জীবদ্দশায় কমবেশি হেঁচকি সবারি হয়। এটা অতি সাধারণ একটা ব্যাপার। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সাধারণ জিনিসটা চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়। পাঠক চলুন, আজ তাহলে আপনাদের সাথে হেঁচকি নিয়ে কথা বলা যাক…
হেঁচকি বলতে মূলত কি বুঝি?
“হেঁচকি” শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে “Hiccups”, এটাকে “Hiccough”ও বলা হয়। আপনি জানেন কি?
ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা হচ্ছে বক্ষ আর উদরের মধ্যবর্তী বিভাজন।হেঁচকির সময় diaphragm হঠাৎ করে সংকুচিত হয় এবং সেই সময় আপনার শ্বাসনালীর উপরে থাকা “glottis/স্বরযন্ত্র(স্বর উৎপন্ন করে)”-ও বন্ধ হয়ে যায়। তখনই “হিক্” করে শব্দ উৎপন্ন হয়। হেঁচকিকে মেডিকেল এর পরিভাষায় “synchronous diaphragmatic flutter or singultus (SDF) “ বলা হয়।
হেঁচকি কেন হয়?
diaphragm শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করে। শ্বাস নেয়ার সময় আপনার diaphragm এর সংকোচন হয় এবং প্রশ্বাসের সময় এটা আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। যখন diaphragm সংকুচিত হয় তখন আপনার বুকের ভিতরে Negative pressure উৎপন্ন হয়, সহজ করে বললে বাইরের pressure এর থেকে ভিতরে pressure কমে যায়। আমরা সবাই জানি, বাতাস বেশি pressureএর স্থান থেকে কম pressure এর স্থানে প্রবাহিত হয়। একারণে বাইরের বাতাস আপনার ফুসফুসে প্রবেশ করে। আবার যখন diaphragm আগের অবস্থানে ফিরে আসে, ফুসফুসও আগের অবস্থানে ফিরে আসে। আর এটা হয় ফুসফুসের elasticity ধর্মের কারনে। ঠিক তখনই, ফুসফুস ভিতরের বাতাসকে নাক আর মুখ দিয়ে বাইরে বের করে দেয়। Diaphragm এর সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে দুটো স্নায়ু। স্নায়ু দুটোর নাম হচ্ছে phrenic nerve. এই দুটো স্নায়ু মস্তিষ্ক থেকে শুরু হয়ে গলার ভিতরের অন্ননালির পাশ দিয়ে দুই ফুসফুসের মাঝ বরাবর গিয়ে হৃদপিণ্ডের গা ঘেঁষে diaphragm পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি কোনো কারণে এই স্নায়ু অন্যসময়ে উদ্দীপ্ত হয়, তাহলে diaphragm এর স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলাফলে কি হয়? হেঁচকি।
হেঁচকি কাদের হয়?
হেঁচকি সবার হয়। যেকোনো বয়সে হতে পারে। যদিও “persistence hiccup” নারীদের তুলনায় পুরুষদের হওয়ার হার বেশি।
হেঁচকি মূলত কত ধরনের হয়?
হেঁচকি সাধারণত কিছু সময় স্থায়ী হয়, অস্বাভাবিক কিছু ক্ষেত্রে এটা মাসব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। স্থায়িত্তের উপর ভিত্তি করে হেঁচকিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকেঃ
1. Hiccup bout/self-limited hiccup ( সচারচর আপনাদের যে হেঁচকি হয় সেটা self-limited hiccup. এটা সাধারণত কিছু সময় স্থায়ী হয় এবং এর জন্য কোনো ক্লিনিক্যাল সাহায্যের প্রয়োজন নেই)
2. Persistent Hiccup ( এটা ৪৮ ঘণ্টা থেকে ১ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয় )
3. Intractable hiccup ( এটা এক মাসের বেশি স্থায়ী হয় )
কি কি কারণে আপনার হেঁচকি হতে পারে?
