ডেঙ্গুজ্বর প্রাণঘাতী মশকিবাহিত রোগ যা পৃথিবীর অর্ধেকসংখ্যক জনসংখ্যাকে সংক্রমিত করতে সক্ষম।
গত ১৫ই এপ্রিল, WHO (World Health Organization) কর্তৃক পৃথিবীর সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষেধক অফিসিয়ালি অনুমোদিত হয়।
ডেঙ্গুজ্বরের কোন চিকিৎসা নেই। এর ফলে প্রচন্ড মাথাব্যথা (সাধারণতঃ দু’চোখের মাঝে), মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, র্যাশ , রক্তপাত এবং এমনকি মৃত্যুও ঘটে। ডেঙ্গু ভাইরাস ১০ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। প্রতি বছরে, ১২০টির মতন দেশে (বিশেষত সাউথইস্ট এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকা) প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
Dengvaxia নামে পরিচিত এই ভ্যাক্সিনটি প্রায় ২০ বছরের রিসার্চের ( French-based Sanofi Pasteur) ফসল। চারটি দেশ- মেক্সিকো, ব্রাজিল, এল সালভাদোর এবং ফিলিপাইন এ ইতোমধ্যে ভ্যাক্সিনটি ব্যাবহারের লাইন্সেন্স দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবারের অফিশিয়াল অ্যানাউন্সমেন্টের পর উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ভ্যাক্সিনটি ব্যাবহার করা হবে।
Dengue Vaccine Initiative এর পরিচালক Dr. In-Kyu Yoon বলেন, “যেসব দেশগুলোতে ডেঙ্গুর আঞ্চলিক বিস্তার রয়েছে, সেই দেশগুলোর জন্য ডেঙ্গু মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এবং খুব দ্রুত তা সমগ্র দেশব্যাপি বিস্তার ঘটাবে” (In countries where dengue is endemic, it’s one of the most feared diseases. The trajectory globally is increasing—at this point it’s essentially a pandemic. )
ভ্যাক্সিনটি এক বছরে সুনির্দিষ্ট সময় ব্যাবধানে তিনটি ইনজেকশনে করে দেওয়া হয়।
Clinical research and development (Sanofi’s division, Thailand) এর সহকারী উপরাষ্ট্রপতি Dr. Alain Bouckanooge এর মতে, এই ভ্যাক্সিনটি বানানো হয়েছে, ৯ বছরের বেশী বয়সীদের জন্যে যারা আগেও এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন অথবা এন্ডেমিক এলাকাগুলোতে বসবাস করছেন। বিগত কয়েক বছরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে, ভ্যাক্সিনটি সাউথইস্ট এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে পূর্বে ডেঙ্গুজ্বরে সংক্রামিতদের উপর ৭০% এবং হস্পিটালাইজডদের উপর ৯০-৯৫% কার্যকর।
ডেঙ্গু ভাইরাসটি খুবই জটিল হবার কারনে সাইনটিষ্টদের এত সময় লেগেছে এটাকে উন্নত করতে। পোলিও এবং স্মলপক্সের মতন মারাত্মক রোগের থেকেও এর প্রজাতির সংখ্যা বেশি(৪টা)। যদি একটির বেশী প্রজাতি দ্বারা কোন মানুষ আক্রান্ত হয় তবে তার হস্পিটালাইজড অথবা মৃত্যুর আশংকা বেড়ে যায়।
Yoon এর মতে, “একটি সফল ভ্যাক্সিন হলেও রাতারাতি ডেঙ্গুকে দূর করা সম্ভব না। Sanofi’র প্রোডাক্ট উৎপাদনেও সীমাবদ্ধতা আছে। কোম্পানি পাঁচ বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন চাহিদার প্রেক্ষিতে, প্রায় ১০০ মিলিয়নের মত ভ্যাক্সিন বানাতে সক্ষম। তাই এখানে উৎপাদন এবং সাপ্লাই এর কিছু ব্যাপার রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে আমাদের একটার বেশী ভ্যাক্সিন এবং আরো ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি প্রয়োজন”।
Dengvaxia’র কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে- মাথাব্যাথা, ক্লান্ত হয়ে পরা এবং অল্পমাত্রায় জ্বর।
ভ্যাক্সিনটি বাস্তবায়ন নির্ভর করছে স্বতন্ত্র সরকারের উপর। WHO বিভিন্ন দেশে ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামের কথা বলেছে এবং WHO’র Initiative for Vaccine Research এর সিনিওর অ্যাডভাইসর Joachim Hombach বলেছেন, “অবশ্যই ভ্যাক্সিনটি কিনতে হবে এবং এর দামও অনেক। কোম্পানির সাথে কমিটমেন্টে যেতে হবে, মাঝপথে টাকা নেই বলে সরে আসা যাবেনা”।
Source- Times