দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগে সময়ের সাথে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আসুন জেনে নেই সিজারিয়ান ডেলিভারি বা সিজার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
● কখন সিজার প্রয়োজন
ক) যেসব ক্ষেত্রে সিজার ব্যতীত আর কোনো উপায় নেই:
১বাচ্চা প্রসবের রাস্তা আনুপাতিকভাবে ছোট
২.মায়ের প্রেসার অর্থাৎ রক্তচাপ অনেক বেশি, যা কোন ঔষধে কমে না, সাথে খিঁচুনী বা একলামশিয়া
৩.পেটের ভিতর বাচ্চার শ্বাসকষ্ট
৪.ডেলিভারির সময় সবার আগে বাচ্চার নাড়ী দেখা যাওয়া
৫.গর্ভফুল জরায়ুর মুখে থাকা(গ্রেড-৩,৪)
৬.বাচ্চা ডেলিভারীর পূর্বেই গর্ভফুল জরায়ুর গা থেকে ছুটে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়া
৭.বাচ্চা জরায়ুতে আড়াআড়িভাবে বা উল্টে থাকা
৮.ডেলিভারির সময় জরায়ু ফেটে যাওয়া
৯.বাচ্চা প্রসবের রাস্তায় বড় কোন টিউমার কিংবা মাংসের টুকরা থাকা
১০.আগে VVF (vesico-vaginal fistula) এর অপারেশন হওয়া
খ) যেসব ক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনা করে সিজার করলে সবচেয়ে ভাল হয়:
১.জরায়ুতে একসাথে একাধিক বাচ্চা থাকা
২.বাচ্চার মাথা বড় হওয়া
৩.আগের বাচ্চা সিজারে হওয়া
৪.ডেলিভারির ব্যথা শুরু হওয়ার আগে যে কোন পরিমাণ রক্তক্ষরণ শুরু হওয়া
৫.মা এর নিজ থেকে চাওয়া
৬.সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ঔষধেও ডেলিভারির ব্যাথা না ওঠা
৭. বেশী বয়সে প্রথম গর্ভবতী হওয়া
৮.বাচ্চা জরায়ুতে যে পানিতে থাকে তা কমে যাওয়া
৯.ডেলিভারীর সম্ভাব্য তারিখ থেকে বেশি দেরি করে আসা
● সিজারের হার বাড়ার কারণ:
১. আলট্রাসনোগ্রাফীর প্রচলনের ফলে অনেক জটিলতাই এখন ধরা পড়ে, যা আগে জানার কোনো উপায় ছিল না। যেমন- জরায়ুতে কয়টা বাচ্চা, গর্ভফুল কোথায় আছে, বাচ্চার মাথা (BPD) বড় কিনা, বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে কিনা, পেটের মধ্যে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা, বাচ্চা যে পানিতে আছে তার পরিমাণটা ঠিক আছে কি না ইত্যাদি। এসবের কোনটায় হেরফের দেখলে ডাক্তারকে নীতিগত ভাবেই সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
২. হাইপারটেনশন নির্ণয় এখন কোনো ব্যাপারই না, যা হয়তো আগের মানুষেরা জানতো না আর আমলেও নিতো না। কিন্তু একজন ডাক্তারের এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
৩.পড়াশুনা আর ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে এখন অনেক মেয়েরই বাচ্চা নিতে দেরি হয়ে যায়।সিজারের হার বাড়ার এটাও একটা কারণ।
৪. কিছু কিছু অসাবধান রোগী আসেন ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখের অনেক পরে, যাদের জন্য মেডিকেল ট্রায়াল মানে ঔষধ দিয়ে প্রসব ব্যথা উঠানোর জন্য অপেক্ষা করা যায় না। আর সময় পার করে আসার কারণে বাচ্চা যে পানিতে থাকে, তাও কমে যায়। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ডাক্তারকে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
৫. বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা বাড়ার কারণে চিকিৎসায় ovulation inducing drug বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে অনেক মায়েরই এখন একসাথে একাধিক সন্তান গর্ভে আসছে। ফলশ্রুতিতে সিজারের হার বাড়ছে।
৬.আগের মায়েদের মাঝে সচেতনতা কম ছিল তাই ঘন ঘন গর্ভধারণ করতো আর প্রসবের সময় সন্তানের ঝুঁকি নিয়ে এত মাথা ঘামাতো না কিন্তু এখনকার মায়েরা অনেক সচেতন। প্রসবকালীন জটিলতা এড়াতে স্বেচ্ছায়ই অনেকে সিজার করাতে ডাক্তারকে অনুরোধ করেন।
৭.সর্বোপরি, টারশিয়ারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ডেলিভারির বেশিরভাগ রোগীগুলো আসেই বাসায় কিংবা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করে। সুতরাং এই লেভেলে আসার পর ডাক্তারদের হাতে সিজার ছাড়া বেশিরভাগ সময়ই কোন উপায় থাকে না।
৮.একটি বাচ্চা সিজারে হওয়ার পর পরবর্তী বাচ্চার ক্ষেত্রে সিজার করাই যেহেতু বেশি নিরাপদ, সেহেতু সিজার নিজেই সিজারের হার বৃদ্ধির একটি কারণ।
ডা. সায়েদা ইসলাম
সেশন ২০০৫-০৬
সিলেট মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
সেশন ২০১৬-১৭
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর