উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার আজ এক আতংক
ঠিক কখন থেকে মানুষের মাঝে এই আতংক সৃষ্টি হল আমার জানা নাই। ইন্টার্ন চলার সময়টাতে মেডিকেল কলেজের রোগীদের মাঝে এই আতংক আমি দেখি নাই। উপজেলায় এসেই এই আতংকের সন্ধান পেলাম। আউটডোর এ রোগী দেখার সময় থেকেই শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রোগীদের মাঝে এই প্রেশার ভীতির সন্ধান পাই। একসময় বাধ্য হয়ে আউটডোরে বিপি মেশিন রাখা বাদ দেই। এলাকার পাতি নেতা ছোটখাট মাস্তান এর আউটডোরের গরম টা একটু হলেও কমাতে পেরেছিলাম।
প্রথম দেড় বছর সাবসেন্টারে পোস্টিং হওয়ার সুবাদে ইমার্জন্সী করতে হয় নাই। যখন থেকে ইমার্জন্সী করতে থাকি তখন থেকেই আজে বাজে কারণে অকারণে কত রোগী যে ইমার্জন্সীতে ভীড় করতে থাকে তার ইয়ত্তা নেই। সরাইল উপজেলায় কেন জানি এত প্রেশার আতংক!!!
একবার ২০ বছরের এক মেয়ে তার বাবাকে নিয়ে ইমার্জেন্সীতে আসে। কমপ্লেইন একটাই তার ঘাড়ের এক পাশে হালকা ব্যথা করছে। আমি ভাল করে দেখে তাকে চিকিৎসা দিলাম। কেন তার প্রেশার দেখলাম না এই জন্য সেই ইমার্জেন্সীতে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে ফেলে।
১৬ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে মোটামুটি মাথা ব্যথা নিয়ে আসে। আমাকে এসেই অর্ডার করছে তার প্রেশার দেখে দেওয়ার জন্য। তার নাকি প্রেশারে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে। এছাড়া এলাকার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেম্বার ও তার চৌদ্দগুষ্ঠির প্রভাব তো আছেই।
সব বাদ দিলাম। সারা দিন ইমার্জেন্সী করে যখন একটু শান্তির আশায় রুমে গিয়ে একটু চিত হই তখন আবার রাত দেড়টায় ডাক পড়ল। রোগীর নাকি তার শরীরটা একটু দুর্বল লাগছে; প্রেশার টা একটু দেখে দেওয়ার জন্য। আরেকবার এক রোগী আসল রাত তিনটার সময় তার ব্লাড প্রেশার মেপে দেয়ার জন্য। এইরকম আরো অসংখ্য ঘটনা আছে।
তাই “প্রেশার “আজ আমার কাছে এক মূর্তিমান আতংক।
লিখেছেন:
ডা. কাজী শামসুল আরেফীন
মেডিকেল অফিসার
সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া