যদি কেউ দ্রুত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে, এর ফলে কিছু বাতাস খাবারের সাথে ভিতরে চলে যায়, যার জন্য হেঁচকি হয়।
ধূমপান এবং গাম(gum) চিবানোর সময় বাতাস ভিতরে চলে যেতে পারে যা হেঁচকি উৎপন্ন করে।
একবারে খুব বেশি পরিমানে খেলে( বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার) এবং বেশি পরিমানে পান করলে ( অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়)।
Vegus এবং Phrenic স্নায়ুতে কোনো সমস্যা হলে দীর্ঘস্থায়ী হেঁচকি হতে পারে।
উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা এমনকি অতিরিক্ত মানুষিক চাপের কারণে ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী হেঁচকি হতে পারে।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত কান্না ও কাশি হওয়ার পর হেঁচকি হতে পারে। এটা বিশেষ করে জন্মের প্রথম এক বছরে বেশি হয়।
কিছু Chronic medical disorders { যেমনঃ renal failure( কিডনির অসুখ) }; meningitis( মস্তিষ্ক ও সুষুম্না কাণ্ডের আবরনের প্রদাহ), encephalitis ( মস্তিস্কের প্রদাহ)…এগুলোও হেঁচকির জন্য দায়ী।
কিছু ঔষুধ আছে যেগুলো Acid reflux( অম্বল/বুক জ্বালা) সৃষ্টি করতে পারে, ফলশ্রুতিতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হেঁচকি হতে পারে। বেশির ভাগ benzodiazepines যেমনঃ diazepam, alprazolam and lorazepam হেঁচকি ঘটিয়ে থাকে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যদি আপনার হেঁচকি ৩ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা হেঁচকির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, খাবার খেতে সমস্যা হয়, বমির ভাব অথবা বমি হয় তাহলে দেরী না করে ডাক্তার দেখানো উচিত।
হেঁচকির চিকিৎসা কি?
যদি কারো এরকম সমস্যা থাকে যার জন্য হেঁচকি হচ্ছে, তাহলে সেই সমস্যার চিকিৎসা নিলেই হেঁচকি দূর হয়ে যাবে। ডাক্তার আপনার অবস্থা বুঝে প্রয়োজনমত Medicine নেয়ার পরামর্শ দিবেন। যেমনঃ ডাক্তার আপনাকে Muscle Relaxant drug দিতে পারেন অথবা Respiratory system কে stimulate করার medicine নেয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। যদি medicine এ ঠিক না হয় তাহলে Phrenic nerve surgery-র প্রয়োজন হয়, তবে এটা খুব একটা করা হয় না, যদি অন্য treatment দিয়ে কাজ না হয় তবেই।
হেঁচকি হলে কি করবেন?
কয়েকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছেঃ
~ হেঁচকি হলে শ্বাস কিছুক্ষন ধরে রাখুন এবং আস্তে আস্তে শ্বাস ছেড়ে দিন।এভাবে প্রতি ২০মিনিটে ৩/৪ বার করুন অথবা কাগজের ব্যাগে শ্বাস প্রশ্বাস নিন, তবে সেটা যেন ১মিনিটের বেশি না হয়।
~হেঁচকির সময়ে কেউ যদি আপনাকে ভয় পাইয়ে দেয় বা চমকে দেয়,তাহলে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে।
~ঠান্ডা পানি খেলে diaphragm এর ইরিটেশন কমে গিয়ে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
~গ্লাসের অপর পিঠে পানি খাবেন মানে অপর পাশে পানি খেতে আপনাকে ঝুঁকে গিয়ে খেতে হবে যার ফলে পেটের মাংসপেশি তে প্রেশার পরে হেঁচকি বন্ধ হবে।
এই সহজ উপায়ে হেঁচকি কে আপনি বাই বাই জানাতে পারবেন….
লেখক: আকিব নিয়াজ জোহা
jinzhou Medical University, China
অনুলিখন:
নাহিদা হিরা
শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ,গাজীপুর।
সেশনঃ ২০১৪-১৫