লেখকঃ ডাঃ মারুফুর রহমান অপু
হতাশার কথা দিয়ে শুরু করি। এবারের ৩৩তম বিসিএস এ নিয়োগ প্রাপ্ত ডাক্তারদের অনেককেই দেখলাম “মুরাদ টাকলা”! শুধু ৩৩তম বিসিএস নয়, পূর্বতন বিসিএস অথবা নন বিসিএস ডাক্তার এবং মেডিকেল স্টুডেন্ট অনেককেই টাকলামি করতে দেখেছি এই ফেসবুকে। ডাক্তারির মত একটি প্রতিযোগীতামূলক সম্মানীয় পেশায় মেধাবীরাই আসে বলে বিশ্বাস করি, আর বিসিএস ক্যাডার মানে বাংলাদেশের “প্রথম শ্রেনী”র সরকারি কর্মকর্তা, এই কথাটি কতটা অর্থবহ সেটাও বোঝা উচিত। এরকম অবস্থায় যদি কেউ লেখে, “i want good posting, dhaka posting, how tell me, who contac” অথবা যদি লেখে “amer pet betha, ki osud kabo bolen” তাহলে কেমন লাগে বলুন। আমাদের সম্মানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় চিন্তা করুন।
৫টা বছর ইংরেজী মাধ্যমে মেডিকেলের মত একটি কঠিন কোর্স আমরা শেষ করে এসেছি কিংবা করব, তারপরেও যদি আমাদের ভাষার অবস্থা এমন হয় তাহলে বুঝতে হবে আমরা এর যোগ্য নই। সাধারন ইংরেজীর কথা বাদ দিলাম, মেডিকেল টার্ম লেখতেও অনেকে অনেক ভুল করে দেখেছি। এসব করে কিভাবে আমরা ডাক্তারি পাশ করে বের হয়ে আসছি?!
ভাষার কথা বাদ দিন, ইংরেজীতে একটা এপ্লিকেশন লিখতে বললে, “এই দেখি তুই কি লিখছিস, এই লাইনের পর কি হবে” ইত্যাদি কথা তো শোনাই যায়, এমনি বাংলাতেও দরখাস্ত লেখতে গেলে হিমশিম খেতে হয়।
কম্পিঊটার চালাবে কম্পিঊটার ইঞ্জিনিয়াররা, আমারতো শুধু মোবাইলে একটু ফেসবুক থাকলে হবে। এরকম ধারনা আছে অনেক অনেক ডাক্তারের। ফেসবুক একাউন্ট আছে, অথচ ইমেইল আর জিমেইল এর পার্থক্য কি সেটাই অনেকে জানেন না। বুড়ো প্রফেসরদের কথা বাদ দেই। আমরা যারা টেকনোলজির বিবর্তনের যুগে জন্মেছি তাদের কি এমন ধারনা থাকা মানায়?
বহির্বিশ্বে আমরা তাকাই না, ভুল বল্ললাম তাকাই শুধু কে কত টাকা বেতন পায়, আর কোথায় ফুর্তি করে সেদিকে তাকাই। সেসব দেশের এডুকেশন সিস্টেম, প্রফেশনালিজম কে আমরা ফলো করি না। করলে দেখতে পেতাম সেখানে টেকনলজির ব্যাবহার সব পেশায় কি চমতকারভাবে বিদ্যমান। প্রেসক্রিপশন লেখা, ভিডিও কনফারেন্স, মেইল ডিসকাশন, অনলাইন লেকচার, টেলিমেডিসিন ইত্যাদি কত কিছু আছে। সব বাদ দিলেও স্বাভাবিক যোগাযোগ, দৈনন্দিন কাজ কর্ম ঠিকভাবে করার জন্যেওতো নূন্যতম টেকনলজি জানা দরকার।
আসুন প্রফেশনালিজম এর কথায়। একজন স্মার্ট ডাক্তারের কথা চিন্তা করুন। পোশাকে আশাকে প্রফেশনাল লুক, সাদা ধবধবে একটি সুন্দর এপ্রোন, বুকের কাছে নেমপ্লেট, কোন কনফারেন্সে চমৎকার বাচনভঙ্গিতে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন। আরেকজনের কথা চিন্তা করুন ঘুম থেকে উঠে যে জামা পরে ঘুমিয়েছিল সেটা পরেই, কালির দাগ লাগা একটা ময়লা এপ্রোন পরে ডিউটিতে চলে এসেছে… এই দুজনের মধ্যে কাকে রোগীর লোকেরা “ব্রাদার, এই যে, ভাতিজা,” ইত্যাদি বলে সম্বোধন করবে আর কাকে ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন করবে বলুন তো? কাকে অধস্তনরা মান্য করবে আর কাকে বন্ধুবর ভেবে ঢিলামি করবে বলুন তো। প্রেজেন্টেশন তো দূরে থাকুক ভরা মজলিসে নিজের সম্পর্কে দুটো কথা বলতে দিলেও দেখা যাবে একজন আরেকজন কে ঠেলছে।
সুতরাং একজন ডাক্তারের সম্মান আমরা নিজেরাই কিভাবে নস্ট করছি সেটা স্পস্ট। এগুলো সম্পর্কে আমাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। নিজের সম্মান রক্ষায় নিজেকে আগে সম্মান পাবার যোগ্য করতে হবে। স্টূডেন্ট থাকা অবস্থায় শুধু গাইড আর টেক্সট বই মুখস্ত করে পাশ করে আসলে হবে না। সৃজনশীলতার চর্চা করতে হবে। দেশী বিদেশি অনলাইন অফলাইন হেলথ ম্যাগাজিন পড়তে হবে, লিখতে হবে। অনলাইন অফলাইন বিভিন্ন কোর্স করে রাখতে হবে (যেমন IELTS, Research Methodology, Technical Wriiting, Online course: Coursera.com ইত্যাদি)। গণসংযোগ ভীতি দূর করতে হবে বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশ নিয়ে, গ্রুপে কাজ করে। টেকনলজিকে আয়ত্ব করতে হবে নিজের পড়াশুনা, ক্যারিয়ার গঠনে। এগুলো করে দেখি আমরা, এরপর দেখুন মানুষ আমাদের সম্মান দেয় কিনা, নন মেট্রিক সাংবাদিক আমাদের সামনে এসে দাড়াতে পারে কিনা।
পোষাক পরিচ্ছদের মাধ্যমে চিকিৎসকরা কিভাবে নিজেদের মর্যাদাহানী করছে সেটার কথা বলা হলো। কিন্তু অনৈতিক কাজের মাধ্যমেও যে চিকিৎসকরা নিজেদের মর্যাদা নষ্ট করছে সে বিষয়টা আলোকপাত করলে ভালো হতো।
@কামরুল ভাই সব কথা এক জায়গায় বলে ফেললে তো হবে না, ওই টপিকেও আগামী লেখা প্রকাশিত হবে আশা করছি।
how to be good at Technical Wriiting?