বর্তমান বিশ্বে “স্তন ক্যান্সার” অন্যতম আলোচিত বিষয়ের একটি। অক্টোবরকে বলা হয়ে থাকে স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস। এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাপী বিভিন্ন দেশে এই মাসকে “Pink October” হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়, যেখানে Pink ribbon কে স্তন ক্যান্সার সচেতনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনে ৯ জন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সেই সাথে দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৪০০০ এর মত নতুন ভাবে ব্রেস্ট/স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে। মূলত ৪০-৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এই ক্যান্সার বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ব্রেস্ট ক্যান্সার শুধু মাত্র নারীদেরই হতে পারে তা নয়, বরং পুরুষরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন তবে তার হার এখনো অনেক কম। যুক্তরাজ্যে যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৪১০০০ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন সেখানে একই রোগে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৩০০ এর মত।
স্তনের অভ্যন্তরীণ কোষসমূহের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলই হল স্তন ক্যান্সার। এর পেছনে কারণ হিসেবে বংশগত বা জিনগত পরিব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত যেসব নারীর পরিবারের “ফার্স্ট ডিগ্রি ব্লাড রিলেটিভ” অর্থাৎ মা, খালা বা নানীর স্তন ক্যান্সারের বা ওভারিয়ান ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, তাদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। উল্লেখ্য, বিশ্ববিখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী এন্জেলিনা জ্যোলির মায়ের স্তন ক্যান্সার থাকায় পরবর্তীতে তার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকগণ ত্রুটিপূর্ণ জিনের উপস্থিতি শনাক্ত করেন এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে উভয় স্তন অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এগুলো ছাড়াও কোনো ধরনের পারিবারিক ইতিহাস ব্যাতীতই একজন নারী যে কোনো বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
প্রাথমিক পর্যায়েই যদি শনাক্ত করা যায়, সেক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। তাই এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গগুলো নিয়ে প্রত্যেক নারীর সচেতন হওয়া জরুরী। মূলত প্রত্যেক মাসে নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করার মাধ্যমে খুব সহজেই এ রোগ ধরা পড়া সম্ভব, এ পরীক্ষাকে বলা হয়ে থাকে “সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন”। স্বাভাবিক ঋতুচক্রের অধিকারী নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ঋতুচক্র বা পিরিয়ডের পর গোসলের সময় নিজের হাত দিয়ে নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকা যাকে রিং ফিংগার বলা হয়, এই তিন আঙ্গুল দিয়ে চেপে চেপে স্তনে কোনো চাকা বা শক্ত কিছুর উপস্থিতি আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে ডান স্তনের ক্ষেত্রে বাম হাতের আঙ্গুল এবং বাম স্তনের ক্ষেত্রে ডান হাতের আঙ্গুল ব্যাবহার করা বাঞ্ছনীয়। একই সাথে বগলের নিচে অথবা গলার কাছে কোনো চাকা বা পিন্ডের উপস্থিতি আছে কিনা তাও দেখতে হবে। স্তনের আকার আকৃতির কোনো পরিবর্তন, স্তনে কোনো ঘা বা ক্ষত রয়েছে কিনা, স্তনের বৃন্তের কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা খেয়াল করতে হবে এবং উপরিউক্ত এক বা একাধিক উপসর্গগুলো দেখলে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যেসব নারী স্বাভাবিক ঋতুচক্রের অধিকারী নয় বা যাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তারা প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে এই পরীক্ষা করতে পারেন।
এছাড়া ৪০-৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিনবছর অন্তর অন্তর মেমোগ্রাফি করার পরামর্শ দেয়া হয় যার মাধ্যমে সহজেই ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। ‘ইস্টাবলিসমেন্ট অব ন্যাশনাল সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং অ্যান্ড ট্রেনিং’ প্রকল্পের আওতায় অধিকাংশ উপজেলা হাসপাতালসহ সকল সরকারি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশনের ব্যবস্থা আছে।
এ রোগ শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আক্রান্ত স্তন অপসারণ করা হয় যাকে মেডিকেলীয় পরিভাষায় বলা হয় Mastectomy এবং শনাক্তকৃত ক্যান্সারটি কোন পর্যায়ে রয়েছে সেই অনুযায়ী রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেয়া হয়ে থাকে।
স্টাফ রিপোর্টার/হৃদিতা রোশনী