১৭ এপ্রিল, ২০২০
ডাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ সিয়াম
হতদরিদ্র পরিবার থেকে মেধায় উঠে আসা ইমরুল (ছদ্মনাম) মেডিকেলের ছাত্রাবাসে থাকে। অপরিচিত খাবারের সাথে তার দেখা মিলে। এসব খাবার খেয়ে না খেয়েও লেখাপড়া ছাড়ে না। দরজায় টোকা পরে, মিছিলে যাওয়ার টোকা, নানা আয়োজন চাঁদার টোকা, বন্ধু-বান্ধবের জন্মদিন উইশের টোকা, কেকের টাকার টোকা। সে এগুলোর বাইরে থাকতে চায়। থাকেও, বেদনা সয়ে। যে শার্টটি পরিধান করে সে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলো সে শার্টটিতেই শেষ করে থার্ড ইয়ার ফোর্থ ইয়ার।
সে ডাক্তার হয়। ডে নাইট ডিউটি করে। এরপর বিয়ে, সন্তানের পিতা। সঠিক চিকিৎসা সেবার শপথ বাস্তবায়নে হাসপাতালের কাছে সে থাকতে চায়। রাত-বিরাতে, সময়-অসময়ে ফেরার ফলে বাসার মালিকেরা নাক ছিটকান। সে জন্যে সে একটা ফ্ল্যাট কিস্তিতে নেয়। খুব সাধারণ দিনযাপন করে, কিস্তি পরিশোধের জন্য। বাবা মায়ের খরচাদি, ঔষধের খরচের জন্য। দুটি সন্তান বড় হতে থাকে। খরচ বাড়ে রোজগারের তুলনায়। ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পার্টটাইম রোগী দেখে সেবা অথবা অর্থদৈন্যতার জন্য। তার দিন নেই, রাত নেই। সন্তানের সাথে আদর বিনিময় নেই তেমন।
১০০ কোটি বরাদ্দ হয়েছে। তাতে তাদের অংশ কতটুকু? অথচ করোনার জন্যইতো বরাদ্দ। প্রতিরোধ-মোকাবেলায় যারা সোচ্চার থাকছেন চব্বিশ ঘন্টা। মৃত ব্যক্তির মতো কাফনে মোড়ানো লাশ সেজে থাকছেন ডাক্তার। পিপিই নামক কাফন তারা অনেক আগে থেকেই পরিধান করছেন। যেটি আপনি এখন পরিধান করছেন ভয়ে। হয়তো বাপ দাদা আমলা, মন্ত্রী, মিনিস্টার, হওয়ার সুবাদে। হয়তো বরাদ্দকৃত কোন ডাক্তারেরটা বেলাইনে আপনার করে নিয়েছেন! ৭২৭৫০ কোটিতে ইমরুলরা কি আছে?
এখন ঢালাওভাবে ডাক্তারদের সুনাম আমরা গড়গড় করে বলছি। ভাবুনতো? যদি উন্নত চিকিৎসার নামে দেশের বাইরে যাওয়া যেতো তবে বাঙালি ডাক্তারদেরকে নিয়ে এভাবে বলতেন? গালিগালাজের তালিকাটা কি লম্বা করতেন না? সামান্যকিছু ডাক্তারের জন্য সকলকে একসারিতে রাখতেন না?
বেজন্মা সব! খুব সহজে আমরা বলে ফেলি। অল্পকিছু ডাক্তারের আচরণে নিজেও কড়াভাবে বলি। অথচ এই করোনা সময়ে তারা সেসবের জবাবই দিচ্ছেন যেন। অথবা সেবা দেয়ার অভ্যাসবশতই। শেষ ঠেকায় আমরা ডাক্তারদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত ফেরেশতা ভাবি, মানুষ বাঁচানোর ফেরেশতা। তাদের কথা মনে রাখুন, হে রাষ্ট্র, হে জনগণ, আপনারা কি শুনতে পাচ্ছেন?