প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৩ মে ২০২০, রবিবার
বাংলাদেশের অনেক মানুষ সিঙ্গাপুরে কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার হিসাবে কাজ করেন। এরা সাধারনত ডর্মেটরীতে থাকেন। ৩০-৫০ জন এক রুমে। এদের মাঝে করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায়, হঠাৎ করেই সিঙ্গাপুরের করোনার সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাদের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করে চিকিৎসা দেয়ার জন্য আমি ভলান্টিয়ার হিসাবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এখন কাজ করছি।
আমার ওখানে ভলান্টিয়ারিং করার আর একটা কারণ হচ্ছে, এরা যেন মনে সাহস পায়। মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, সে ব্যপারে কাউন্সেলিং করা। আর আপনজন দেখলে তারা অনেক স্বাভাবিকভাবে নিজেদের সমস্যা বা প্রয়োজনের কথা বলতে পারবে।
যেমন, একজন রোজা ছিল, নামাজ পড়ার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিল না। তাকে সেটা দেখিয়ে দিলাম।
আর একজন সাথে করে ভাত-মাছ নিয়ে আসছিল। কিন্তু সেটা এখানে এসে খুলে খাবার সাহস পাচ্ছিল না। তাকে সেটা খাবার সাহস দিলাম। (এখানে ৩ বেলা খাবার দেয়, কিন্তু অনেক বাঙালী জিহ্বাই সেটা নিতে পারে না।)
আর একজন বলল, জ্বরের কারনে কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। তাই সে সারাদিন কিছুই খায় নি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এমন কি কিছু আছে যেটা তার খেতে ইচ্ছে করছে? সে বলল, বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে করছে!
শুনে আমি হেসে দিলাম, সাথে সে-ও। বললাম যে, বাংলাদেশের নান্না/হাজী বিরিয়ানি এখানে আমি আপনাকে দিতে পারব না। তবে ফ্রোজেন বিরিয়ানী পাওয়া যায়। ওভেনে ৫ মিনিট রান্না করে খেতে হবে। পাশের দোকান থেকে তাকে সেটা এনে দিলাম।
প্রতিদিন যেসব রোগী দেখি ইমার্জেন্সিতে, তারা হয় ভর্তি হয় অথবা ছুটি নিয়ে চলে যায়। আমি ট্রাক করি তাদের করোনা রেজাল্ট। প্রায় ৮০% পজেটিভ।
আজ হঠাৎ করে ৫০-৬০ জন রোগী আসল একই ডর্মেটরী থেকে। সবাই পজেটিভ। কি ভয়ঙ্কর!
মোটামুটি করোনা-র সমুদ্রে ডুবে আছি, আমার দেশের মানুষদের নিয়ে। আমি আমার জন্য ভয় পাচ্ছি না। আমি পিপিই পড়ে আছি, আমি বেটার অফ। কিন্তু যে মানুষগুলি এখানে আসছে, এরা সবাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে আছে। ২০ বছরের তরুণ থেকে ৫২ বছরের প্রবীন। সবাই আছে।
কেউ এসে নিজেকে মাত্র গুছাচ্ছে। কারো চোখে হয়ত দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফেরার স্বপ্ন।
সবাই আমরা দোয়া করি, এদের স্বপ্ন দেখার দিন যেন শেষ না হয়।
ডা. ভাস্কর দেবনাথ