১ ডিসেম্বর ২০১৯
গতকাল ছিল ৩০ নভেম্বর। ২০১২ সালের এদিনে ডা. সাজিয়া আফরিন ইভা (২৭) কে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলো ব্র্যাক আমতলি ক্লিনিকের কর্মী ফয়সাল। এরপর প্রতি বছরই এক বা একাধিক চিকিৎসক কর্মস্থলে হামলার স্বীকার হয়েছেন। ডা. মুরাদ, ডা. শর্মিষ্ঠা, ডা. শম্পা রাণী, ডা. পবিত্র কুমার কুন্ডু সহ আরও অনেকে।
ক্রমাগত চিকিৎসকদের উপর হামলা এবং নানা বঞ্চনার স্বীকার চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য দরকার ছিল একটি কমন প্লাটফর্মের।
২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মেডিকেল কমিউনিটির সবাইকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য প্লাটফর্ম ফোরামের যাত্রা শুরু হয়, যার অন্যতম লক্ষ্য ছিলো চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থলের দাবি নিয়ে অগ্রসর হওয়া।
ডা. সাজিয়া আফরিন ইভাকে হত্যার প্রতিবাদে নিরাপদ কর্মস্থলের দাবীতে প্লাটফর্মের উদ্যোগে বুয়েটে এমডি এমএস পরীক্ষা শেষে মানব বন্ধন ও গণসাক্ষর কর্মসূচী পালিত হয়। দু হাজারের অধিক সাক্ষরের সেই পিটিশন বিএমএ সহ অন্যান্য কর্তাব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিলো ডা. ইভার স্বরণে একটি ফান্ড গঠন করা হবে যা থেকে দরিদ্র চিকিৎসকদের চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা দেয়া হবে যদিও কালের পরিক্রমায় আর বাস্তবতার চপেটাঘাতে সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয় নি। কর্মস্থলে নিরাপত্তা কিংবা সহিংসতা এড়ানো ও সম্ভব হয়নি।
নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে আজ কর্মস্থলে ডাক্তার মার খেলে সাধারণ মানুষের মাঝে সাধারণত সহানুভূতি তৈরি হয় না। এর অনেক কারণের মাঝে অন্যতম হলো চিকিৎসাসেবার বাণিজ্যিকিকরণ ও কাজের চাপের কারণে চিকিৎসক ও রোগীর মাঝে তৈরি হওয়া যোজন যোজন দূরত্ব। আবার কর্মস্থলে শুধু যে চিকিৎসকই আক্রান্ত হন তা নয়, নার্স, প্যারামেডিক সহ অন্যরাও আক্রান্ত হন। চিকিৎসাসেবা একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, এখানে আলাদাভাবে চলার সুযোগ নেই। ফলে আমরা যদি সত্যিকার অর্থে আমাদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল চাই সেটাতে অন্যান্য চিকিৎসা পেশাজীবিদেরও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং অন্তর্ভূক্ত করতে হবে সাধারনণ মানুষকেও। একটি অনিরাপদ পরিবেশে একজন ভীত সন্ত্রস্থ, কাজের ভারে ন্যুব্জ নির্ঘুম চিকিৎসক সঠিকভাবে রোগীর চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হবেন অথচ তাকে যদি নিরাপদ কর্মস্থলে রেখে সুস্থ স্বাভাবিক কর্মঘণ্টায় প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দেয়া যায়, সেই ডাক্তার বান্দরবনের পাহাড় কিংবা কিশোরগঞ্জের দুর্গম চরেও কোয়ালিটি কেয়ার উপহার দিতে পারবেন। অনিরাপদ পরিবেশে একজন চিকিৎসক উপায় থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি না নিতে রোগী উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে রেফার করতে বাধ্য হবেন। তাই নিরাপদ চিকিৎসা কর্মস্থল শুধু চিকিৎসা পেশাজীবী না, রোগীর জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটি প্রচার করতে হবে।
যেহেতু প্লাটফর্ম তার জন্মলগ্ন থেকে চিকিৎসকদের অধিকার রক্ষা এবং চিকিৎসক ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে আসছে, তাই এদেশের মেডিকেল কমিউনিটির সবচেয়ে বড় সোশাল ফোরামে প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরকে নিরাপদ চিকিৎসা কর্মস্থল ও রোগী সুরক্ষা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব রাখা হলো।
ইতিমধ্যে প্লাটফর্মের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ব্যানার পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি হটলাইন নাম্বারের দাবি জানানো হয়েছে যেখানে জরুরী অবস্থায় ফোন করলে দ্রুত সাহায্য পাওয়া যাবে। বিএমএ ও স্বাচিপের কাছ থেকেও এ ধরনের সার্বক্ষনিক হটলাইন নাম্বার সহ ঘটনা পরবর্তী শারিরীক মানসিক ও আইনী সাহায্যের উদ্দেশ্যে সব রকম সহযোগীতা প্রয়োজন।
চিকিৎসক ও অন্যান্য সেবা কর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে। এর সুফল ভোগ করবে রোগীরাই। আমাদের প্রস্তাবনায় তাই ডা. ইভার মৃত্যুর স্বরণে দিবসটির প্রতি সম্মান জানাতে আসুন প্রস্তাবিত নিরাপদ চিকিৎসা কর্মস্থল ও রোগী সুরক্ষা দিবসের সাথে একাত্ন হই এবং এ লক্ষ্যে একসাথে কাজ করি।
কৃতজ্ঞতা: ডাঃ মারুফুর রহমান অপু
স্টাফ রিপোর্টার/ ফাহমিদা হক মিতি