প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার
১৮৪৫ সালের পূর্বে সার্জারি বা শল্য চিকিৎসার কোনো উন্নতি সম্ভবপর হয়নি। সেই সময়ে প্রথম অ্যানেস্থেসিয়া (Anesthesia) আবিষ্কার হয়। এর আগে যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচার খুব কঠিন ছিলো। মাথা বা পেটের ভিতর কোনো ধরণের অস্ত্রোপচার কল্পনাও করা যেত না এবং তাই মাথা ও পেটের অংশের জায়গাগুলোকে বলা হতো “No Go Area”।
অন্যান্য অস্ত্রোপচারগুলোর প্রক্রিয়াও ছিলো খুবই বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। বিখ্যাত সার্জন ‘লিস্টন’ মুত্রাশয়ের পাথরে আক্রান্ত এক রোগীর অপারেশন করছিলেন। অপারেশনের এক পর্যায়ে রোগী ডাক্তারের সহকর্মীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে নিকটস্থ শৌচাগারে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে বহু কষ্টে রোগীকে বের করে অপারেশন করা হয়।
অ্যানেস্থেসিয়া (Anesthesia):
অ্যানেস্থেসিয়া (Anesthesia)(গ্রীক শব্দ “সংবেদনহীন”) এমন একটি অবস্থা, যা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একজন রোগীকে অস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অজ্ঞান (অবেদন) করা হয়। এতে অ্যানালজেসিয়া (ব্যথা থেকে প্রতিরোধ), প্যারালাইসিস (পেশী শিথিলকরণ), অ্যামনেসিয়া (স্মৃতি হ্রাস), আনকনসাসনেস (সংজ্ঞাহীনতা/অসাড়তা) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অ্যানেসথেটিক ওষুধের প্রভাবের অধীনে একটি রোগী অ্যানেসথেটাইজ(সংবেদনহীন) হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীকে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। অন্যথায় রোগীকে গুরুতর বা অসহিষ্ণু ব্যথা সৃষ্টি হয় বা রোগী শারীরিকভাবে অযোগ্য হতে পারে।
অ্যানেস্থেসিয়া (Anesthesia)/ অবেদনের তিনটি বিস্তৃত বিভাগ বিদ্যমান:
১। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া (GA): এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে এর ক্রিয়াকলাপকে দমন করে ফলে রোগী অজ্ঞানতা এবং সংবেদনহীনতা অনুভব করে। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া গ্রহণকারী একজন রোগী ইনট্রাভেনাস(শিরায়), ইনহ্যালেশন (শ্বাসগ্রহণ)-এর মাধ্যমে অ্যানেস্থেসিয়া গ্রহণ করে চেতনা হারাতে পারে।
২। সিডেশন (Sedation): কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র একটি স্বল্প মাত্রায় দমন করে, অচেতনতা ফলে অস্থিরতা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি উভয় উদ্ঘাটন বাঁধা দেয়।
৩। রিজিওনাল ও লোকাল: রিজিওনাল(আঞ্চলিক) এবং লোকাল(স্থানীয়) অবেদন, যা শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে স্নায়ু(impulses) সংক্রমণ ব্লক করে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, এটি এককভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে (রোগী সচেতন থাকে), অথবা জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া(GA) বা সিডেশন(sedation)-এর সঙ্গে সংমিশ্রণ করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঔষধগুলি পেরিফেরাল স্নায়ুতে কেবলমাত্র শরীরের একটি বিচ্ছিন্ন অংশটিকে অবেদন করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন দাঁতের কাজ করার জন্য বা সমগ্র অঙ্গে সংবেদনকে রোধ করতে নার্ভ ব্লক করা। বিকল্পভাবে, এপিডুরাল(epidural), স্পাইনাল(মেরুদণ্ড) অবেদন যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এককভাবে বা যৌথভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে সঞ্চালিত হতে পারে, ব্লক এলাকার বাইরে বিভিন্ন স্নায়ু থেকে সব ইনকামিং সেনসেশন(sensation-সংবেদন) দমন করে।
অ্যানেস্থেসিয়া আবিষ্কার :
দিনটি ছিলো ১৮৪৬ সালের ১৬ই অক্টোবর। শুধু শল্য চিকিৎসা , দিনটি ছিলো চিকিৎসা শাস্ত্র এবং মানবজাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিন ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে ডা. উইলিয়াম টি.জি. মর্টন প্রথম ইথার অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে সফলতা অর্জন করেন। ডা. উইলিয়াম তার রোগী মিঃ এডওয়ার্ড গিলবার্ট অ্যাবোট- এর অপারেশনের সময় এই পদ্ধতি প্রথম প্রয়োগ করেন। ডা. অলিভার ওয়েনডেল হোমস প্রথম ডা. উইলিয়ামকে অ্যানেস্থেসিয়া (Anesthesia) শব্দটি ও যাবতীয় সম্পর্কে চিঠির মাধ্যমে অবগত করেন। এরপর ১৯ ডিসেম্বর, ১৮৪৬ সালে ডা. জেমস রবিনসন এই ইথার অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করে একজন রোগীর দাঁতের চিকিৎসা করেন। ডা. রবিনসনই ১৮৪৭ সালে অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে সর্বপ্রথম বই -“A Treatise on the Inhalation of the Vapour of Ether, for the Prevention of Pain in Surgical Operations”। এ আবিস্কারের পর ব্যথা ছাড়াই বড় বড় সার্জিকাল অপারেশনগুলো সফল করার দিকে এগিয়ে যান চিকিৎসকরা। এরপর থেকেই সম্ভব হতে থাকে অসাধারণ সব অপারেশন।চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে এই দিনটি তাই অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটি, ১৬ই অক্টোবর, তাই এখন ‘বিশ্ব অ্যানেস্থেসিয়া দিবস’ হিসেবে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। ১৫০ টির অধিক দেশে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের ১৩৪টির বেশি সংগঠন এই দিনটি উদযাপনে অংশগ্রহণ করেন।