প্ল্যাটফর্ম নিউজ ডেস্ক, ২৭জুলাই, সোমবার, ২০২০
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, এখন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযােগে হাসপাতালগুলােতে যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, সেই অভিযানগুলােতে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়াটা সমস্যার সমাধান নয়। এটা মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতাে সমাধান। এই সমাধানের ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাবে এবং একটা চিকিৎসাহীন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে করােনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনের আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, আইন প্রয়ােগকারী সংস্থা র্যাব বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে এবং অভিযান চালিয়ে সে সমস্ত হাসপাতালগুলােকে সিলগালা করে দিচ্ছে। এর ফলে একাধিক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। প্রথমত, যে হাসপাতালগুলাে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, সেটা কোনাে সমস্যার সমাধান নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যে হাসপাতালগুলাে বন্ধ হচ্ছে, সেই হাসপাতালগুলাের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেক হাসপাতালেরই লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ। এটার জন্য তাে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী না। এটার জন্য দায়ী প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ প্রশ্ন করেন যে , লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু নবায়ন করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাহলে দায়ী কে? ব্যবস্থা নিলে যারা লাইসেন্স নবায়ন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে , তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি যে, আইনপ্রয়ােগকারী সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে, সেখানে টেলিভিশন ক্যামেরা যাচ্ছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে একটা অনাস্থা তৈরি হচ্ছে । এমনিতেই করােনা সংকটের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একটা অনাস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, মানুষ হাসপাতালে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এখন করােনা রােগীরা বাসায় চিকিৎসা নিতেই স্বাচ্ছন্দ বােধ করছেন। করােনা ছাড়াও অন্যান্য রােগীরা যে তাদের জরুরী প্রয়ােজনে হাসপাতালে যেতেন, এখন এই সমস্ত অভিযানের কারণে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। মানুষজনের মধ্যে হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, একটা হাসপাতালে অনেক রােগী থাকে , সেখানে গিয়ে এভাবে অভিযান পরিচালনা করা কতটুকু যৌক্তিক সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। এখন হঠাৎ করে এই অভিযান কেন , সেই প্রশ্নও উত্থাপন করেন ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, যার যে কাজ সেটি তার করা দরকার। আইনপ্রয়ােগকারী সংস্থা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করার আগে তাদের চিন্তা করতে হবে ওই হাসপাতালেও রােগী আছে। ওই হাসপাতালটা যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে রােগীরা কোথায় যাবে ?
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন , যারা এই অভিযান পরিচালনা করছেন তাদেরও মা বাবা , ভাই – বােন কিংবা আত্মীয় স্বজন আছেন। এভাবে একের পর এক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেলে তারাও যখন অসুস্থ হবেন, তখন তাদের চিকিৎসা কোথায় হবে? যেকোনাে অভিযােগের অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিৎ বা বিচার হওয়া উচিৎ। কিন্তু এটি হতে হবে একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এভাবে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়া এবং হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এর ফলে মানুষের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হবে।
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করােনা মােকাবেলার শুরু থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছিল। প্রথমে চিকিৎসকরা ভয় পেয়েছিল। তারা হাসপাতালে যেতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল। এরপর তাদেরকে নিম্নমানের পিপিই সরবরাহ করা হয়। এর ফলে অনেক ডাক্তার মৃত্যুবরণ করেন। এখন পর্যন্ত ৭০ জন চিকিৎসক মৃত্যু বরণ করেছেন, যা একটি পেশাদার গােষ্ঠীর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক। এখনও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সংকট রয়েছে। কোভিড এবং নন কোভিড আলাদা করা হয়নি। এজন্য মানুষ এখন ঘরেই চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দবােধ করছে। জরুরি প্রয়ােজন ছাড়া তারা হাসপাতালে যেতে চাইছে না। তার উপরে যেটা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালগুলােতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে আরেকটি সংকটের সৃষ্টি করা হয়েছে।
ডা. আব্দুল্লাহ মনে করেন যে, এই হাসপাতালগুলােতে যে অনিয়ম বিশৃঙ্খলা, সেই অনিয়ম বিশৃংখলার জন্য শুধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নয়, প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায় দায়িত্বও রয়েছে। ব্যবস্থা নিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়ােজন।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার