২৪ মার্চ ২০২০:
রাকিবুল হাসান রাসেল
চার্টার্ড একাউন্টেন্সি স্টুডেন্ট
তারপর কবিরাজের কুমারী মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর কথা বলে বাবার কাছেই গর্ভনষ্টের ঔষধ চায় সে একদিন। জবাবে কবিরাজ বলেন, “আমার কাম অইল মাইন্সের জীবন বাঁচানো, জীবন নষ্ট করন না!”
চোখ বন্ধ করে মেয়েটি বাপের কাছ থেকে চলে আসে, রাতের বেলায় সাজে, একলা একলা কথা কয়। কাউকে কিছু বলে না, বুঝতেও দেয় না, কেবল বোবা ছোটবোনটি এসব দেখে, কিন্তু কিছুই বলতে পারে না।
অনেকদিন পর সেই চতুর প্রেমিকটি আসে মেয়েটির সাথে দেখা করতে। মেয়েটি গর্ভনষ্টের ঔষধ না জানলেও কোন গাছের পাতায় বিষ আছে ভালো করেই জানতো। প্রেমিককে কাছে পেয়ে সে জিজ্ঞেস করে এগুলো কি পাতা বলতে পারেন? জবাবে স্বভাবজাত চতুরতায় বলে, “এসব আমি জানবো কেমনে জানবো ছাগল-পাগলে যারা এগুলা খায়।”
দীর্ঘদিনের জমানো কথা সে তার প্রেমিককে বলতে পারে না, জানে সে তার কাছে আর কিছু বলে লাভ নেই। শুধু বলে, “এটা মানুষেও খায়, কেউ যখন মনের দুঃখে বেদিশা হয়, তখন খায়” মেয়েটি কপ করে তার হাত ধরে ফেলে শক্ত করে, বলে “আমি এখন এই পাতাগুলো খামু আর দশ মিনিটের মইধ্যে আমার মৃত্যু অইবো, কিন্তু আপনারে আমি ছাড়মু না, লোকে দেখবো একটা মরা মানুষ আপনেরে ধইরা আছে!”
ধুরন্ধর প্রেমিকটি অনেক ধস্তাধস্তি করেও আর নিজেকে ছাড়াতে পারে সেই মেয়েটির হাত থেকে, মেয়েটি শেষপর্যন্ত মারা যায়।
প্রেম-ভালোবাসা এক পরম ভরসার বিষয় যেখানে বিশ্বাসের ভিত ঘরে জীবন নিয়ে খেলতেও ভয় পায় না চরম আবেগি মানুষগুলো, বিশ্বাসের শেকড় পুঁতে স্বপ্নের অট্টালিকা সাজায় দিনকে দিন আর মুহুর্তে ভেঙে পড়ে হটকারি চতুর মনোভাবের কারণে।
বিশ্বের এই ক্রান্তিকালে প্রেমের গল্প করার সময় এটি নয়। বিশ্ববাসীর সাথে আমাদের দিনগুলিও হয়ে গেছে ম্লান আর দিন কাটছে চরম উতকন্ঠায়। যেখানে সঠিক পরিকল্পনা আর পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার রূপরেখা এখনো ঠিক হয়ে উঠে নি, অথচ ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে জনজীবন।
সাধারণ মানুষ তো পরের ব্যাপার চারদিকে তুমুল হাহাকারের মাঝে দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীলরা দিয়ে যাচ্ছে বেকুবের মত ভাষণ। ডাক্তাররা কাটাচ্ছে চরম উৎকণ্ঠায় সময়গুলো যেখানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সেফটি ইকুইপমেন্ট নেই। তাদের অভিভাবক মাননীয় মন্ত্রী গল্পের প্রেমিকটির মতই বিপদে দায়িত্ব না নিয়ে বলছেন- “এখনো পিপিইর এতটা প্রয়োজন নেই।”,
এইমুহুর্তে যতটা জানি একজন ডাক্তার আইসিইউতে আছে। ভাবছি হুমায়ুন আহমেদের এই নাটকের গল্পের মতই যদি মৃত্যুপথযাত্রী কোনো ডাক্তার কপ করে মন্ত্রীর হাত পাকড়ে শ্বাসকষ্ট জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে, “স্যার, পিপিইর প্রয়োজন নেই, আমি মরে যাচ্ছি, কিন্তু আপনাকে ছাড়ছি না!” পৃথিবী দেখুক একজন মৃত ডাক্তার একজন অবিবেচক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাত ধরে আছেন!