লেখক ঃ ডাঃ অসিত বর্ধন,ভ্যানকোভার, কানাডা
তিন বছর ধরে তিল তিল করে একটা স্বপ্ন গড়ে তুলেছি। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবের মুখোমুখি।
দেশের বাইরে আছি প্রায় ১৬ বছর। কানাডায় এসে পরীক্ষার যাতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে ২০১২ তে শুরু হয় স্বপ্ন বুনন।
২০১৩ তে এই সফটওয়্যার তৈরি করা নিয়ে কাজ শুরু করি। স্বপ্ন ছিল এটা বাংলাদেশে ব্যবহার হবে। আর যদি বাইরের পৃথিবীতে নিতে পারি তাহলে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হবে প্রতিদিন প্রত্যেক ব্যবহারকারীর মুখে! সেজন্য এই সফটওয়্যার কোম্পানির সংক্ষেপিত নাম BDEMR. BD আমার প্রিয় বাংলাদেশ। EMR ইলেক্ট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড এর সংক্ষেপ।
এই তিন বছরে আমার হাসপাতালের পেশাগত ব্যস্ততার বাইরে প্রতিটা মুহূর্ত কেটেছে এই সফটওয়্যারর পিছনে। কত রাত ঠিক মত ঘুমাইনি। কত দিন ভোরবেলা এসে বসেছি কম্পিউটারের সামনে। গাল মন্দ শুনতে হয়েছে, নিজের বাড়িতেই! কারণ সুখে থাকতে ভুতে কিলায়! কি প্রয়োজন এভাবে নিজেকে নিঃশেষ করার? সময় নষ্ট, শরীর নষ্ট, টাকা নষ্ট! কোন রকমে কানে তুলা গুঁজে একলা চলেছি স্বপ্নের রাস্তায়। সামাজিক জীবনেও কত অভিযোগ! আমাকে পাওয়া যায়না, যোগাযোগ রাখিনা!
বাংলাদেশে কয়েকজন তরুণ কম্পিউটার বিজ্ঞানী আমার সেই স্বপ্নের কারিগর। স্কাইপি আমাদের যোগাযোগ। প্রায়ই মিটিং আর সিটিং চলে মাঝরাত পর্যন্ত, ততক্ষণে রাত নিজেই ঘুমিয়ে গেছে। বিরক্ত, বাড়ির সবাই বিরক্ত! হসপিটালে নার্সেরা আড়ালে হাসে হয়ত! বলে “অসিত তুমি ফোন এত ভালবাসো? অবসর পেলেই ডুবে যাও ফোনে? কাউকে তো আর বলা যায় না, ফোন দেখি না, ডুবে থাকি স্বপ্নের মধ্যে!
মাথায় ঘোড়ে কিভাবে আরও ভাল করা যায়? তথ্যগুলো ঠিক আছে তো ? সমসাময়িক তো? যেভাবে চেয়েছি ঠিক সেইভাবে পাওয়া যাচ্ছে তো?
মাঝে মাঝেই ক্লান্তি আসত ! কি দরকার?নিজে খুব তো খারাপ কিছু নেই! শরীর হাল ছেড়ে দিত। রাত কাটিয়ে আবার উঠে দাঁড়াতাম। শেষটুকু যে দেখতে চাই!
আমাদের কাজ প্রায় শেষ। আমাদের প্রথম সফটওয়্যার এনেস্থেসিয়া, আইসিইউ, ক্রনিক পেইন, সার্জারি, মেডিসিন সহ যে কোন বিশেষজ্ঞের ব্যবহার করার মত। এটার নাম “Anaesmon”।ওয়েবসাইট Anaesmon.com, অথবা app.anaesmon.com. কোম্পানির ওয়েবসাইট bdemr.com গতবার বাংলাদেশে যেয়ে কয়েকজনকে যখন জানালাম প্রতিক্রিয়া ছিল পাঁচমিশালি। “এসব এখানে চলবে না! কেউ কি ব্যবহার করবে?আমি নিশ্চয়ই ব্যবহার করব, তুমি নিয়ে এস অসিত!”
আশা নিরাশার দোলাচলে দুলতে থাকি। আমাদের প্রিয় দুইজন অধ্যাপক খুব উৎসাহ দিলেন। আবার আশার এক বিশাল বেলুন নিয়ে ফিরে আসি। আবার স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যাই। আমাদের আরও কয়েকটা সফটওয়্যার প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায়। এগুলোর নাম BDEMR Doctors app, BDEMR Patient app, BDEMR Report app।এগুলো দিয়ে অনলাইনে প্রেস্ক্রিপশান করা যাবে। যে কোন পরীক্ষার রিপোর্ট ঘরে বসে পাওয়া যাবে।
এবার Anaesmon দেখানো হবে কানাডায়। বাংলাদেশি চিকিৎসকের বানানো সফটওয়্যার হয়ত চলবে বিদেশিদের কম্পিউটারে, ফোনে। আজকের ছবিগুলো কানাডার ভাঙ্কুভারে আমার এক্সিবিশন বুথের ছবি। কানাডিয়ান এনেস্থেশলিওজিস্ট সোসাইটির বার্ষিক সভায়। ছবিগুলো বুথ ন্যাড়া অবস্থায় হাতে পাওয়া থেকে আমার নিজের হাতে ব্যনারা টাঙ্গিয়ে সাজানো পর্যন্ত।
প্রথম যখন হাতে পেলাম বুথ, একটু আবেগ এসে ভর করেছিল, যখন গোছানোর কাজ প্রায় শেষ তখন জানিনা কে কাঁদছিল চোখ না কি ঠোঁট! না কি আসলে দুটোই হাসছিল!
আর ANAESMON, প্ল্যাটফর্ম এর সহযোগিতায় খুব শিঘ্রই বাংলাদেশে এর কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ।
তাই বাংলাদেশে এই সফটওয়্যার চালাতে গেলে আপনাদের সবার সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন!
আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতার আশায় রইলাম! স্বপ্নটা কেবল চোখ থকে বাস্তবে নেমে এসেছে , কতদূর গড়াবে? চলুন একসাথে দেখি!
Edited by :Ishrat Jahan Mouri