২০৫০ সাল নাগাদ স্থূলতায় ভুগবে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক

শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫

বিগত কয়েক দশক ধরেই বিশ্বে অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা মুটিয়ে যাওয়া ও স্থূলতা। আগামী কয়েক দশকে এই সমস্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। তাদের ভাষ্য, বিশ্বব্যাপী ২০৫০ সালের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক এবং এক-তৃতীয়াংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার হবে। এই বিষয়টি অকালমৃত্যু, নানা রোগব্যাধি এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে।

প্রতীকী ছবি

সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত তিন দশকে স্থূলতা সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক ব্যর্থতার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়েছে।

গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ২১১ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪৯ কোটি ৩০ লাখ শিশু ও কিশোর-কিশোরী অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা যথাক্রমে ছিল ৭৩ কোটি ১০ লাখ এবং ১৯ কোটি ৮০ লাখ।

প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি (৩৮০ কোটি) এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের মতো (৭৪ কোটি ৬০ লাখ) এই সমস্যায় আক্রান্ত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

স্থূলতা সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দেশভেদে ভিন্ন হলেও, বিশ্বের মোট অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল ব্যক্তিদের অর্ধেকের বেশি মাত্র আটটি দেশে বসবাস করে। দেশগুলো হলো—চীন (৪০ কোটি ২০ লাখ), ভারত (১৮ কোটি), যুক্তরাষ্ট্র (১৭ কোটি ২০ লাখ), ব্রাজিল (৮ কোটি ৮০ লাখ), রাশিয়া (৭ কোটি ১০ লাখ), মেক্সিকো (৫ কোটি ৮ লাখ), ইন্দোনেশিয়া (৫ কোটি ২০ লাখ) এবং মিসর (৪ কোটি ১০ লাখ)।

বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে স্থূল শিশু ও কিশোরদের এক-তৃতীয়াংশের মতো (১৩ কোটি) উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে বসবাস করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, আগের প্রজন্মের তুলনায় বর্তমান শিশুরা দ্রুত ওজন বাড়াচ্ছে এবং আগেভাগেই স্থূলতার শিকার হচ্ছে, যা তাদের কম বয়সেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

বিশেষ করে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে স্থূলতা ১২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে ৩৬ কোটি শিশু ও কিশোর-কিশোরী স্থূলতায় আক্রান্ত হবে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়ে গবেষণার প্রধান লেখক ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধ্যাপক এমমানুয়েলা গাকিডু বলেছেন, ‘অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার নজিরবিহীন বৈশ্বিক মহামারি এক গভীর মানবিক বিপর্যয় এবং সমাজের চূড়ান্ত ব্যর্থতার প্রতিফলন।’

স্থূলতা সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দেশভেদে ভিন্ন হলেও, বিশ্বের মোট অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল ব্যক্তিদের অর্ধেকের বেশি মাত্র আটটি দেশে বসবাস করে। দেশগুলো হলো—চীন (৪০ কোটি ২০ লাখ), ভারত (১৮ কোটি), যুক্তরাষ্ট্র (১৭ কোটি ২০ লাখ), ব্রাজিল (৮ কোটি ৮০ লাখ), রাশিয়া (৭ কোটি ১০ লাখ), মেক্সিকো (৫ কোটি ৮ লাখ), ইন্দোনেশিয়া (৫ কোটি ২০ লাখ) এবং মিসর (৪ কোটি ১০ লাখ)।

বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে স্থূল শিশু ও কিশোরদের এক-তৃতীয়াংশের মতো (১৩ কোটি) উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে বসবাস করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, আগের প্রজন্মের তুলনায় বর্তমান শিশুরা দ্রুত ওজন বাড়াচ্ছে এবং আগেভাগেই স্থূলতার শিকার হচ্ছে, যা তাদের কম বয়সেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশগুলোতে ১৯৬০-এর দশকে জন্ম নেওয়া পুরুষদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ ব্যক্তি ২৫ বছর বয়সে স্থূল ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে জন্ম নেওয়া পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশে এবং ২০১৫ সালে জন্ম নেওয়া পুরুষদের মধ্যে এটি ২৫ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০৫০ সালে বিশ্বের স্থূল প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী হবে, যা এরই মধ্যে চাপের মুখে থাকা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলবে এবং নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর জন্য মারাত্মক সংকট তৈরি করবে।

এদিকে, গতকাল সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব স্থূলতা ফেডারেশনের আরেকটি গবেষণা বিশেষভাবে দরিদ্র দেশগুলোর ওপর স্থূলতার প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘উচ্চ বিএমআই (বডি ম্যাস ইনডেক্স)-এর কারণে অকালমৃত্যুর সর্বাধিক সংখ্যা নিম্ন-মধ্যম ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটছে, যা সেখানে চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার ইঙ্গিত দেয়।’

বিশ্ব স্থূলতা ফোরামের প্রধান নির্বাহী জোহানা রালস্টন বলেন, ‘স্থূলতার স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে, যা নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর জন্য আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।’

ল্যানসেট গবেষণার বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন, তারা সর্বোত্তম প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করলেও পূর্বাভাস কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। উদীয়মান নতুন হস্তক্ষেপ—যেমন ওজন কমানোর ওষুধের সম্ভাব্য প্রভাব, এই বিশ্লেষণে বিবেচনা করা হয়নি।

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থোরকিল্ড সোরেনসেন এই বিষয়ে লিখেছেন, স্থূলতা সংকট এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, এখন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা অপরিহার্য।

প্ল্যাটফর্ম/

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আগামীকাল থেকে তিনদিনের কর্মবিরতি ঘোষণা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের

Fri Mar 7 , 2025
শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫ দুই দফা দাবিতে আগামীকাল (শনিবার) থেকে তিনদিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের ব্যানারে এ ঘোষণা দেয়া হয়। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে টানা তিনদিন দুই ঘণ্টা করে চলবে এই কর্মসূচি। আজ (৭ মার্চ) ফোরামের পক্ষে ডা. মোহাম্মদ আল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo