এই স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে আমরা খুবই হতাশ। এটা বর্তমান সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি- ২০১১ এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মনে হচ্ছে না। এত স্বল্প স্বাস্থ্য বাজেট ভিশন ২০২১ এর সাথেও সংগতিপূর্ণ নয়। এটি সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগনের চিকিৎসার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুলবে।
২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০৬৫২ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৫.২ শতাংশ। বিগত অর্থ বছরে যে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৭৪৮৬ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৫.১ শতাংশ। ৩৪০৬০৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে মোট বাজেট ৪০০২৬৬ কোটি টাকা হয়েছে। এর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মূল্যস্ফীতি সহ গননা করলে তেমন বাড়েনি। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে গড় বরাদ্দ হচ্ছে ৬.৫৩%, আর ১৯৯৬ -৯৭ অর্থ বছরের বরাদ্দ ছিল ৮.৬৬%। ফলে বর্তমান বরাদ্দ পূর্বেকার গড় বরাদ্দের চাইতেও কম। অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হবার প্রয়োজন মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ। সে হিসাবে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ হবার কথা ৬০ হাজার কোটি টাকা।
বছরে আমাদের দেশে জনগণ ওষুধ কিনে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার মানে জনগণ ওষুধের জন্যই খরচ করতে হয় ২০ হাজার কোটি টাকা কিন্তু সেখানে বাজেট হলো তার সমপরিমান। বিশ্বস্থ্যাস্থ্য সংস্থ্যা রিকমেন্ডেশন হচ্ছে মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ থাকবে ৫৪ ডলার। আমাদের যে সপ্তম পঞ্চ বার্ষিকী হয়েছে সেখানে টার্গেট ছিল পঁচিশ ডলার করার। এখন হিসাব করলে দেখা যাবে যে এটা ১৫ ডলারের কম বাজেট দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলকভাবে পার্শ্ববর্তী সকল দেশ (ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকার চাইতে আনুপাতিক হারে বাজেট বরাদ্দ কম ।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতিবছর ৬৪ লাখ লোক চিকিৎসা ব্যয়ে বহন করতে যেয়ে গরিব হয়ে যাচ্ছে। এটার কারণ হচ্ছে জনগণ তার পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয়ে খরচ করে ৬৪ শতাংশ আর সরকার খরচ করে ৩৬ শতাংশ। আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্যতম একটা পরিকল্পনা ছিল আমাদের যে আমরা জনগণের ব্যয় কমিয়ে ৩২% আনা হবে আর সরকারের ব্যয় বাড়ানো হবে চিকিৎসা খাতে। কিন্তু এখন তো বাজেট না বাড়ানোতে এটা উল্টো হয়ে গেল।
তাহলে এটি পঞ্জবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
২০১১ সালের হেলথ পলিসির যে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান করা হয়েছিল, সেই স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানগুলোর মধ্যে ১৯, ২০ নাম্বার সেই নাম্বারগুলোর মধ্যে যে প্ল্যান করা হয়েছিল তার সঙ্গে এই বাজেট সঙ্গতিপূর্ণ না। এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনগণের সংখ্যার সঙ্গে চিকিৎসা কর্মীর সংখ্যা সর্বনিন্মে আমাদের দেশে। আমাদের হেলথ পলিসিতে বলা আছে পৃথিবীর ৫৭টা দেশে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম যার মধ্যে আমাদের বাংলাদেশ একটা। আমাদের সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন ২১ হাজার ডাক্তার সরকারিভাবে কাজ করছে। তাতে মাথাপিছু একজন সরকারি ডাক্তারের বিপরীতে ৭৫ হাজার লোক রয়েছে। আমাদের এই নতুন বাজেটে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিশ্বস্থাস্থ্য সংস্থার মতে আরো ৬০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয়ার প্রয়োজন। বাজেট বরাদ্দ না থাকলে এটি সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী সরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য চিকিৎসাবীমা চালু হওয়ার কথা ছিল সে বিষয়ে কোন বরাদ্দ নাই। চিকিৎসাখাতে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বরাদ্দ ১% – ৩২% উন্নিত করার পরিকল্পনা ছিল পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। তারও কোন প্রতিফলন ঘটেনি বাজেটে।
২০১৫ সালে সরকারী হাসপাতালে ১৭,৮৬,৯৭,৯৫৮ টি বর্হিবিভাগীয় রোগির ভিজিট এবং ৭৪,২৫,৫৪১ টি জরুরী ভিজিট সামাল দিতে হয়েছে বর্তমান স্বাস্থ্য প্রশাসনকে। অপ্রতুল বরাদ্দ ও জনশক্তির কারণে অসুস্থ জনগন হাসপাতালে গেলে ২ মিনিটের ভিজিট আর জরুরী বিভাগে গেলে ওয়ার্ড বয়ের সেলাই শংকা থেকেই গেল। সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় যদি এ রকম দুর্বলতা থাকে তাহলে জনগনকে বাধ্য হয়ে যেতে হবে প্রাইভেট হাসপাতালে। ইতোমধ্যে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রাইভেট হাসপাতাল নির্ভর হয়ে উঠেছে। এটা স্বাস্থ্যখাতে গুরুতর অবনতি বোঝা যায়। সরাকরি বাজেট যদি না থাকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস যদি না থাকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি ওষুধ সরবরাহ ঠিকমতো না থাকে, পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার মান গুরুতর হুমকির মুখে পড়ে যাবে। অতএব স্বাস্থ্যখাতে এই বাজেট হওয়া উচিত কমপক্ষে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট বরাদ্দের পর বাস্তবায়নের সক্ষমতা ও দূর্নীতির পূর্বতন চ্যালেঞ্জতো এখনো বিদ্যমান। সব মিলিয়ে সাস্থ্যখাতে বাজেটে স্বল্প বরাদ্দ চিকিৎসাকর্মী ও জনগণের জন্য হতাশা ব্যঞ্জক।
লিখেছেন:
ডা. শাহীনুল আলম
সহযোগী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
kono budget na dilei parto,,, doctor ra free free patient dekhe diben, ✌✌