গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে তৎকালীন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশের সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত একজন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসাপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৭৯ জন। আর বিএমডিসি থেকে সনদপ্রাপ্ত (সরকারি-বেসরকারি) ডাক্তারের সম্মিলিত অনুপাতে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবাপ্রার্থী ১ হাজার ৮৪৭ জন।
সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরও বলেন, সিম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসভিআরএস) ১ জুলাই, ২০১৫ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৫৮ দশমিক ১ মিলিয়ন। স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তারের মোট পদ ২৪ হাজার ২৮ জন এবং কর্মরত ডাক্তারের সংখ্যা ২২ হাজার ৩৭৪ জন। সে অনুযায়ী সরকারি স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ডাক্তার ও জনসংখ্যার অনুপাত ১: ৬৫৭৯। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ডাক্তার ও জনসংখ্যার অনুপাত ১:১৮৪৭।
বিগত কয়েক বছরে হয়তো এ ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে তবে সার্বিকভাবে অবস্থার তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় নি। বর্তমানে যে বিপুল সংখ্যক নবীন চিকিৎসক চাকুরী প্রত্যাশী তা বিসিএস-এর জন্য আবেদন কৃত প্রার্থীদের সংখ্যা লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়।
আজ এই বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ তথা চিকিৎসকদের জন্য কিভাবে কর্মসংস্থান করা সম্ভব সে সব সম্ভাব্য খাত সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস রাখছি।
নবীন চিকিৎসকদের কর্মসংস্থান এর জন্য যে খাত গুলো চিহ্নিত করা যায় তা হলোঃ
১) সরকারী চাকুরী
ক) বিসিএস-এর মাধ্যমে নিয়োগ
বিসিএস নিয়োগে প্রক্রিয়ায় প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। এতে করে অনেক সময় সরকারি চাকুরী প্রত্যাশী প্রার্থীদের বয়স পার হয়ে যায়। তাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো দ্রুত সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
খ) এডহক ভিত্তিক নিয়োগ
স্থানীয় সরকার পরিষদের মাধ্যমে ১৯৯১ সনে এবং পরবর্তীতেও পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় ভাবে ডাক্তার সংকট কাটানোর জন্য তখন কিছু সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এভাবে এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় ভাবে ডাক্তার সংকট কাটানোর উদ্যোগ নেয়া যায়।
২) স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান
ক) সরকারি কর্মজীবী হাসপাতাল
খ) পুলিশ হাসপাতাল – প্রত্যেক জেলায় একটি হাসপাতাল
গ) রেলওয়ে হাসপাতাল – প্রত্যকটি পুরাতন বৃহত্তর জেলা শহরে
বর্তমানে ঢাকায় অবস্থিত সরকারী কর্মজীবী হাসপাতালটি সুনামের সাথে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে সরকার প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এ ধরনের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আরো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিবেন।
৩) কর্পোরেশনের চাকুরী
ক) সিটি কর্পোরেশন হাসপাতাল – প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৭/৮ করে প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করতে পারে।
খ) ম্যাটার্নিটি এন্ড চাইন্ড কেয়ার হাসপাতাল – প্রসংগত উল্লেখ্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি ম্যাটার্নিটি হাসপাতাল পরিচালনা করে থাকে। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন যদি এ ধরণের উদ্যোগ নেয় তা হলে স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
গ) বিসিআইসির অধীন, যেমনঃ পেপার মিল, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, রেশম মিল, সুগার মিল, পাট কল, বিসিক।
ঘ) ব্যাংক – সরকারী ও বেসরকারি।
ঙ) বীমা কোম্পানি – যে কোনো ব্যক্তি বীমা পলিসি গ্রহন করার আগে উক্ত ব্যক্তির শারীর ফিটনেসের জন্য কিংবা মেডিক্যাল চিকিৎসার জন্যও ডাক্তারী পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। তাই কয়েকটি বীমা কোম্পানি একত্রিত হয়ে একটি মেডিক্যাল সেন্টার পরিচালনা করতে পারে।
৪) বেসরকারি সংস্থার চাকুরী
ক) গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী
খ) বিভিন্ন বেসরকারি শিল্প কারখানা, যেমনঃ টেক্সটাইল মিল, রি-রোলিং ফ্যাক্টরী ইত্যাদি।
শিল্প কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যানুপাতে ডাক্তার নিয়োগ পূর্বক মেডিক্যাল সেন্টার পরিচালনা করা যায়। প্রসংগত উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ইপিজেড-এ বেপজা এ ধরনের একটি প্রাইমারী হেলথ ক্লিনিক বা মেডিক্যাল সেন্টার পরিচালনা করে থাকে। তাছাড়া কোরিয়ান কোম্পানি ইয়াং ওয়ান -এর নিজস্ব মেডিক্যাল সেন্টার আছে। এভাবে প্রতিটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর নিজস্ব মেডিক্যাল সেন্টার থাকা আবশ্যক।
৫) বেসরকারি ক্লিনিক
যে কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকের রেজিষ্ট্রেশন দেয়ার আগে শয্যা সংখ্যার আনুপাতিক হারে রেজিস্ট্রার্ড এমবিবিএস চিকিৎসক পদ এবং পোস্টিং থাকতে হবে। শর্ত থাকে যে, উক্ত ক্লিনিকে জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সেলারী কত হবে, প্রতিদিন কর্মঘন্টা কত হবে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দ্বারা সুরক্ষিত করতে হবে।
৬) উপজেলা ভিত্তিক জিপি সেন্টার
জিপি সেন্টার গুলোতে যাতে জুনিয়র ডাক্তাররা গ্রুপ প্র্যাকটিস করতে পারে সে জন্য চেম্বার এর পাশাপাশি ইনভেস্টিগেশন সেন্টার ও ফার্মেসী খোলার জন্য সহজ শর্তে উদ্যোক্তাদের সরকার ব্যাংক লোন দিতে পারেন।
এভাবে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহন করার মাধ্যমে সরকার নবীন চিকিৎসকদের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করতে পারেন।
ডা: আজাদ হাসান
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