেও তার মুখে মাস্ক। গাড়ির জানালার ফাঁকা দিয়ে তিনি কেকটি নিলেও অজানা আতঙ্কে আদরের সন্তানকে কোলে তুলে নিতে পারেননি। দীর্ঘদিন পর মায়ের দেখা পেলেও সেই একই আতঙ্কে সন্তানও মায়ের মুখে কেক তুলে দিতে পারেনি। গাড়ির গ্লাস মা আর ছেলের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে।
নিস্বর্গের বাবা তৌহিদ মুন্সীও একজন চিকিৎসক। তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্টার। বাবার সাথেই মায়ের জন্মদিনের কেক নিয়ে এসেছিল সন্তান।
চিকিৎসক তৌহিদ মুন্সী বলেন, করোনা ইউনিটে দায়িত্বের কারণে নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রী বাসায় ফিরতে পারছে না। তিনি নিজেও সারাদিন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরে সন্তানের কাছে যেতে ভয় পান। তাই ছেলেটা অনেকটা একা হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সন্তান তার মায়ের জন্মদিনটার কথা ভুলেনি। তাই বুধবার হাসপাতালের দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরতেই মায়ের কাছে কেক নিয়ে যাওয়ার বায়না ধরে ছেলে। কোনো বেকারি খোলা না পেয়ে বাবা-ছেলে বাসাতেই লেগে যান কেক তৈরির কাজে। শেষ পর্যন্ত কেকের মতো কিছু একটা তৈরি করে ইফতারের পর ছেলেকে নিয়ে চলে যান স্ত্রীর হোটেলের সামনে। স্ত্রী সেই কেক কাটলেও পরিস্থিতির কারণে কারো মুখে তুলে দিতে পারেননি।
চিকিৎসক তৌহিদ মুন্সী আরো বলেন, মা ছাড়াই নিস্বর্গের এবার ঈদ কাটাতে হবে। হয়তো ওর মন খারাপ হবে। কিন্তু বড় হয়ে ও যখন বুঝবে এক মহামারীতে তার মা দেশের স্বার্থে, মানুষের সেবায় অজানা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় মা তাকে স্নেহ দিতে পারেনি, তখন হয়তো ছেলে মাকে নিয়ে গর্বই করবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক / গৌরী চন্দ