একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ এবং সে সংবাদের বিপরীতে প্রকৃত পক্ষে কী ঘটেছিল শুনুন একজন চিকিৎসকের ভাষ্যেঃ
পত্রিকার অনিলাইন ভার্সনে প্রকাশিত সংবাদঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : গত মঙ্গলবার চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার হাসপাতালের দুই এ্যাম্বুলেন্স চালককে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু সাঈদ জানান, মঙ্গলবারের ঘটনায় হাসপাতালের ২ এম্বুলেন্স চালক হুমায়ূন লস্কর ও নূরুজ্জামানকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে এবং হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩০/৪০ জনের নাম উল্লেখ না করে সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনের ধারায় মামলা হয়েছে। এদিকে জেলা সদর হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনা শুনে মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তিনি বলেন, হাসপাতাল ভাংচুরকারীদের কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে উপস্থিত সাধারণ লোকজন হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্তব্য কাজে অবহেলা এবং এ্যাম্বুলেন্স চালকদের অনিয়মসহ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের কথা সংসদ সদস্যের কাছে তুলে ধরেন।উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার শহরতলীর নাটাই গ্রামের আবুল কালাম আজাদের শিশুপুত্র নিলয় (৬) বাড়ির দেয়াল চাপায় আহত হয়। জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় প্রেরণ করে। সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সের চালক হুমায়ুন ঢাকায় নিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকের হাতে পায়ে ধরে শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু চিকিৎসকরা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটি মারা যায়। এতে রোগীর স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। সরকারী এ্যাম্বুলেন্সটি ব্যাপক ভাংচুর ও আগুন লাগানোর চেষ্টা চালায়। ভাংচুর চালায় একটি মোটর সাইকেলও। জরুরী বিভাগ, মাইনর ওটিসহ সদর হাসপাতালের ২৫ টি কক্ষ ভাংচুর করে। এসময় হাসপাতালে কর্মরত সেবিকা ও চিকিৎসকরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গা ঢাকা দেয়। এদিক সেদিক পালাতে থাকে রোগীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি চালালে এসআই সোহাগ, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আশরাফুল আলম টিটু সহ গুলিবিদ্ধ হয়।
চিকিৎসকের ভাষ্যঃ
ঘটনার আদ্যোপান্ত জানুক বা না জানুক সাংবাদিক নামকধারী তথ্য সন্ত্রাসীরা গায়েবী সংবাদ প্রচারে ব্যস্ত থাকেন। তাদের আক্রোশ শুধুই চিকিৎসকের উপর।
দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইন নিউজের স্ক্রীনশট দেখুন(লিঙ্ক কমেন্টে)। কাহিনীর সারসংক্ষেপ না জানলে আপনিও বায়াসড হবেন এসব মূর্খ থার্ডক্লাস রিপোর্টারদের কাছে।
মঙ্গলবার দেয়াল চাপা পড়া এক বাচ্চাকে নিয়ে আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাচ্চাকে ভর্তি করে দ্রুত এক্সরে করার নির্দেশ দেন। সেই সাথে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিল। এক্সরে-তে rib fracture (পাঁজরের হাড় ভাঙ্গা) ধরা পড়ে এবং জরুরী বিভাগের চিকিৎসক দ্রুত আবাসিক সার্জনকে খবর দেন। উনি দেখে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল রেফার্ড করেন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ফুসফুসেও আঘাত থাকতে পারে এবং প্রতিটি মূহুর্তই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বহুলাংশেই সদর হাসপাতালগুলোতে এখনো সেধরনের ক্রিটিক্যাল কেস হ্যান্ডল করার উপযুক্ত সরঞ্জাম নাই। রোগীর অভিভাবকগণ ডাক্তারদের পরামর্শ মোতাবেক ঢাকায় নেবার প্রস্তুতি গ্রহন করছিল।
সমস্যা হয়েছে এম্বুলেন্স নিয়ে। ডাক্তারের কথা শুনে তারা রোগীকে এম্বুলেন্সে উঠায়। কিন্তু ড্রাইভারের সাথে তাদের কোন বিষয়ে বনিবনা না হওয়া বা খুজে না পাওয়াজনিত কারনে এম্বুলেন্স থেমেই থাকে। এখানেই কেটে যায় প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট। সরকারি এম্বুলেন্স না পেয়ে তারা অন্য একটি এম্বুলেন্স করে রোগীকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। রাস্তায়ই মারা যায় ৬ বছরের বাচ্চাটি। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন এসে এম্বুলেন্স, ইমার্জেন্সি আর কিছু রুম ভাংচুর করে।
অথচ পত্রিকায় লিখেছে “চিকিৎসকের অবহেলা।” খুব সহজ ও কমন শিরোনাম হবার মত দুটি শব্দ। কিন্তু এখানে চিকিৎসকের অবহেলাটা কোথায়? চিকিৎসক কি এম্বুলেন্সও ভাড়া করে দেবে নাকি নিজে ড্রাইভ করে এসে ঢাকা মেডিকেল পৌছে দেবে?
আবার লিখেছে “চিকিৎসকের হাতে পায়ে ধরেও ঢাকায় পাঠানোর অনুরোধ করে।” খুব বানোয়াট মিথ্যা কথা এটা! কারন আজ সকালেই আমি ঐ চিকিৎসকের সাথে আলাপ করেছি (সে আমার বন্ধু)। সে জানিয়েছে লোকজন প্রথম থেকেই সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার ব্যাপারে অনুরোধ করেছিল। ডাক্তার নিজে কাউন্সেলিং করেছে রোগ এবং এর আউটকাম সম্পর্কে জানায়; নিজে ফোন করে সার্জন ডেকে দেখিয়েছে এক্সরেটি। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে রোগীর গার্জেন ঢাকায় নেবার প্রস্তুতি নেয়। এবং তারা সেই ডাক্তারের উপর বেশ তুষ্ট ছিল। পত্রিকায় যা লিখছে সেটা দেখলে আর আসল ঘটনা শুনলে মনে হয় এরা দিনকে রাত বানাতে চায়।
লেখা এবং ছবিঃ ডাঃ সুমন সাজ্জাদ
চিকিৎসক কি এম্বুলেন্সও ভাড়া করে দেবে নাকি নিজে ড্রাইভ করে এসে ঢাকা মেডিকেল পৌছে দেবে?