যারা নন ক্লিনিক্যাল, প্যারা ক্লিনিক্যাল বা বেসিক সাব্জেক্টে বাইরে পড়তে যেতে চান, তাদের জন্য সংক্ষেপে কিছু কথা।
প্রথম কথা হল, হুট করেই ডিসিশন নেয়া ঠিক হবে না, লাইফে কি চান, বাবা মা কি চায়, সাধ সধ্যের মধ্যে স্বপ্নপূরণ, অসীম ধৈর্য্য এবং পদে পদে না জানার জন্য যে বিরক্তি আর অসহায়ত্ব সেটা মাথায় রাখতে হবে। যা বলতে চাচ্ছিলাম, পয়েন্ট আকারে কিছু জিনিস মাথায় গুছিয়ে নিন।
১) সিদ্ধান্ত নিন। কিসে পড়বেন, কেন পড়বেন, লাইফে কি চান? আমি ক্লিনিকে খ্যাপ মারলাম, আমি আইইএলটিএস এর পড়া পড়লাম, আমি আবার জিআরই এর জন্য ট্রাই করলাম, আমি দিলিপ স্যারের কোচিং করলাম। এবং দিনশেষে দেখা গেল আমি কিছুই পেলাম না। এরকমটা না করে লক্ষ্য স্থির করুন। পোস্টগ্রাজুয়েশন (এফসিপিএস, এমডি, এমএস) চাইলে সেভাবে পড়াশোনা করুন, বাইরে পড়তে যেতে চাইলে আবার অন্যরকম মাইন্ডসেট নিয়ে আগান।
২) দেশ ঠিক করুন। কোথায় যেতে চান, কোন ভার্সিটিতে পড়তে চান। যদি ইচ্ছে থাকে ইউএস, কানাডা। গো ফর জিআরই-টিওইএফএল। তা যদি না হয়, তাহলে অন্যান্য দেশের জন্য আইইএলটিএস যথেষ্ট। তবে কানাডা এমেরিকার অনেক ভার্সিটিই কিন্তু আইইএলটিএস এলাউ করে। আবার কানাডা এমেরিকার বাইরে অনেক ভার্সিটি জিআরই মার্ক চেয়ে বসতে পারে। এটা আসলে ভার্সিটির ওয়েবসাইটেই বিস্তারিত পাবেন। তবে যেটাই করেন না কেন, ট্রাই টু গেট স্টান্ডার্ড মার্ক/পয়েন্ট। কারণ, যেখানে রিকয়েরমেন্ট আইইএলটিএস ৬, সেখানে যদি আপনি ৬ পেয়ে এপ্লাই করেন, আর আরেকজন ৭ পেয়ে এপ্লাই করে। তাহলে ভার্সিটি কাকে প্রায়োরিটি দেবে? ভেবে দেখেন। কিছু ভার্সিটি মিডিয়াম অফ ইন্সট্রাকশন হিসেবে আপনার পূর্বের পড়াশোনা (মানে আমাদের এমবিবিএস) ইংলিশ ছিল এটা দেখে কনভিন্সড হয়, কিন্তু রিসেন্টলি সেরকমটা হচ্ছে কিনা জানা নেই। হয়ত ব্রোশিওরে পাবেন, কিন্তু নেবার ক্ষেত্রে যার সব কিছু ভাল তাকেই নিবে ভার্সিটি।
৩) ভার্সিটিতে এপ্লাই করার আগে নিজের প্রোফাইল রিচ করুন। সেটা কিরকম, যে সাব্জেক্টে যাইতে চান সেই সাবজেক্ট রিলেটেড জবের এক্সপেরিয়েন্স দেশে থাকতেই নিয়ে নিন। যেটা আমাদের দেশের মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য বা মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটদের জন্য একটু টাফ, কিন্তু অসম্ভব না। একটা ছোট উদাহরণ দেই। ধরুণ, মাইক্রোবায়োলজিতে বাইরে পড়ার ইচ্ছে। সে রিলেটেড জব কই? আচ্ছা, ধরলাম মেডিকেল কলেজের সাব্জেক্ট রিলেটেড টিচার হলেন (প্রায় অসম্ভব অপশন, রিকমেন্ডেশন ছাড়া)। কিন্তু তাও যদি না থাকে কপালে। এইবার তাকান আইসিডিডিআরবি, ঢাবির দিকে। এসব জায়গাতে কিন্তু চোখ কান খোলা রাখলেই দেখবেন পাচ ছদিনের ছোট ছোট ট্রেনিং হয়। এই যেমন এ মাসেই কিন্তু আইসিডিডিআরবি তে Computational Analysis of Biological Sequence Data এর উপর পাচ দিনের ট্রেনিং আছে। কজনে জানতাম সেটা? জানতাম না। তো এরকম অন্যান্য সাব্জেক্টের ও চোখ কান খোলা রাখলে দেখবেন যে এরকম ছোট ছোট কোর্স আছে, যেগুলো করা থাকলে ফিউচারে কাজে দিলেও দিতে পারে।
৪) পাঁচ বছরের পড়া, এক বছরের ইন্টার্নশিপ। সরাসরি পিএইচডি কি পসিবল? হ্যা, পসিবল। তবে আমার জানামতে, সেটা অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার হাতে গোনা কয়েকটা ভার্সিটিতে। ওইগুলাকে আমি ব্যতিক্রম হিসেবে ধরতে চাই, উদাহরণ হিসেবে না। তবে, বাস্তব কিন্তু নির্মম যে সত্য সেটা হল সারা দুনিয়াতে পিএইচডি তে এনরোল্ড হইতে গেলে একটা মাস্টার্স ঝুলিতে লাগে, তারা দেখতে চাই আপনার মাস্টার্স রেজাল্ট কিরকম, বা মাস্টার্সে থিসিস প্রপোজাল কি ছিল।
