প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের রোগী না পাওয়ায় ১২টি হাসপাতালে কোভিড-১৯ কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। দেশে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরের এপ্রিল মাসে বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চুক্তি অনুযায়ী এসব হাসপাতাল কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেবে। খরচ বহন করবে সরকার। তবে শুরু থেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যার তুলনায় রোগীর উপস্থিতি ছিল অনেক কম।
গত ২৭ অগাস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের নিকট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা একটি চিঠি পাঠান। সেখানে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তির প্রবণতা ক্রমান্বয়ে কমছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় কিছু হাসপাতাল রেখে বাকিগুলোর কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন। কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হাসপাতালগুলোর মধ্যে, ঢাকার পাঁচটি (ঢাকার হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতাল), চট্টগ্রামের ৬টি (চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বিআইটিআইটি, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ভাটিয়ারি ফিল্ড হাসপাতাল, চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টার) এবং সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন,
“এসব হাসপাতালে জনবল ও যন্ত্রপাতি অলস পড়ে থাকছে। এজন্য যন্ত্রপাতি ও লোকবল পুনর্বন্টন করছি। আমরা পুরো স্থাপনা উঠাচ্ছি না।”
বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দুই হাজারের বেশি শয্যার ওই হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। একদিন সেখানে ৩ জন রোগী ভর্তি ছিল। সেখানে ১৫০ জন চিকিৎসক, যন্ত্রপাতির খরচ, পানি- বিদ্যুৎ- গ্যাস মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বিল হচ্ছে। তাই এ ধরনের হাসপাতালগুলো বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা। সরকারি যেসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে, সেখানেও পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের ভর্তির জন্য বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি আরও বলেন, কিছু হাসপাতাল রাখতেই হবে। কারণ কখন বিপদ হবে তা তো আমরা জানি না। এজন্য সরকারি হাসপাতালগুলো রেখে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ইতোমধ্যে হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা পুরোপুরি এবং বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালের কার্যক্রম আংশিক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিছু রোগী থাকায় বাকিগুলো বন্ধ করতে কিছুটা সময় লাগবে। সব হাসপাতালেই অল্পবিস্তর রোগী আছে। তাদেরকে অন্যান্য হাসপাতালে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমরা রাখছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, “হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করা যাবে না। আবার যদি এটার সংক্রমণ শুরু হয়, তাহলে নতুন করে হাসপাতাল প্রস্তুত করতে সময় লাগবে। এজন্য সাবধানতা হিসেবে কয়েকটি হাসপাতাল আমরা রাখব।”
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকার ২১টি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৬ হাজার ১০৭টি শয্যার ১ হাজার ৮৯৪টিতে রোগী ছিল। শয্যা খালি পড়ে ছিল ৪ হাজার ২১৩টি। ৩০৭টি আইসিইউ শয্যার ১৯৫টিতে রোগী ভর্তি ছিল, খালি ছিল ১১২টি শয্যা। চট্টগ্রামের ৯টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৭৮২টি শয্যার ৬১২টিই খালি। রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭০টি শয্যায়। ৩৯টি আইসিইউ শয্যার ১৮টিতে রোগী ভর্তির বিপরীতে খালি থেকেছে ২১টি শয্যা।