প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০শে আগস্ট ২০২০, রবিবার
ব্রাজিলের ১১বছরের এক শিশুর হৃদপেশি ও হৃদপিন্ডের সকল স্তরের কোষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে। এমনকি দেহের যেসব কোষ জীবাণু প্রতিরোধ করে (inflammatory cell), সেসব কোষেও এই জীবাণু পাওয়া গেছে। শিশুটি করোনা ভাইরাসজনিত বহুতন্ত্র সংক্রমণ (multisystem inflammatory syndrome) উপসর্গের পাশাপাশি মায়োকার্ডাইটিস অর্থাৎ হৃদপেশির সংক্রমণ নিয়ে আসে। পরবর্তীতে হার্ট ফেইলিওরে (হৃদযন্ত্র বিকল) মারা যায়। বলা হয়েছে, এই ঘটনাটিই করোনা ভাইরাস সরাসরি হৃদযন্ত্রে সংক্রমণ করার প্রথম প্রমাণ। ইতিপূর্বে কোভিড রোগীর হৃদপ্রদাহ জনিত মৃত্যুর জন্য করোনা ভাইরাস দায়ী বলে ধারণা করা হলেও হৃদপেশিতে এই ভাইরাস কখনো পাওয়া যায় নি, এটিই প্রথম।
ব্রাজিলের সাও পলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসক মারিসা ডলনিকফ বলেছেন, “ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ দ্বারা পরীক্ষায় পর্যবেক্ষিত বিভিন্ন হৃদকোষে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে এই ভাইরাস দিয়ে সরাসরি হৃদপিন্ডে প্রদাহ সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে”।
গত এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “একজন প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড রোগীর হৃদযন্ত্রে গভীর ক্ষত দেখা দিলেও বিভিন্ন হৃদকোষে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।” কিন্তু এই শিশুটির ক্ষেত্রেই এমন উপস্থিতি প্রথম দেখা যায়।
বস্টনের বাইম ইন্সটিটিউট অফ ক্লিনিকাল রিসার্চের সিইও মাইকেল গিবসন জানান, “এমন ঘটনা করোনা ভাইরাসের হৃদপেশি ভেদ করারও সংক্রমণের প্রমাণ। এর আগে জানা গিয়েছিল যে করোনা ভাইরাস কেবল হৃদযন্ত্রের মাংসপেশির বাইরে অবস্থান করে। মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে করোনা ভাইরাস কিভাবে হৃদযন্ত্রের ভিতরে ক্ষত করছে তা এখনও সুস্পষ্ট নয়। যার ফলে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরও হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে একদিন পরই মারা যায়।”
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার হৃদপিন্ড, ফুসফুস ও নাসিকার পথে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়।
পোস্টমর্টেম আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা গেছে যে, হৃদপিণ্ডের বহিরাবরণের ঘনত্ব বেড়ে ১০মিলিমিটার হয়েছে, বাম শিরার ঘনত্ব বেড়ে হয়েছে ১৮ মিলিমিটার, পেরিকার্ডাল ইফিউশনসহ (হৃদপেশি ও বহিরাবরণের মধ্যে তরল জমে থাকা), মায়োকার্ডিয়ামের (হৃদপেশি)ঘনত্বও বেড়েছে। হিস্টোপ্যাথোলজিকেল পরীক্ষায় হৃদপিণ্ডের সর্বস্তরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। রক্তনালির আশেপাশেও সংক্রমণ দেখা গেছে। কিডনির সূক্ষ্মনালি ও ফুসফুসের ক্ষুদ্র রক্তনালিতে জমাট রক্তকণা পাওয়া যায়। করোনা ভাইরাসজনিত মৃদু নিউমোনিয়াও পাওয়া যায়। পাশাপাশি কিডনি ও লিভারে প্রদাহ পাওয়া যায়।
নিউ ইয়োর্কের মাউন্ট সিনাই ক্রেভিস চিল্ড্রেন হাসপাতালের শিশু-হৃদরোগ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের পরিচালক ডাক্তার স্কট আয়ডিন বলেন, “এই ঘটনাটি বিস্ময়কর নয়। কারণ কয়েক মাস আগে যখনই করোনা ভাইরাসে দেহের ‘বহুতন্ত্র সংক্রমণ’ প্রমাণিত হয়েছে, তখন থেকেই হৃদযন্ত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সংক্রমণ নিয়ে সন্দেহ করা হয়।” ফিলাডেলফিয়ার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনিশ কোকা মৃত শিশুটির ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের ক্ষতের নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতির ব্যাপারে বলেন, “এটি প্রমাণ করে ভাইরাসই মূলত দেহের অঙ্গসমূহে ক্ষত তৈরির কারণ”।
(চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী মেডস্কেপের প্রতিবেদন অবলম্বনে)
অনুবাদকঃ নুসরাত ইমরোজ হৃদিতা
তথ্যসূত্র: medscape medical news