হতশ্রী হাসপাতাল, দায় কার?

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। রোগীর চাপ এতই বেশী যে ওয়ার্ডে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কখনো এমন হয়েছে যে, পেশেন্ট এর ভর্তির ইন্ডিকেশান নেই অথচ পেশেন্ট দিব্যি হাসপাতালের বেড অকুপাই করে আছেন। মনে মনে ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসারকে দোষ দিয়েছি কেন উনারা এভাবে নন ইমারজেন্সীকে ইমার্জেন্সী বানান। আমি নিজে দুইমাস ইমার্জেন্সীতে ছিলাম। দেখলাম তাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ, আমি দোষ দেয়ার বদলে এখন উনাদের প্রতি সহমর্মী, কারন দেশের মানুষ চলে আবেগে, ওরা এখনো ট্রিটম্যান্ট কি সেটাই বোঝে না। আপাত নরমাল রোগী যার বহিঃবিভাগে যাবার কথা সে ইমার্জেন্সীতে এসে এমন ভাব করবে যে ভর্তি না দিলে সে মরেই যাবে৷ কি আর করা ভর্তি দিতেই হয়। একটা পেশেন্টকে ইমার্জেন্সীতে ১০০% ইভালুয়েশান করা সম্ভব নয় যেখানে ২৪ ঘন্টায় রোগী আসে ৮০০ এর মতো। এছাড়া রিকোয়েস্ট এ ভর্তির লিস্ট তো আছেই। কেউ বলবে আমরা দূর থেকে এসেছি, কেউ বলবে ওমুক ডাক্তার কিম্বা তমুক বড়ভাই আমাদের পাঠিয়েছেন৷

কারন খুঁজতে গিয়ে দেখলাম ভয়াবহ বিষয়। উপজেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব এতই বেশি যে কিছু মানুষ খুব সহজেই প্রপার ওয়ে ছাড়া রেফার হয়ে চলে আসে টার্শিয়ারী কেয়ার হাসপাতালে। আবার কিছু মানুষ সামান্য সমস্যাকে এত বেশী জটিল ভাবে উপস্থাপন করে একটা প্যানিক সৃষ্টি করেন যে, উপজেলার চিকিৎসক নিজের পিঠ বাঁচাতে ওই রোগীকে রেফার করেন। যখন তখন ভুল চিকিৎসার অপবাদ আর এলাকার হামবড়া মানুষদের অতি সচেতনতায় দিশেহারা হয়ে ডাক্তারের রেফার না করে উপায় কি?

আমি জানি আমার এই লেখার অনেকেই সমালোচনা করবেন। কিন্তু এটা একটা জাতীয় সমস্যা। আমার কথাকে সমালোচনা করুন অসুবিধা নেই কিন্তু সিচুয়েশানটা একবার ভেবে দেখুন। আমরা যতদিন আমাদের নেগেটিভ মেন্টালিটি পরিবর্তন করতে না পারবো ততদিন আমাদের উন্নতি হবে না। আমরা তো ডাক্তার নাই, চিকিৎসা নাই বলেই খালাস অথচ ভেবে দেখিনা কেন এমনটা হচ্ছে।

আমি পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সচেতনতার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই যা আছে তা হচ্ছে পারস্পরিক দোষ দেয়া নেয়ার একটা কালচার।

– আমরা বুঝিনা কোনটা ইমার্জেন্সী কোনটা নরমাল।
– যে সমস্যার কোন পারমানেন্ট সলিউশান নাই সেই সমস্যা নিয়ে আমরা বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করি।
– হাসপাতালে রোগীকে দেখতে আসার ট্রেন্ডটা এখনো চালু আছে। প্রতিটা হাসপাতালে রোগীর সাথে এত এত লোক আসে যে উনাদের কারনে হাসপাতাল হয়ে উঠে মাছের বাজার। না এসেও উপায় কি? অসুস্থ্য মানুষকে না দেখতে আসলে কি আত্নীয়তা থাকে? কি হবে এই আবেগী জাতির।
– হাসপাতালকে এইভাবে অবহেলা কিভাবে মানুষ করে? বেডে ময়লা ফেলে যা ইচ্ছা তা করে রাখে, সকালে হাসপাতাল থেকে যে পরিমান ময়লা বের হয় তা মনে হয় সিটি কর্পোরেশান এর ময়লার ট্রাক থেকে কম নয়। এসব কি ডাক্তার এর দেখার কাজ?
– হাসপাতালে আসলে একজন মানুষও কিছু বুঝেন না, দালাল এর খপ্পরে পড়া, টেস্ট করতে দিলে না করা, নিজের ভালো না বোঝা, এগুলো কিন্তু বেসিক। আমার মনে হয়, হাসপাতাল কেউ চিনেনই না। এটা কেমন কথা?
– এবার আসি হিস্ট্রি, সকালে যিনি রোগীর সাথে থাকেন বিকেলে আরেকজন আসেন উনারা হিস্ট্রি নয় যেন বানানো গল্প বলেন, এটা কি মানা যায়? সবার ভীড় করবেন সকালে অথবা রাতে, বিকাল বা দুপুরে কেউ থাকেন না, ঔষধ নয়, রোগী আংগুর আর আপেল খেলো কিনা সেটাই যেন উনাদের মূল উদ্দেশ্য।
– কোয়াক আর ঝাড়ফুকের উপর অন্ধ বিশ্বাসের কথা না হয় নাই বা বললাম।

আর কত? নিজেদের ভালো নিজেরা না বুঝলে কিভাবে চিকিৎসা পাবে? কিভাবে মানুষ এত উদাসীন থাকেন। এভাবে আর যাই হোক একটা সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরী করা যায় না।

আসলে হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশ নেই৷ কেউ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলার আগে অবশ্যই ভাবা উচিৎ গলদ টা কোথায়। চিকিৎসা সেবা অবশ্যই দুই মুখী হবে, সবকিছুতে ডাক্তারের দোষদেয়ার যে রীতি চালু আছে তাতে আমাদের রোগী ও রোগীর স্বজনদের উদাসীনতা ঢাকা পড়ে যায়, প্রতিদিনই। এটা কাম্য হতে পারে না, এতদিনেও আমরা আমাদের কাজের পরিবেশ ঠিক করতে পারলাম না, আফসোস!!

কাজের পরিবেশ ঠিক না হলে, হাজার হাজার ডাক্তার উৎপন্ন হবে সত্য কাজ হবে না। দিন দিন হতাশার মিছিল বাড়বেই।

#সুস্থ্য_ও_সুন্দর_কাজের_পরিবেশ_চাই
#পেশেন্ট_এডুকেশান_ইজ_মাস্ট

#তবুও_ভালো_থাকি

মৃনাল সাহা
সিওমেক
৩৮ তম

সোনালী সাহা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

গভীর রাতের গল্প।

Wed Sep 19 , 2018
সামারা তিন্নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ k-61 রেসিডেন্ট,ভিক্টোরিয়া , অস্ট্রেলিয়া গভীর রাতের গল্প ————– শিরোনাম দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এটা কোনই প্রেমের উপন্যাস না। প্রথম বাক্যটি পড়ে প্লিজ হতাশ হবেন না; জগতে প্রেম ছাড়াও বলার মত অনেক গল্প আছে। যদিও ‘গভীর রাত’ শব্দ দু’টি বিশেষ সুবিধের নয়। এক হিমু ছাড়া ঘোরতর […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo