১০০ শয্যা বিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৫০ রোগী!

রবিবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪

চিকিৎসক ও জনবল সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত রোগীর চাপে ব্যাহত হচ্ছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে ২০০৩ সালে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

২০১৭ সালের ১৭ মার্চ মাসে এ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল করার ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসেবে কাজটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও সেই কাজটি এখনও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বার বার সময় বাড়িয়ে নিচ্ছে, সঙ্গে বাড়াচ্ছে নির্মাণ খরচও।

নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল

অন্যদিকে ২১ বছর পার হলেও ১০০ শয্যার জনবল দেয়া হয়নি হাসপাতালে। ৫০ শয্যার কম জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক,নার্স ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জনবল সংখ্যা ১৫৪জন। কর্মরত রয়েছে ১০৪ জন। এখনো শুন্য পদের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ থেকে সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি পদটি খালি রয়েছে। খালি রয়েছে সিনিয়র কনসালটেন্ট  মেডিসিন ও ইএনটির পদ। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক্স, চক্ষু, সার্জারী ও ইএনটি পদ। চিকিৎসকের পদ খালি আছে ১৭টি!

অপরদিকে স্টাফ নার্স ২৩জনের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৫জন। খালি রয়েছে ১৮টি পদ। মিডওয়াইফের ৬টি পদের স্থলে ৬টি খালি রয়েছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। অফিস সহায়ক থাকার কথা ১০জন। আছে মাত্র ২জন, ৮টি পদ খালি রয়েছে। একই অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বেলাও। ৪জনের স্থলে রয়েছে ১জন কর্মরত। বাকী তিনজনের পদ খালি। এতো পদ খালি থাকার পরও চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হছে।

প্রতিদিন এ হাসপাতালটির আউটডোরে হাজারেরও বেশি রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। এছাড়া ধারণক্ষমতার চারগুণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৪২ জন। শয্যার বিপরীতে এতো বিপুল পরিমাণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সরা।

হাসপাতালের নথি অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আটমাসে এ হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ১লক্ষ ৫১ হাজার ৯শত ৫২জন রোগী। জরুরী বিভাগে ৪৫ হাজার ৫শত ৩২জন। এছাড়া অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮ হাজার ৪শত ১২জন ও শুধুমাত্র  ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৩শত ৯৭জন। এসময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন ২শত ১৩জন।

এ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগীর চাপ থাকে শিশু ওয়ার্ডে। শিশু ওয়ার্ডের বেডের সংখ্যা ১৫টি। অথচ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ওয়ার্ডে শিশু ভর্তি রয়েছে ১০০জন। যেখানে প্রতি বেডে এক শিশু চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ৬ জনের বেশি শিশু। এছাড়া স্থান সংকুলন না হওয়ায় বারান্দায় ও ফ্লোরে শিশুদের ভর্তি দিতে হচ্ছে। একই অবস্থায় মেডিসিন,সার্জারী ও গাইনিসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে রোগীর বিছানা পাতা হয়েছে ফ্লোর, চলাচল পথ ও লাশঘরের সামনেও!

এ সংকটের দরুণ তৎপর হয়েছে দালালচক্র। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের হয়ে দালালরা রোগীদের সদর হাসপাতাল থেকে অন্য বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। গত ফেব্রুয়ারিতেও ৯ জন দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।

পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। তীব্র শীত থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শিশুরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের টয়লেট ও আশপাশের জায়গায় নোংরা পরিবেশ থাকায় ঠিকমত থাকা যাচ্ছেনা। দ্রুত এসব বিষয় সমাধান করার দাবি জানান সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনেরা।

সদর হাসপাতালে কর্মরত একজন চিকিৎসক বলেন, “ঠান্ডাজনিত কারনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি সামনে আরো বাড়ার আশংকা করছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তারপরও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি, সাধ্যমতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।”

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মাসে সদর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার ২শত ৯৩জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সদর হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত জনবলের সংখ্যা ১৫৪জন। আছে ১০৪জন। দীর্ঘদিন ধরে গাইনি, নাক-কান গলা ও চক্ষু এবৎ সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক পদ খালি থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আজ বিশ্ব এইডস দিবস, এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ

Sun Dec 1 , 2024
রবিবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এ উপলক্ষে দেশের এইডস সংক্রান্ত নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্ব এইডস দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে’। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সূত্রে অনুযায়ী দেশে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo