২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দা থেকে একটা অপরূপ দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যায়। ক্যাম্পাসকে সুন্দর করার জন্য শুধু একটু সদিচ্ছা প্রয়োজন, আর প্রয়োজন সেই ইচ্ছা পূরণে সক্রিয় কর্মপরিকল্পনা ও আত্মোৎসর্গ যা অনেক জায়গাতেই নেই কিন্তু এখানে আছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক স্যারের এই আত্মোৎসর্গ আছে বলেই এটা এখানে সম্ভব হয়েছে। সম্ভব হয়েছে জঙ্গলের মত একটি জায়গাকে সুন্দর বসার ব্যবস্থাসহ একটি পার্কে রূপান্তর যার নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান।
এখানে একজন রোগীকে তিন বেলা মেরোপেনেম দেয়া হয় চৌদ্দ দিনের ডোজে বিনা খরচে এমনকি স্ট্রেপটোকাইনেজ ও ফ্রি পাচ্ছেন রোগীরা। একজন মানুষ চেষ্টা করছে তার মত করে রোগীদের জন্য সর্বোচ্চটা করতে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটেও হয়তো সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগান দেয়া সম্ভব না তারপরও তিনি তার জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ শহরে এত বড় একটি হাসপাতাল, এত এত ডাক্তার থাকা স্বত্বেও কোনো পিসিআই হতো না। পিসিআই এর জন্য যেতে হতো রাজধানীতে। এই অবস্থার অবসান হয়ে সেই কার্যক্রম শুরুর কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, ভবিষ্যৎ এ যা আরো সমৃদ্ধ হবে। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ভাল ডায়ালাইসিস ফ্যাসিলিটি তিনি শুরু করেছেন। ঢাকার বাইরে প্রথম কোন মেডিকেলে পিইটি স্ক্যান ফ্যাসিলিটি আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে, বিএমডি হচ্ছে, সব মিলিয়ে নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ভাল উদ্যোগ।
এখানে প্রচুর রোগী আসে, সার্ভিস প্রদান এবং এর প্রচার দুটোই অনেক রোগী টেনে আনছে এখানে। জনবল সেই অনুপাতে খুবই কম। ডাক্তাররা কি পরিমাণ ডেডিকেটেড হতে পারে, কি পরিমাণ ওয়ার্কলোড তারা ঘাড়ে নিয়ে কাজ করতে পারে তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত এ প্রতিষ্ঠান। পোস্ট এডমিশনে এমন হয় বিস্তৃত করিডোরের মাঝে চলাচলের জায়গাটুকু পর্যন্ত অবশেষ থাকে না। বেড সংখ্যার বাইরে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়, সরকার পক্ষ থেকে জনবল কিন্তু বেড সংখ্যা অনুযায়ী ই! ঢাকার বাইরে হওয়ায় অনারারী চিকিৎসক নাই বললে চলে। সব মিলিয়ে এত মানুষের চাপ সামলে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন এখানকার একদল নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক। এখানে রাত বিরাত যখনই হোক, খুবই কম খরচে ওয়ান স্টপে প্রয়োজনীয় সব রুটিন টেস্টগুলো করা যায়। এতে রোগীর খরচ ও ভোগান্তি দুটোই কমে। অনেক মেডিকেলে রোগী শুধু একটা চাদর পেতে শুয়ে থাকে কিন্তু এখানে প্রথমে বেড না পেলেও নূন্যতম একটা ফোম তাকে দেয়া হয়। হাসপাতালের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়ের ক্ষুদ্র পসরা আছে, পানীয় জলের সুব্যবস্থা আছে, কাপড় শুকানোর বিস্তৃত ব্যবস্থা আছে, আছে বেশ কয়েকটি বিশ্রামাগার। ভিজিটর নিয়ন্ত্রণে ভিজিটর কার্ডের ব্যবস্থা আছে, ট্রলির ভাল ব্যবস্থা আছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে থার্ড পার্টি থেকে রিক্রুট করা হচ্ছে, তাদের সাথে লেনদেন না করার ব্যাপারে প্রতিনিয়ত ঘোষণা করা হচ্ছে।
মাত্রাতিরিক্ত পেশেন্ট লোড থাকার পরেও সবকিছু অত্যন্ত সুনিপুণভাবে পরিচালনায় পুরো প্রতিষ্ঠান, পরিচালক স্যার, সিনিয়র থেকে জুনিয়র সকল চিকিৎসক সবাই একাত্মতা সহকারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখানে আগত রোগীদের সেবায় দিচ্ছেন নিজেদের সর্বোচ্চটা।
এখানকার ইন্টার্ন ডাক্তাররা এক একজন প্রায় সুপার হিরো মতন নিরলস ভাবে খেটে যাচ্ছেন। এডমিশনের দিন দীর্ঘ সময়ে তাদের কলম খুব কম সময়ের জন্য থামে, রোগীর বুকে স্টেথো ধরতে ধরতে তাদের খুব কম সুযোগ হয় চেয়ারে বসে একটু বিশ্রাম নেয়ার। প্রয়োজনের খাতিরেই কখনো কখনো রুঢ়ভাবে রোগীর লোকের সাথে একটু হাকডাক করে অনন্যপায় হয়ে দ্রুত কাজ চালিয়ে নিতে হয়, কেননা পিছনে আরো অনেক রোগী তখন অপেক্ষা করছে তাদের রোগীর ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্টের জন্য।
সবমিলিয়ে একজন সৎ পরিচালকের দিক নির্দেশনা, অসংখ্য অভিজ্ঞ স্যারদের তত্ত্বাবধান, একঝাঁক পরিশ্রমী ইন্টার্ন, পাশাপাশি সেবিকা ও অন্যান্যদের সাথে নিয়ে এত অজস্র রোগীদের সেবাদানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য।
তথ্যসূত্রঃ ডা. কাওসার
ঢামেক, কে-৬৫
নিজস্ব প্রতিবেদক / নাজমুন নাহার মীম