আজ বুধবার বিশ্ব সিওপিডি দিবস । এ রোগের বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছরের মত সারা দেশে এ দিবস পালন করা হচ্ছে।
ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ( সিওপিডি) – ফুসফুসের একটা অসুখ যাতে নিঃশ্বাস ছাড়তে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।সিওপিডি-র ফলে কাশি দেখা দেয়, সেই সঙ্গে কফ, নিঃশ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দ, দম ফুরিয়ে যাওয়া, বুক হালকা লাগা, ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। ধূমপানের সঙ্গে এই অসুখটি যুক্ত। যাঁদের এটা হয়, তাঁদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোঁয়া, ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদেরও সিওপিডি হয়।
দেশে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের মানুষের ২১ শতাংশই ভুগছে সিওপিডিতে। যাদের ৬২ শতাংশই ধূমপায়ী। বর্তমানে এ রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ। সিওপিডিতে রোগে বছরে মারা যায় ৬৩ হাজার জন।
নিঃশ্বাস নিলে বাতাস আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে ছোট ছোট নলী ব্রঙ্কিওল্স-এ যায়। এই নলীগুলির শেষে আবার নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলি অ্যালভিউহ্লাই (alveoli)। এই থলিগুলি থেকেই আমাদের রক্ত প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহ করে। সিওপিডি-র ফলে এই থলিগুলিতে কম বাতাস যায়। কেন কম বাতাস যায়।বাতাস যাবার নলীগুলি স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া থলিগুলির কিছু কিছু দেয়াল নষ্ট হয়ে যাওয়ানলীগুলির দেয়াল মোটা হয়ে যাওয়ায় বাতাস যাবার পথ ছোট হয়।সিওপিডি শুরু হয় ধীরে ধীরে। কিন্তু বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছয় যে, হাঁটাচলা করাও কঠিন হয়ে ওঠে। এটা মধ্য বয়সে বা বৃদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে। এর কোনোও ওষুধ নেই। ফুসফুসের ক্ষতি একবার হয়ে গেলে সেটাকে সারানো সম্ভব নয়। চিকিৎসা হল উপসর্গকে কিছুটা প্রশমিত রাখা এবং অসুখের গতিটাকে একটু হ্রাস করা।
গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক খাবারের ৫ ভাগ ফল ও সবুজ পাতাযুক্ত সবজি খেলে এ ধরনের ঝুঁকি কমে। এ জন্য আপেল ও নাশপাতির মতো ফল খাওয়া যেতে পারে। সিওপিডি তৈরিতে অক্সিডেটিভ টিস্যুর ওপর চাপ ও প্রদাহ যুক্ত থাকে। ধূমপান এ প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে। ফল ও সবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওই প্রভাবকে কাটাতে পারে বলে গবেষকেরা মনে করছেন।
গবেষকেরা বলেন, যাঁরা দৈনিক খাবারের পাঁচ ভাগ ফল ও সবজি খান, তাঁরা যথাক্রমে ৪০ ও ৩৪ শতাংশ সিওপিডি তৈরির কম ঝুঁকিতে থাকেন। এর সঙ্গে প্রতিবার ফল ও সবজি খাওয়া বাড়ানোর সঙ্গে পুরোনো ধূমপায়ীদের ৪ শতাংশ ও বর্তমান ধূমপায়ীদের ৮ শতাংশ ঝুঁকি কমে।নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন তৈরীর আধার ফুসফুসকে ভালোবাসুন।
লেখকঃ
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
বক্ষব্যাধি বিষয়ক কলাম লেখক,প্রথম আলো।