৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ মাস পর্যন্ত গর্ভকালীন সময়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও পরামর্শ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার

অধ্যাপক ডা. ফাতেমা আশরাফ
বিভাগীয় প্রধান (অবস্ ও গাইনী)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

২য় ৩ মাস অর্থাৎ ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ মাস পর্যন্ত গর্ভকালীন সময়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও পরামর্শঃ

সাধারণত ৩ মাস পার হলেই বমি ভাব, মাথাঘোরা, বমি হওয়া ইত্যাদি প্রথম দিককার সমস্যাগুলি ক্রমাগত কমে আসে। মা খাবার-দাবারের দিক থেকে কিছুটা স্বাস্তি বোধ করেন। এই সময়ে গর্ভের বাচ্চাটি ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

২য় ৩ মাসের স্বাভাবিক সমস্যাগুলি কি কি?

১. জরায়ুর বৃদ্ধির কারণে তলপেটে কিছুটা অনুভূত হয় এবং তলপেট আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।জরায়ুর মধ্যে বাচ্চাটি বৃদ্ধির সাথে সাথে অল্প অল্প পেট ব্যথা হতে পারে।

২. স্তনে দুধ আসতে পারে।

৩. সাধারণতঃ ২০-২২ সপ্তাহের দিক থেকে পেটের ভিতরে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হয়। বাচ্চার নড়াচড়ার সময় মা কিছুটা ব্যথা অনুভব করতে পারেন।

৪. এই সময়ে কিছুটা পায়খানা কিছুটা কষা হতে পারে। প্রেগনেন্সি হরমোন বা বিশেষ ধরণের রস বৃদ্ধির কারণে পেটের নাড়ির নড়াচড়া কমে যায়, ফলে পায়খানার বেগ অনুভূত হয় না। একই সাথে পানি বা পানিজাতীয় খাবার কম খেলে অথবা নিয়মিত পায়খানা না করার অভ্যাসের কারণেও পায়খানা কষা হতে পারে। কষা পায়খানা থাকলে অথবা নিয়মিত বাথরুম না হলে, তলপেটের ডান বা বাম দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

২য় ৩ মাস এর স্বাভাবিক সমস্যার জন্য করণীয়ঃ

১. সাধারণ সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং মেনে নিতে হবে।

২. পায়খানা নরম রাখার জন্য বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি, ফল, পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে।

২য় ৩ মাসে মা কি কি জটিলতার শিকার হতে পারেন?

১. পেটে ব্যথা- এই সময় থেমে থেমে পেটে বেশী ব্যথা অনুভূত হলে বা একই সঙ্গে মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ হলে তা গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে।

২. প্রস্রাবে ইনফেকশন- ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে যদি জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবের সময় তলপেটে ব্যথা বা কোমরের পিছন দিকে ব্যথা অনুভূত হয়, তা প্রস্রাবের ইনফেকশন জনিত কারণে হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একই সাথে কাঁপুনি সহকারে জ্বরও আসতে পারে।

৩. রক্তক্ষরণ- গর্ভফুল নিচে থাকার কারণে এই সময়ে মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। রক্তক্ষরণের পরিমাণ অল্প হলেও সতর্ক থাকতে হবে।

৪. গর্ভের বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি- এই সময় থেকে লক্ষ্য রাখতে হবে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি যথাযথভাবে হচ্ছে কি না। মা যদি লক্ষ্য করেন তার তলপেট বড় না হয়ে একই জায়গায় থেমে আছে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সাধারণত এই সময়ে বাচ্চার সঠিক বেড়ে ওঠার বিষয়টি আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

৫. অন্যান্য ইনফেকশন- মায়ের শরীরে যে কোন ধরণের ইনফেকশনের সংক্রমণ হতে পারে। যেমনঃ প্রস্রাবে ইনফেকশন, শ্বাসনালী, দাতঁ বা শরীরের অন্য যে কোন স্থানে ইনফেকশন।

