‘রক্ত চাও রক্ত দিব, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ২৫০ শয্যা হাসপাতাল চালু করেই ছাড়বো’ এই স্লোগান, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালুর দাবীতে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘাটের দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। রোববার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষ ডা. কাজী হাবিবুর রহমান জানান, সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের আন্দোলন চলছে, চলবেই। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু না হওয়া পর্যন্ত তারা আর ক্লাসে ফিরে যাবে না।
সূত্র জানায়, রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল থেকেই মিছিল-স্লোাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে চলে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ‘এক দফা এক দাবী, হাসপাতাল কবে দিবি’, আমাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তালা ঝুলবে’, আমাদের ২৫০ শয্যার হাসপাতল দিন, আমরা দেশকে সুদক্ষ ডাক্তার দিব, স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করে। শিক্ষার্থীরা কলেজের সকল ভবনের প্রবেশ পথে তালা মেরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কলেজের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান, নাজমুল হাসান, আতিকুর রহমান, মিনাক কুমার বিশ্বাস, আলমগীর হোসেন, অরিন আক্তার, ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ব্রতীপমা বিপ্লব, আহসান হাবীব, নাফিজা ইতিশ, ২য় বর্ষের আজমুল হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হয়নি। ৩০ শয্যা নিয়ে শুধুমাত্র মেডিসিন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল কার্যক্রমের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালু হওয়া বাধ্যতামূলক। ক্লিনিক্যাল কার্যক্রমে এক্সপার্ট না হলে মানুুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কলেজ প্রশাসন আমাদের বার বার আশ্বস্ত করলেও ২৫০ শয্যা হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন পদক্ষেপও চোখে পড়ছে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালু না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস, আইটেম, কার্ড, টার্ম ও ওয়ার্ডসহ সকল কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, অনতিবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু না হলে তাদের অন্যত্র যেয়ে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হবে। এতে তাদের শিক্ষণ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তারা আরো বলেন, আন্দোলন করার জন্য আমরা এখানে আসিনি। আমরা পরিবারের স্বপ্ন নিয়ে ভালো ডাক্তার হওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না। রাষ্ট্র আমাদের ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না। ভালো করে না শিখলে আমাদের হাতুড়ি ডাক্তার বলবে। কিন্তু আমাদের পরিপূর্ণ শিক্ষার সুযোগ না দিয়ে হাতুড়ি ডাক্তার বানাচ্ছে রাষ্ট্র।
সমাবেশে আে
ন্দালনরত শিক্ষার্থীরা আরো জানান, কোন আশ্বাস দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের এক দফা এক দাবী হাসপাতাল চালু করে পরিপূর্ণ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।
সকাল ১০টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. অমল কুমার বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী আরিফ আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ। পরে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় যোগ দেন। এর আগে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন, ইমরান হোসেন জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষকরা আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলেন। কিন্তু আমরা তাদের আশ্বাসে আশ্বাস্থ হতে পারিনি। ফলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছি। তারা আরো বলেন, সোমবার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও পরে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। তবে পরীক্ষা ও হাসপাতালের কার্যক্রম আমাদের কর্মসূচির বাহিরে থাকবে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. কাজী হাবিবুর রহমান জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের প্রতিটি কর্মকান্ড জানানো হচ্ছে। তবে কোন সিদ্ধান্ত এখনও উচ্চ মহল থেকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর যাত্রা শুরু হয় মেডিকেল কলেজের। ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়। শহরের কাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে করা হয় অস্থায়ী প্রশাসনিক ভবন। গত ৪ এপ্রিল কলেজের ২৫০ শয্যা হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। এর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি পুর্ণাঙ্গ হাসপাতালের কার্যক্রম। এর ফলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের পাঁচটি ব্যাচে মোট ২০৮ শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন চরম অনিশ্চিয়াতা মধ্যে রয়েছে।
প্ল্যাটফর্মের জন্য সংবাদটি পাঠিয়েছেন, মোঃ এন হাসান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ।