প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুলাই ২০২০, রবিবার
সরকারী চাকরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা এবং অর্থ আত্মসাতের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায়, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান জানান, ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বরখাস্তের বিষয়টি আজ থেকেই কার্যকর হবে।
চিকিৎসক সাবরিনাকে বরখাস্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি সরকারী চাকুরিজীবি হওয়া সত্ত্বেও অনুমতি না নিয়েই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (জেকেজি) চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত ছিলেন। তাছাড়া করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারী কর্মচারি বিধিমালা অনুযায়ী এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব কারণে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তেজগাঁও পুলিশ বিভাগের উপ- কমিশনার হারুন-অর- রশিদ আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং আগামীকাল (সোমবার) তাকে আদালতে নেওয়া হবে। পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করবে, জিজ্ঞাসাবাদের পর এই ঘটনায় আর কে কে জড়িত রয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।
এর আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে জেকেজির যেসব সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের সবাই বলেছেন সাবরিনাই জেকেজির চেয়ারম্যান। তাছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজে জেকেজির বুথে হামলার অভিযোগ উঠলে সাবরিনাই প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেন। কিন্তু পুলিশ অভিযানের একদিন আগেই তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যান। তাছাড়া নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সাবরিনা তার দায় এড়াতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন হারুন অর রশিদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করার চুক্তি করেছিল জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি হেলথকেয়ার) বাসা থেকে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার ৬০০ টাকার বিনিময়ে তারা নমুনা সংগ্রহ করছিলেন এবং ভুয়া প্রতিবেদন দিচ্ছিলেন। একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ প্রথমে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। জালিয়াতির খবর প্রচার হওয়ার পর থেকে সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরী এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরির বাইরে তিনি শুধু কিছুদিন ওখানে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন। তাছাড়া নিজেকে বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিয়াক সার্জন দাবি করা (আদতে তিনি প্রথম নন) এই নারী পরে নিজের নামও বদলে ফেলেন। তাঁর নাম সাবরিনা শারমিন হোসেন হলেও তিনি তাঁর স্বামীর উপাধি ব্যবহার করছিলেন। গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের নাম বদলে রাখেন সাবরিনা মিষ্টি চৌধুরী সাথে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁকে নির্যাতনের অভিযোগও তোলেন। করোনার এই কঠিন সময়কালে যখন মানুষের শেষ ভরসা চিকিৎসক আর হাসপাতাল। তখনই দেখা মিলছে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর নানান অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা যার ভুক্তভূগী সাধারণ মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজ (১২ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন অনিয়ম, করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন না দেয়া সত্তেও টেস্ট করা, অতিরিক্ত টাকা নেয়া, হাসপাতাল ভবনের লাইসেন্স নবায়নকৃত না করা ইত্যাদি ব্যর্থতার দায়ে পাঁচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করোনা নমুনা পরীক্ষা স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠান গুলোর তালিকায় রয়েছে গুলশানে অবস্থিত শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল, স্টেমজ হেলথ কেয়ার, মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজ, এপিক হেলথ কেয়ার (চট্টগ্রাম), থায়রো কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এদিকে পৃথক আলোচনায়, রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে বিবৃতি দিয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।