২০ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান স্যারের সাথে প্ল্যাটফর্মের আলাপচারিতায় উঠে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের গৌরবময় ইতিহাস। উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান স্যার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মকর্তা শিক্ষার্থী সহ সকলকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। প্ল্যাটফর্মের পাঠকদে জন্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান স্যারের স্বাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষের সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সম্পর্কিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হলো।
“চিকিৎসকদের এবং মেডিকেল শিক্ষকদের একটা প্রায় তিন দশকের দাবী ছিল দেশে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য। ঊনসত্তরের যে গণআন্দোলন ১১ দফার ভিত্তিতে হয়েছিল সেখানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের(১নং দফার ঝ) কথা উল্লেখ করা ছিল। পরবর্তীতে অনেক সরকার এসেছে, অনেক সরকার কথা দিয়েছে, কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। ১৯৯৭ সনে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় এলেন, তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে। তো ঐ সময় আমার সৌভাগ্য ছিল তৎকালীন আইপিজিএমআর এর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করার। আমরা আইপিজিএমআর এর শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের একটি আবেদন করলাম ২৪ জুলাই ১৯৯৭। সেখানে আমাদের প্রস্তাবটি ছিল, আইপিজিএমআর কে রূপান্তরিত বা উন্নীত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামটি আমারই প্রস্তাব করা এবং এখানে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছিল কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটিকে কেন খণ্ডিত করা হলো। তবে পরবর্তীতে এ নামটিই গৃহীত হয় সে আলোচনায় আজকে আমি আর যাচ্ছি না।
বিস্ময়কর ব্যাপার ২৪ জুলাই ১৯৯৭তে আমরা তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব জনাব মোঃ আলী সাহেবের কাছে আমরা আবেদনটি দিয়ে আসলাম, ১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি আদেশটি জারী করা হলো মাত্র সাত দিনের মাথায়। আমাদের জন্য যা খুব আনন্দের ছিল। তৎকালীন সময় বিএমএর পক্ষ থেকে আমরা একটি খসড়া “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯৮” জমা দেয়া হয়। সে খসড়া আইন প্রণয়নকারী দলের সদস্যের একজন আমিও ছিলাম। পরবর্তী সময় ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর আমরা সবাই মিলে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি, প্রোবিধি এ সমস্ত বিষয়গুলো প্রস্তুত করি।
২০০১ এর পরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর এক বড় ধরনের আঘাত আসে। রাজনৈতিকভাবে আবার বিশ্ববিদ্যালয়কে আইপিজিএমআর করা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার তৎকালীন সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গিয়েছিল। তখন আবার আমাদেরকে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়। সেখানে মিডিয়া এবং সাংবাদিক বন্ধুরা প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছে। তখন ৩-৪ মাস টানা আন্দোলনের পর আমরা এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় মানে হচ্ছে ছাত্রদের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে হিসেবে যেহেতু এখানে কেবল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্সই আমরা পড়াই, বা মেডিকেল কোর্সের ছাত্ররা ভর্তি হয়, ছাত্রদের কেন্দ্র করেই কিন্তু আমাদের সব কিছু। হাসপাতালকে আমরা সব সময় বলি, মেডিকেল শিক্ষার একটি ল্যাবরেটরি। সে হিসেবে ছাত্র-রোগী-শিক্ষক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষাদানকে কেন্দ্র করে আমরা সব কিছু নতুন করে ভাবার চেষ্টা করছি।
সকলের জানা উচিত বিএমএ থেকে একটি দাবী অনেক আগে থেকে করেছিলাম যে, দেশের সকল মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্বশাসন, তারই অংশ হিসেবে ছিল একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এবং দেশের সকল মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এর অধীনে হবে। কিন্তু আমরা সবগুলো পাইনি কেবল একটি আইপিজিএমআরকে স্বায়ত্বশাসন পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামে। পরবর্তী সময়ে আমরা যেটা দেখেছি, স্বায়ত্বশাসন পেলে একটি প্রতিষ্ঠান যে কতটা বিকশিত হতে পারে, কতটা উন্নত হতে পারে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেটি একটি উদাহরণ। আমরা স্বায়ত্বশাসন একারণে চেয়েছিলাম যে, এখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে মেডিকেল শিক্ষা কিন্তু ত্রয়ী প্রশাসনের মধ্যে আছে। বিএমডিসি তাঁরা কোর্স কারিকুলাম করছে, মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে পরীক্ষকদের নিয়োগ বদলী করে, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁরা পরীক্ষা নিয়ে সনদ দিচ্ছে। সে হিসেবে ত্রয়ী প্রশাসনের থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য আমরা স্বায়ত্বশাসন দাবী করেছিলাম। আজকে বাকি মেডিকেল কলেজগুলো একই ভাবে রয়ে গেছে। আমাদের আইনে কিন্তু লেখা আছে বা আমাদের দাবীতেও ছিল, সকল মেডিকেল শিক্ষা প্রশাসনের স্বায়ত্বশাসন চাই। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ সালে যখন আমাদের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলো, আমরা আমাদের মত করে আইন করেছি, এখানে আমাদের সকল সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি। আজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটা গৌরবের জায়গায় গেছে, আমাদের স্বায়ত্বশাসন আছে বলেই।”
(চলবে)
অনুলিখন ও সম্পাদনাঃ ডাঃ মোঃ মহিবুর হোসেন নীরব,
সম্পাদক, প্ল্যাটফর্ম।
চিত্র ও শব্দগ্রহণ ও সম্পাদনাঃ এস এম নিয়াজ মোর্শেদ,
এডমিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্ল্যাটফর্ম।
বনফুল রায়,
এডমিন, ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
স্বাক্ষাতকারগ্রহণ টিমঃ
ডাঃ নাহিদ উল হক,
সহকারী অধ্যাপক, ডায়াবেটিক এ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
ডাঃ সেলিম শাহেদ,
প্রভাষক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর,
উপদেষ্টা, প্ল্যাটফর্ম।
ডাঃ মোঃ নুরুল হুদা খান,
মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,
উপদেষ্টা, প্ল্যাটফর্ম।
ডাঃ মোঃ মুরাদ মোল্লা,
উপদেষ্টা, প্ল্যাটফর্ম।
ডাঃ মারুফুর রহমান অপু,
মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,
ফাউন্ডিং মেম্বার ও সহসম্পাদক, প্ল্যাটফর্ম।
ডাঃ আহমেদুর রহমান সবুজ,
মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।