৬. বিশেষ সমস্যা- কারো কারো ক্ষেত্রে এই সময় থেকে কতগুলি অসুস্থতা নতুন করে দেখা দিতে পারে। যেমনঃ গর্ভজনিত ডায়বেটিস বা Gestational Diabetes Mellitus (GDM), গর্ভজনিত প্রেসার বা pregnancy induced hypertension (PIH), থাইরয়েড হরমোন জনিত সমস্যা ইত্যাদি।

গর্ভের ২য় ৩ মাসে (2nd trimester) যে ভাবে চলবেনঃ

খাদ্য- ১. পুষ্টিকর খাবেন যার মধ্যে-

# শতকরা ৫০-৬০ ভাগ থাকবে শর্করা জাতীয় খাবার, যেমন- ডাল, রুটি, সুজি, আলু ইত্যাদি

# শতকরা ২০-২৫ ভাগ থাকবে আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন- মাছ, ডাল, দুধ ইত্যাদি

# শতকরা ২৫-৩০ ভাগ থাকবে সহজে হজম হয় এমন চর্বি জাতীয় খাদ্য, যেমনঃ দুধ, ডিম, রান্নায় আমরা যে তেল খাই ইত্যাদি

২. পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি, পানি জাতীয়, যেমনঃ ডাব, দুধ, দধি, ডিম, সবজি বা মাংস দিয়ে তৈরী স্যুপ ইত্যাদি।

৩. প্রতি বেলায় খাবারের একটি বড় অংশ থাকবে শাকসবজি। প্রতিদিন একই ধরণের শাকসবজি না খেয়ে মৌসুমি শাকসবজি পরিবর্তন করে গ্রহণ করবেন।

৪. ফলপ্রতি বেলায় কিছু না কিছু ফল খাবেন। টমেটো, আনারস, পেয়ারা, পেপে, বড়ই, কলা, তরমুজ, বাংগী প্রভৃতি নানা ফল আমাদের হাতের কাছেই আছে। আপনার খাদ্য তালিকায় যে কোন ২-৩ ধরণের ফল প্রতিদিন খাবেন এবং এক্ষেত্রেও পাল্টে পাল্টে খাবেন।

পোশাক- ঢিলে ঢালা সুতি পোশাক পরবেন। পেটিকোট বা পাজামার ফিতা শক্ত করে বাঁধবেন না।

বিশ্রাম- দিনে অন্তত ২ ঘন্টা বিশ্রাম করবেন এবং রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমাবেন।

ব্যায়াম- হালকা ব্যায়াম বা হাটা শরীরের জন্য উপকারী। দৈনন্দিন যে সব কাজ করে অভ্যস্ত, এই সময়ে মা সেই কাজগুলি করে যেতে পারবেন। ভারী কোন কাজ করবেন না এবং অনেক পরিশ্রম হয় এমন ব্যয়াম থেকে বিরত থাকুন।

সহবাস- ২য় ৩ মাসে স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকতে পারেন তবে যদি কারো গর্ভফুল নীচের দিকে থাকে অর্থাৎ জরায়ু মুখের দিকে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি থাকবে তা মনে রাখতে হবে।

গর্ভকালে ২য় ৩ মাসে সেবন যোগ্য ঔষধঃ

১. Tab. Carbonyl Iron

০ + ১ + ০ – চলবে

২. Tab. Calcium Carbonate (৫০০ mg)

১ + ০ + ১ ভরাপেটে – চলবে

অথবা,

Tab. Calcium Carbonate (500 mg) + Vit D3 (200 mg)

১ + ০ + ১ ভরাপেটে – চলবে

মনে রাখতে হবে ক্যালসিয়াম ওষুধ এর সাথে আয়রন খাওয়া চলবে না। সেক্ষেত্রে দুটি ওষুধ সেবনের মাঝে ১ – ২ ঘন্টা বিরতি থাকতে হবে।

৩. অন্যান্য ওষুধ প্রয়োজনে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী।

গর্ভবতী মায়েদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের বইটি ডাউনলোড করে নিনঃ

https://drive.google.com/file/d/1W9iMB3HlsdUvO_2POWIib6WlGtY_jVua/view?usp=drivesdk

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৩২ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৪৩৬ জন

Wed Sep 30 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১,৪৩৬ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩২ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ১,৭৮৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ৩,৬৩,৪৭৯ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৫,২৫১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ২,৭৫,৪৮৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo