‘৭১ এর চিকিৎসা সেবা :
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ যখন বিধ্বস্ত, তখন ইংল্যান্ডে অবস্থানরত বাঙ্গালি চিকিৎসকেরা চুপচাপ বসে থাকতে পারেননি।
দ্রুত সিদ্ধান্ত এর সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠিত হল “Bangladesh Medical Association (uk)” যার সভাপতি ছিলেন ডাঃ এ. এইচ. সাইদুর রহমান ( opthalmologist) এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী (vascular surgeon).
২৯ বছর বয়েসী তরুন চিকিৎসক ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী , দেশের এমতাবস্থায় লেখাপড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে থাকতে নারাজ। তাই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে, কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে।
এরপর মে মাসের শুরুর দিকে BMA-UK এর নির্দেশে তিনি এবং আরেক জন তরুণ চিকিৎসক ডাঃ এম.এ. মবিন ( orthopedic and accident surgeon) পাড়ি জমান ত্রিপুরায়, যুদ্ধকবলিত মানুষদের সেবা দানের জন্য।
দিন যেতে থাকে, দলে দলে বীর বাঙ্গালী যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে থাকে, আর এদিকে আহত, ধর্ষিতা এবং নিহতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এত মানুষকে সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছিলো আগরতলার স্থানীয় হাসপাতালগুলো।। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ডাঃ জাফরুল্লাহ, ডাঃ মবিন এবং মেজর খালেদ মোশাররফকে।
সেক্টর ২ এর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, বিষয়টি নিয়ে ডাঃ রথিন দত্তের স্মরণাপন্য হন। ডাঃ রথিন দত্ত (cheif surgeon of G.B Hospital and Administratior of Red Cross Operation in Tripura) বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আগরতলার মেলাঘরে, যদ্ধু বিধ্বস্ত মানুষদের জন্য আলাদা অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠ হয় এবং এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় মুক্তিবাহীনিকে।।
এরপর আগস্ট মাসে, মেজর মোশাররফ, বরাদ্দকৃত তৎকালীন ৬০০ ইউরো মেজর ডাঃ আক্তার আহমেদ এর হাতে তুলে দেন একটি হাসপাতাল তৈরীর জন্য।
মেজর আহমদ সেই টাকার সাথে আরোও কিছু দানপ্রাপ্ত টাকা যোগ করে বর্ডারের কাছাকাছি বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে একটি হাসপাতাল তৈরী করেন।
এই হাসপাতালটিকে বলা হয় ” Bangladesh Field Hospital” / ” Bangladesh Force Hospital ” / “Bangladesh Hospital ” যেটি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রিফিউজি হাসপাতাল।
হাসপাতালটি ২৫ টি শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও যদ্ধু শেষে ডিসেম্বর মাসে এর আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ৪৮০ তে।।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, হাসপাতালটির কমান্ডিং অফিসার ছিলেন ডাঃ সিতারা বেগম ( army doctor).
ডাঃ সিতারা বেগম আরোও পাঁচ জন বাঙ্গালি চিকিৎসকদের নিয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭১ এ।।
ইত্যোমধ্যে এই হাসপাতালে যোগ দেয় অনেক চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থী।। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিতে থাকেন অগণিত নারী যাদের প্রায় সবারই পূর্ববর্তী কোনো মেডিকেল ট্রেনিং ছিলো না।।
এসব স্বেচ্ছাসেবকদের ট্রেনিং এর দায়িত্ব নেন ডাঃ জাফরুল্লাহ।
চিকিৎসা সেবা এবং রিলিফ বিতরণের কাজে চিকিৎসাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলেয়েছিলেন তৎকালীন অনেক বিখ্যাত মানুষও।
তাঁদের মধ্যে সাইদা কামাল, মিলা ঘানি, মিনু হক, শাহদাত চৌধুরী, লিনু বিল্লাহ, হাবিবুল আলম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে যুদ্ধে আহত মানুষদের জটিল সার্জারিগুলোর দায়িত্ব নেন ডাঃ রথিন দত্ত এবং তার দল।
এভাবেই সম্মেলিত প্রচেষ্টায় ‘৭১ এর চিকিৎসা সেবা চলতে থাকে এবং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় চির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।।
সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা!
সুমাইয়া
শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ
সেশন : ২০১৬/১৭ ( TA-04)