১
বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য-খাতে অভূত-পূর্ব সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।গতকালই তো দেখলাম নিউজটা।স্বাস্থ্য-খাতে অসামান্য অবদানের জন্য বছর দুই আগে সরকার সাউথ-সাউথ পুরস্কারও পেয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতের যদি এহেন উন্নতি হয়েই থাকে তবে এই সাফল্যের ভাগীদার সরকারের সাথে সাথে এদেশের আপামর চিকিৎসকরাও।অথচ এই চিকিৎসকদেরকেই যৎপরোনাস্তি ভুল চিকিৎসার অপবাদ শুনতে হয়।
২
গতকাল সিলেট মেডিক্যালে একদিনে বাইশ মৃত্যু নিয়ে মিডিয়ার তোলপাড় দেখে বিস্মিত হয়েছি।মৃত্যু আর অনাকাংখিত শব্দের মধ্যে কোনো ইতর-বিশেষ নেই।কেউ ই মৃত্যু চায়না আবার কেউ ই এড়াতে পারবে না।এটাই স্বাভাবিক।এই সস্তা আবেগী কথার কোনো দাম নেই প্রফেশনালিজমে।চিকিৎসা দিতে একজন চিকিৎসক কতটা দক্ষ এবং চিকিৎসার কোনো অংশে তার কোনো গাফিলতি আছে কিনা সেটার সার্বক্ষনিক মনিটরিং এবং সার্ভিলেন্স থাকা উচিৎ।এবং এটা একজন চিকিৎসকের পেশাগত উৎকর্ষতার জন্যই দরকার।এবং অর্থ খরচকরে সার্ভিস না পাওয়ার ব্যাপারটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কিন্তু মানুষের সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে যদি মিডিয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর খবর চাউর করে বেড়ান তাহলে মানুষ চিকিৎসক ছেড়ে ফকির দরবেশ কবিরাজের দিকেই ঝুঁকবে।মোড়ে মোড়ে সহকারী অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপক ফকির-দরবেশদের সাইনবোর্ড ঝুলবে অচিরেই।
আর চিকিৎসকের সাথে রোগীর মনস্তাত্ত্বিক দূ্রত্ব বাড়বে বৈ কমবে না।
৩
গতকালের লিড-নিউজটা তাচ্ছিল্য করার জন্য বলছি না,তবে নিউজের কোথাও কোনো স্ট্যাটিস্টিকস ছিল না।
সিলেট মেডিক্যালের শয্যা সংখ্যা কত?
পনেরশো শয্যার একটি হাসপাতালে ২২ সংখ্যাটি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে কতটা অসামঞ্জস্য পূূর্ন?
প্রতিদিন এখানে কত জন অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন?
বাইশ জনের মৃত্যু শতকরা হিসেবে কত?
ঢাকা কিংবা পেরিফেরাল অন্যান্য টারশিয়ারী হাসপাতালের তুলনায় কত কম বা কত বেশী?
কিংবা বিদেশের নামকরা হাসপাতালের তুলনায় এটা কতটা অস্বাভাবিকভাবে বেশী?
নিউজটিতে এর তুলনামূলক পরিসংখ্যান থাকলে বোঝা যেত যে এটি একটি অনুমান নির্ভর নিউজ নয়!
৪
চিকিৎসকের গাফিলতির সাফাই গাইছি না,তবে নিউজটিতে প্রফেশনালিজমের চেয়ে বেশী ছিল স্বজনহারা মানুষের দুর্বিনীত আবেগ।এ নিউজে ভালোর চেয়ে মন্দ ই বেশী হবে।ভুল চিকিৎসা বলে চিকিৎসকদের নিয়ে যে ব্লেম-গেম খেলা হচ্ছে সেটাতে পস্তাতে হবে সবাইকেই!
লিখেছেন – ডাঃ সেলিম শাহেদ।