২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ৭০০ এর অধিক প্রাইভেট মেডিকেল শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত!

3

দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় গত আড়াই বছর ধরে মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে আছে!

ভবিষ্যতে ভাল ডাক্তার হওয়ার দু’চোখে ভরা স্বপ্ন নিয়ে এ সকল শিক্ষার্থীরা লাখ লাখ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে (২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে) ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তারা কল্পনাও করতে পারেননি তাদের মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে নিয়ন্ত্রণকারী তিন সংস্থা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কেউই স্বীকৃতি দেবে না। আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদালয় থেকে শিক্ষার্থী রেজিষ্ট্রেশন না পাওয়ায় তাদের কেউই মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সুবিচারের আশায় এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এখন আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বুধবার এসব শিক্ষার্থীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনকালে শিক্ষার্থীদের অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমরাতো কোন অপরাধ করিনি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেখে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ভর্তি হয়েছি। আমরা সুবিচার চাই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ওই শিক্ষাবর্ষে ভর্তিযোগ্য হতে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যুনতম ১২০ পাওয়ার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের নির্দেশনা অমান্য করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ভর্তি পরীক্ষায় ১১০ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেছিল।

প্রচলিত নিয়মানুসারে সরকারি বেসরকারি উভয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা ২০০ নম্বরে হয়ে থাকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা প্রাপ্ত নম্বর থেকে শতকরা ৪০ ও ৬০ ভাগ নম্বর নিয়ে মোট ১০০ নম্বর হিসাব করা হয়। অবশিষ্ট ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) অর্থ সম্পাদক ইকরাম বিজু জানান, ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমে ১২০ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১০ নম্বরে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দিয়েছিল। ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকার গ্রাউন্ড দেখিয়ে বিপিএমসিএ’র পক্ষ থেকে ইকরাম বিজু বাদি হয়ে ১১০ নম্বরে ভর্তির নির্দেশ বহাল রাখার আবেদন জানিয়ে ওই সময় বিচারপতি কাজি রেজাউল হোসেন ও এবিএম আলতাফ হোসেনের দ্বৈত বেঞ্চ আদালতে রিট করেন। পরে আদালত ১১০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির পক্ষে রায় দেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. খন্দকার মো: সিফায়েত উল্ল্যাহ বলেন, বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভর্তির বেঁধে দেয়া সময় পার হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করে। আদালতে প্রকৃত তথ্য গোপন করে রিট করে রায় পেয়ে তারা ওই সকল শিক্ষার্থীদের অবৈধভাবে ভর্তি করেছিল বলে তিনি ওই সময় জানিয়েছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাল্টা রিট করা হয়। রিট পাল্টা রিট এভাবেই চলছে গত আড়াইটি বছর। শিক্ষার্থী নামে মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করলেও এখনও শিক্ষার্থী হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজিষ্ট্রেশন পায়নি।

বহু অভিভাবক অনেক টাকা ভর্তি ফি দিয়ে তাদের সন্তানদের প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করান। এমন একজন অভিভাবক বলেন, পেনশনের টাকা ভাঙ্গিয়ে মেয়ের ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে পূরণ করাতে ভর্তি করেছিলাম। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তি করেছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে মেয়েকে চিরতরে হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, যখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছিল তখন মন্ত্রণালয়ের লোকজন কোথায় ছিলেন। অনিয়ম করলে দায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কিন্তু এর দায়ভার কেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

3 thoughts on “২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ৭০০ এর অধিক প্রাইভেট মেডিকেল শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত!

  1. যারা ভর্তি হয়েছিলেন,তাদেরও যাচাই করা উচিৎ ছিলো,কারণ এই বিষয়টা নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক চলছিলো

    1. মনে করেন,২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে কোন মেডিকেল কে বিএমডিসি অনুমোদন দিল।আবার পরের বছর অনুমোদন বাতিল করল।এখন কি যে শিক্ষাবর্ষে অনুমোদন ছিল,ওই শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা কি তাহলে পরবর্তে ডাক্তার বলে স্বীকৃতী পাবে।যদি কেউ জেনে থাকেন,দয়া করে উত্তর দিলে উপকার হত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

Jobs at Johns Hopkins University

Thu Jun 11 , 2015
Study Physician Johns Hopkins University Bangladesh Office Job Description / Responsibility Monitor study activities at different MOHFW facilities selected by the project. Organize training and capacity building activities for the project staff and MOHFW staff. Supervise a team of data collectors in collaboration with Field Research Officer and provide technical […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo