লিখেছেন ঃ ডাঃ মনির হোসেন মুরাদ
বিটিভিতে শিশুকিশোরদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ডা: প্রাণ গোপাল দত্ত স্যারের আলোচনা শুনছিলাম।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিশুকিশোরদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিচ্ছিলেন স্যার।
‘চিকিৎসা সেবায় ডাক্তারদের আন্তরিকতা কেমন হওয়া উচিৎ’, ছোট্ট একটা ছেলের এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্যার তাঁর
নিজের জীবনের এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করলেন যা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পরলাম। অভিভূতহয়ে পরলাম স্যারের আন্তরিকতা ও মানবতার দৃষ্টান্ত দেখে।
স্যার তখন চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে বিশিষ্ট ENT স্পেশালিষ্ট প্রফেসর ডা: নুরুল আমিন স্যারের অধীনে ট্রেনিং এ ছিলেন। তো একবার প্রফেসর স্যার কে না জানিয়েই প্রাণ গোপাল স্যার তাঁর এক সহকর্মীকে নিয়ে Nasopharyngeal Angiofibroma এর একটি কেইস অপারেশন করতে চাইলেন। সাধারণত এই কেসটি অপারেশন করার সময় অনেক বেশি রক্তক্ষরন হয়ে থাকে বিধায় স্যার অগ্রিম সাবধানতাপূর্বক তিন ব্যাগ রক্ত প্রস্তুত রেখে অপারেশন শুরু করলেন। কিন্তু অপারেশনের এক পর্যায়ে রোগীকে তিনব্যাগ রক্ত দেয়া হলেও তা যথেষ্ট ছিলনা। এতে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে খারাপতর হতে লাগল। এনেস্থিসিয়ার ডাক্তার জরুরী ভিত্তিক রক্ত সংগ্রহের জন্য রোগীর স্বজনদের দির্দেশ দিলেন। কিন্ত দুর্ভাগ্য! অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রক্তের কোন ব্যবস্থা হল না। এদিকে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগল। রোগীর জীবনের কথা ভেবে প্রাণ
গোপাল স্যার তখন তাঁর ঐ সহকর্মীকে রক্তক্ষরণের ঐ জায়গায় হাত দিয়ে চেপে ধরতে বলে অপারেশনের টেবিল ছেড়ে ছুটে চললেন ব্লাড ট্রান্স ফিউশন ডিপার্টমেন্টে। তারপর সে নিজেই রক্ত দিয়ে,সেই রক্ত এনে রোগীকে দিয়েছিলেন।
রোগীর প্রাণ রক্ষা করার চেষ্টায় একজন চিকিৎসক হিসেবে কতটুকু নিবেদিত প্রাণ হওয়া যায় স্যারের এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই অনুপ্রেরণার। রেস্পেক্ট ইউ স্যার। দীর্ঘ জীবি হোন স্যার।