প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার
অধ্যাপক ডা. ফাতেমা আশরাফ
বিভাগীয় প্রধান (অবস্ ও গাইনী)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত (1st trimester) গর্ভকালীন সময়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও পরামর্শঃ
১ম ৩ মাস এর স্বাভাবিক সমস্যাগুলি কী?
গর্ভধারণের পর পরই মায়েদের কতগুলি লক্ষণ দেখা দেয়, যে জন্য মা কষ্ট পেয়ে থাকেন-
১. খাবারে অরুচি
২. মাথাঘোরা
৩. বমি বমি লাগা বা বমি হওয়া
৫. বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়া-অস্বস্থি
৬. অস্বাভাবিক জিনিসের প্রতি আকর্ষণ, যেমন- চাল চিবিয়ে খাওয়া, পোড়া মাটি খাওয়া, পান্তা ভাত, ঝাল ও টক ইত্যাদি খাওয়া
৭. কারো কারো ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
মনে রাখতে হবে, এ গুলি সবই গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ। সাধারণত এতে করে শরীরের ক্ষতি হয় না বা এগুলি গুরুত্বপূর্ণ কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়। মা যতটা সম্ভব এগুলিকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করলে ভাল।
১ম ৩ মাস এর স্বাভাবিক সমস্যা গুলির জন্য করণীয়ঃ
১. সমস্যা গুলিকে স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা।
২. সহজে হজম হয় এমন খাবার অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়া।
৩. খাওয়ার সংগে সংগে পানি না খেয়ে, পানি একটু দেরী করে খাওয়া, যেন পেটটা বেশী ভরে না যায়। পেট বেশী ভরে গেলে, বমি লাগার ও বমি হবার প্রবণতা বাড়বে
৪. ঘন ঘন প্রস্রাব এর সংগে যদি জ্বালাপোড়া বা ব্যথা না থাকে তবে একে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া।
১ম ৩ মাসে মা কি কি জটিলতার শিকার হতে পারেন?
১. মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ- রক্তক্ষরণ সামান্য হলেও সতর্ক হতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটি যে কোন সময়ে বেড়ে যেতে পারে। অল্প রক্ত বিশেষ করে কালচে ধরণের রক্ত গেলে বাচ্চার সুস্থতার বিষয়টিও ভাবতে হবে।
২. পেটে ব্যথা-
# সামান্য পেট ব্যথা হলেও সতর্ক থাকতে হবে বা টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে চিকিৎসক কে জানাতে হবে। যে কোন সময়ে ব্যথার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। খাবার ও পানি কম খাওয়ার জন্য শরীর কষা হয়ে শক্ত পায়খানা হতে পারে যা অনেক সময় পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে
# তলপেটের যে কোন একদিকে ব্যথা যদি তীব্র হয় এবং থেমে থেমে হয় তাহলে তাৎক্ষনিক ভাবে চিকিৎসকের সংগে যোগাযোগ করতে হবে অথবা ভর্তি হবার প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালে চলে আসতে হবে। এই ধরণের ব্যাথার পর মা অবসন্ন হয়ে পড়তে পারেন। হৃদস্পন্দন দ্রুত এবং কখনও এতটা দূর্বল হতে পারে যে গণনা সম্ভব হয় না, ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কমে যায়। মা এর হাত পা স্পর্শ করলে ঘামমুক্ত এবং শীতল অনুভূত হয়। এটি একটি অত্যন্ত জটিল অবস্থা এবং জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব মাকে হাসপাতালে আনতে হবে এবং দ্রুত রক্ত জোগাড় করতে হবে। জরুরী অপারেশনের সম্ভাবনা থাকবে। সাধারণত জরায়ুর বাইরে টিউব ও বাচ্চা প্রতিস্থাপন হলে টিউব ছিড়ে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
৩. ব্যথার সংগে রক্তপাত- ব্যথার সংগে যদি রক্তপাত থাকে এবং ব্যথার ধরণ যদি এমন হয় যে, এটি থেমে থেমে আসে আবার যায় তাহলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভকালীন ১ম ৩ মাসে কি কি সমস্যার জন্য চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হতে হবে অথবা কখন হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে হবে?
১. যদি অতিরিক্ত বমি হয়ে মা-
# খুব বেশী দুর্বল হয়ে পড়েন
# প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় তাহলে তাকে তাৎক্ষনিক সেবা নেবার জন্য হাসপাতালে আসতে হবে।
২. প্রস্রাবে ইনফেকশন
৩. জ্বর আসলে
৪. অতিরিক্ত পেটে ব্যথা হলে
৫. মাসিকের রাস্তায় বেশী রক্তক্ষরণ হলে
১ম ৩ মাসে কি কি পরীক্ষা করা প্রয়োজন?
১. সাধারণতঃ মাসিকের তারিখ পার হয়ে গেলে মা গর্ভবতী হয়েছেন কি না জানার জন্য মায়েরা ঘরে বসেই প্রস্রাবের প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে পারেন। যদি টেস্ট কিট প্রস্রাবে ডুবালে ২ দাগ পর্যন্ত রং পরিবর্তন হয় তাহলে বুঝতে হবে টেস্ট পজিটিভ। এ ছাড়া সন্দেহ থেকে গেলে রক্তে B-HCG টেস্ট করেও ধরা যায় যে মা গর্ভধারণ করেছেন কি না।
২. শুরুতে কিছু নিয়মিত পরীক্ষা, যেমন-
# রক্তের Hb%, Urine for R/E
# Blood for grouping & Rh typing
# HbsAg test
# S. FT4
# TSH
# Blood sugar fasting & 2 hrs after
75 gm glucose.
উপরোক্ত পরীক্ষাগুলি বাসায় ল্যাব টেকনিশিয়ান কে ডেকে এনে সংগ্রহ করাতে পারেন অথবা ল্যাব এ গিয়েও পরীক্ষা করাতে পারেন। রক্তে Hb% এর পরিমাণ এই সময়ে 11 gm/dl তার বেশী থাকলে ভাল তবে তা 10 gm/dl এর নীচে আসলে চিকিৎসকের কাছ থেকে খাবার দাবার ও ওষুধের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. USG: আল্ট্রাসনো করলে প্রত্যাশিত ডেলিভারীর তারিখ নিরুপনের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে বাচ্চার জেনেটিক সমস্যা আছে কি না তা জানতে চাইলে জেনেটিক আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে ১১ – ১৪ সপ্তাহের মধ্যে।
**১ম ৩ মাসে সেবনযোগ্য ঔষধঃ
১. Tab. Folic acid (5mg): এটি বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ টা করে বড়ি দিনের যে কোন সময়
অথবা,
Tab. Folic acid+Zinc (5mg + 20 mg): এটিও বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ টা করে যেকোন সময়
২. বমির জন্য Tab. Ondansetron (5mg):
১ + ০ + ১ = ৫ দিন
Tab. Palonosetron (0.5 mg):
১ + ০ + ০ = ৫ দিন
[এটি শুধুমাত্র বমি করার সংখ্যা (frequency) কমাবে]
৩. অন্যান্য ওষুধ প্রয়োজনে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী।
গর্ভবতী মায়েদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের বইটি ডাউনলোড করে নিনঃ
https://drive.google.com/file/d/1W9iMB3HlsdUvO_2POWIib6WlGtY_jVua/view?usp=drivesdk
নিজস্ব প্রতিবেদক/ সারোয়ার জাহান সাকিব