রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর আক্রমণে জনজীবন বিপর্যস্ত। এদৃশ্যে যেন ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতাল-মুখী স্রোত থামছেই না। আর এই সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এই ভয়াবহ ও চ্যালাঞ্জিং সময়ে ডাক্তার এবং নার্সরা এখন স্বাভাবিকের তুলনায় বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন, যার ব্যতিক্রম নয় উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে বলতে গেলে সর্বনিম্ন খরচ এখন এই হাসপাতালে। তাইতো এখানে কেউ আসছেন ইতোপূর্বে নির্ণীত রোগী হিসেবে ভর্তি হতে আবার কেউবা আসছেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে। হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথেষ্ট আন্তরিক শুরু থেকেই। তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি.চৌধুরী স্যারের পরামর্শ মতো প্রতিদিন নিজে সকল ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন এবং আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করার পাশাপাশি সকল বেডের চিকিৎসা, খাবার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ মশারির ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডাঃ আদনান আহমেদ বলেন- প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন করে রোগী আসছেন তাঁদের বিভাগে, যাদের অধিকাংশই ভর্তি হচ্ছেন এবং অনেকেই জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে দ্বায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুস শুকুর বলেন- এখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে তৈরীকৃত ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন মেনেই সকল রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সাধারণত একদিনে যত সংখ্যক রোগী দেখতেন, এখন তাদের কয়েকগুণ বেশী রোগী দেখতে হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে উক্ত মেডিকেলে প্রতিদিন প্রায় ২৩০ জনের মতো রোগী ভর্তি ছিলেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার আশংকা নিয়ে তিনি নিজেও উদ্বিগ্ন।
ইতোমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে বেশ কিছু মেডিকেল স্টুডেন্ট, ইন্টার্ন ও ডাক্তার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। শঙ্কাজনক বার্তা হল এই যে- হাসপাতালের শিশু বিভাগের অবস্থা ছিল ভীষণ করুণ। উক্ত বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ বাপী জানান- কিছুদিন আগেই মাত্র ২মাস বয়সের এক বাচ্চা ডেঙ্গু পজেটিভ নিয়ে ভর্তি ছিল। কিন্তু তাঁদের বিভাগের নিবিড় পরিচর্যায় অবশেষে সুস্থ হয়ে যাওয়ায় আজকে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এই হাসপাতালে ভর্তিকৃত সকল রোগীর অবস্থাই সন্তোষজনক।
উত্তরা মহিলা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগ সরেজমিনে ঘুরে এরকমই দৃশ্যের সাক্ষী হলো টিম প্ল্যাটফর্ম। তবে সবচেয়ে আশার বাণী হলোঃ এই হাসপাতাল থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা শুন্য। এই হাসপাতালে ডেঙ্গু এন্টিবডি, NS1 ও CBC সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র ১৪০০টাকায় সহ অন্যান্য সকল ধরনের টেস্ট করা হয়। এতকিছুর পরেও বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অটুট রাখার জন্য যে কোনো নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছেন উত্তরা মহিলা মেডিকেলের সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীগণ। পূর্বের ন্যায় এবারো হাসপাতালে জরুরী বিভাগ ও ইনডোর চিকিৎসা ঈদের ছুটিতেও কোন মুলতবি হয়নি।