প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ জুলাই, ২০২১, শনিবার
লেখাঃ ডা. দেবব্রত ঘোষ সামির
যুগ্ম সচিব, বিএমএ মুন্সীগঞ্জ
গত এক সপ্তাহের মধ্যে আমার চেম্বারে দেখা ১৭ জন কোভিড -১৯ বা সাসপেক্টেড কোভিড রোগীদের মধ্যে (প্রায় রোগীরই rt-PCR বা Rapid Antigen টেস্ট করাতে অনীহা)
১.মাত্র দুইজন রোগীর জ্বর সাথে হালকা গলা ব্যথা বা কাশি ছিল।
২.বাকিদের মধ্যে সবারই ধারণা ছিল এটা সাধারণ সর্দি-জ্বর বা হালকা বৃষ্টিতে ভেজা জ্বর।
৩.জ্বর ৫-৭ দিন আগে ১-২ দিন থেকে ভালো হয়ে গেছে।
৪.মাথা ব্যথা, গা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি ঝরে (স্বাভাবিক ভাইরাল ফিভারের লক্ষণ)।
৫.খাবারে প্রচন্ড অরুচি(প্রায় সবারই, ঘ্রাণ পাচ্ছে না(২ জন)।
৬.শরীর প্রচন্ড দুর্বল এদের মধ্যে একজনকে পল্লী চিকিৎসক শক্তির স্যালাইন দিয়েছেন যার ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে।
৭.এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৮-৯৪%। ৩-৪ জনের স্যাচুরেশন ৯৫-৯৭%।
৮.মজার ব্যাপার কোন রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে অনীহা প্রকাশ করে যদি বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয় এই ভয়ে বা অনেকে এখনো মনে করে তারা আক্রান্ত হয়নি বলে!!!
৯.শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসলেও স্বীকার করছে না শ্বাসকষ্ট হচ্ছে (সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে)।
১০.আশার ব্যাপার হলো পারিবারিক সদস্যরা করোনাকে এখন আতঙ্ক হিসাবে নিচ্ছে না। রোগীদেরকে যথাযথ সেবা-যত্ন বাড়িতেই করছে যার ফলে আক্রান্ত রোগীরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করছে।
১১.আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই CRP 24-96, CBC- Total count বেশি, Chest X-ray – Bilateral or Unilateral Pneumonic Consolidation or Bilateral Basal Pulmonary Infection(Ground glass appearance)।
১২.কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো- যারা কোভিড সিম্পটম নিয়ে আসছেন তারা অধিকাংশই তথ্য গোপন করছেন। যার ফলে তার পাশের সুস্থ মানুষটি আক্রান্ত হচ্ছে বা তাকে দেখতে আসা আত্মীয় বা পাড়া প্রতিবেশীরা আক্রান্তের শিকার হচ্ছে। ফলে দ্রুত কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
১৩.বেসরকারিভাবে যেগুলো ডায়াগনোসিস হচ্ছে তা কিন্তু সরকারি হিসাবে আসছে না। ফলে সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত বা সাসপেক্টেড রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু হার অনেক বেশি।
এখন সমস্যা হলো-উপজেলা পর্যায়ে আমাদের মতো প্রাইভেট চিকিৎসক যারা কোভিড সাসপেক্টড বা কোভিড রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি তাদের D-Dimer, Iron Ferittin, HR-Chest CT ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরীক্ষা যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল করানোর সুযোগ নেই। যেখানে আক্রান্ত রোগীরা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে rt-PCR বা Rapid Antigen পরীক্ষা করাতেই অনীহা প্রকাশ করছে সেখানে ঢাকা গিয়ে এইসব পরীক্ষা তো কল্পনাতীত।
এই অবস্থায় সাধারণ চিকিৎসক হিসাবে সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রতি প্রশ্ন হলো – Rapid Antigen Test (যেহেতু এটি একটি ডিভাইস টেস্ট) শুধু সরকারি হাসপাতালে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে করানোর অনুমতি দেয়া যায় কিনা??(যেমনটি ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সরকারি রেট নির্ধারিত ছিল।)
১. এতে কোভিড রোগী সনাক্ত হার বাড়বে
২. রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবে (সাসপেক্টেড হার কমে যাবে)
৩. মৃত্যু হার বা মৃত্যু ঝুঁকি কমে যাবে
৪. কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কমে আসবে।
৫. এদের মধ্যে যাদের লক্ষণ আছে কিন্তু টেস্ট নেগেটিভ আসছে শুধু তারা rt-PCR বা HR Chest CT করাবেন -এতে চিকিৎসা ব্যয় অনেকটাই কমে আসবে।
বিঃদ্রঃ এটা সম্পূর্ণভাবে আমার ব্যক্তিগত মতামত।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, মাস্ক পরুন।
করোনা অতিমারি থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।।