৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ জানুয়ারি। বর্তমানে দেশের সাতটি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিশেষ কোনো কারণে এদিন সম্ভব না হলে আগামী ২২ জানুয়ারি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। আগামী সপ্তাহে পিএসসির কমিশন সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। পিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি আমরা ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করছি। শিগগিরই এ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর কেন্দ্রে একযোগে ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে সারা দেশের পরীক্ষাকেন্দ্র ও পরিদর্শকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এর পুরো প্রস্তুতি শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চালানো হচ্ছে।
পিএসসি ৩৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে গত ১ নভেম্বর। এতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয় ৮ হাজার ৫২৩ জনকে। এদের মধ্যে মোট ১ হাজার ২২৬ জন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন। বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এতে অংশগ্রহণ করেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন চাকরিপ্রার্থী। এ হিসাবে প্রতি পদের জন্য মোট আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৯ জনে।
পিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে শেষ করার চেষ্টা থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা সফল হচ্ছে না। পরীক্ষাটি আয়োজনের জন্য পিএসসির নিজস্ব পরীক্ষার হলের সংকট রয়েছে। পিএসসির নিজস্ব ভবনের পরীক্ষা হলে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব। ফলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের হলরুম বরাদ্দ নিতে হচ্ছে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নও স্বল্প সময়েই শেষ করা যায়। কিন্তু ওএমআর মেশিনে খাতা মূল্যায়নের পর আবার তা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নিরীক্ষণ করতে গিয়ে সময় বেশি লেগে যায়। একই সঙ্গে বিপত্তি বাধে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে। কারণ এ খাতার সবই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৪তম বিসিএসের নিয়োগে গেজেট প্রকাশের পর বর্তমানে ৩৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। আর নন-ক্যাডারদের নিয়োগ কার্যক্রমও শুরু করেছে পিএসসি। বর্তমানে চলছে বিভিন্ন কোটায় ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া। সব মিলিয়ে এ কার্যক্রম শেষ করতে সময় লেগে যেতে পারে আরো মাস দুয়েক।
পিএসসির এ সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে ড. সাদিক জানান, একই সঙ্গে গেজেটেড, নন-গেজেটেড কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে আমাদের। পাশাপাশি রয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্যান্য চাকরির পরীক্ষাও। খাতা মূল্যায়নের জন্য বিপুল সংখ্যক নিরীক্ষকের প্রয়োজন পড়ে। এসব নিরীক্ষককে আবার যথাযোগ্য সম্মানীও দেয়া যায় না। তবে সব জটিলতা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির প্রতিটি পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করতে।
নিয়মিত অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি ৩৬তম বিসিএসের বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে পিএসসির জটিলতা কাটছে না। ২ হাজার ১৮০ জন গেজেটেড কর্মকর্তার বিপরীতে গত ৮ জানুয়ারি ২ লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন চাকরিপ্রার্থী ৩৬তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন, যার ফল প্রকাশ করা হয় ১০ ফেব্রুয়ারি। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৩০ জন। বর্তমানে এদের সবার পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কাজ চলছে। আর ফল প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্তও এখনো নেয়া হয়নি। সাধারণত কোনো ব্যাচের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরই পরবর্তী ব্যাচের পরীক্ষা শুরু হয়। তবে এ বছর সে ধারাবাহিকতা না-ও থাকতে পারে। কারণ ৩৭তম ব্যাচের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগেই ৩৬তমের লিখিত পরীক্ষার ফল ঘোষণার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে গেছে। কবে ঘোষণা করা হবে, তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।