৫) তো আপনার এখন একটা মাস্টার্স প্রয়োজন। সেটা দেশেও করতে পারেন, বাইরেও করতে পারেন। দেশে করা অপেক্ষাকৃত সহজ, কিন্তু বাইরে করতে গেলে সবার আগে যে বিড়ম্বনা ফেস করবেন সেটা হল, ফান্ডিং বা স্কলারশিপের অভাব মাস্টার্স লেভেলে। মানে পিএইচডি এর জন্য যেখানে ফান্ডিং পাবার সমূহ সুযোগ থাকে, সেখানে দেখা গেল মাস্টার্সের জন্য বিদেশি ভার্সিটিরা টাকা খরচ করতে রাজি নয়। তাই ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, দেশে মাস্টার্স করে বাইরে পিএইচডি এর জন্য এপ্লাই করা বেশি সুবিধাজনক। দেশের অপশনগুলো একটু খোজ খবর করলেই পাবেন। আবারো বলছি, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিমত।
৬) রিসার্চ বা পাবলিকেশন। এই বিষয়ে কবি নীরব। কিরকম নীরব? এক, আমাদের দেশে এমবিবিএস লেভেলে এই বিষয়ে যুক্ত হওয়া খুবই অসম্ভব টাইপের একটা ব্যাপার। এমবিবিএস কমপ্লিট করেও যে সুযোগ পাবেন সেটাও কেউ বলতে পারে না। হয় আপনাকে রিসার্চ এসোশিয়েসনের সাথে যুক্ত হতে হবে বা কোন বড় স্যার ম্যাডামের সাথে ভাল খাতিরের সুবাদে তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। খুবই কস্ধ্যষ্ট ব্যাপার, কিন্তু আবারো বলছি অসম্ভব না। আর তাও যদি না পারেন, তবে নিজেকে রিসার্চার হবার উপযোগী হিসেবে তৈরি করুন। ওই যে বললাম ছোট ছোট কোর্স, রিসার্চ মেথডোলজি নিয়ে অল্প বিস্তর জ্ঞান।
৭) চোখ রাখুন স্কলারশিপ পোর্টালগুলোতে। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্কলারশিপ এনাউন্সড হয়। হোক না হোক, ট্রাই করতে দোশ কি?
৮) টেক স্যাভি হোন। নিজের কনফিউশন নিজেই দূর করার চেষ্টা করেন। কিভাবে কি খুজবেন, নেট থেকে রিসোর্স ম্যাটেরিয়াল কিভাবে খুজবেন, ভার্সিটিকে কিভাবে মেইল পাঠাবেন, কি আস্ক করবেন, কি কি লাগবে, কি কি করতে হবে। এগুলো হাতে কলমে বলে দেয়ার লোক কেউ নাই রে ভাই, নিজেরটা নিজেই করতে শিখতে হবে। গুগল আছে, ভার্সিটি ওয়েবসাইট আছে, সেই ওয়েবসাইটের এডমিশন অফিস লিংক আছে। আর কি লাগেরে ভাই।
৯) কিছু অনলাইন কোর্স করে রাখতে পারেন। এগুলো কাজে দেবে কি দেবে না সেটা কেউ বলতে পারে না, কিন্তু ভার্সিটির তো জানা থাকল সে বিষয়ে আপনার অল্প বিস্তর পড়াশোনা তো করা আছে।
১০) সবশেষে বলতে চাই, বাইরে পড়তে যাইতে চাই বললেই তো আর বাইরে পড়তে যাওয়া যায় না। নিজের ভেতর স্বপ্নটাকে জিইয়ে রাখুন। কারো এক বছর লাগতে পারে, কারো হয়ত তিন চার বছর ও লাগতে পারে। মেডিক্যাল চান্স পাওয়াটা যেমন একটা যুদ্ধ, এই বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগটাও আরেকটা যুদ্ধ। সে যুদ্ধে সামিল হবেন কিনা তা একান্ত আপনার সিদ্ধান্ত।
বিঃদ্রঃ লেখার ভিতরে অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে। খোলা চোখে যা দেখেছি, যা বুঝেছি তা থেকেই লেখাটি লেখা। আমি শুধু চেয়েছি কিছু কনফিউশন দূর করতে বা বার বার করা প্রশ্নের উত্তর দিতে, আর কিছু না। অগ্রজদের প্রতি অনুরোধ থাকল, ভুল ভ্রান্তিগুলো শুধরে দেয়ার।
লিখেছেন: ডা. হাসান শুভ (খুলনা মেডিকেল কলেজ)
🙂
Sanjida Moon আপু 🙂
*
I am doctor from Bangladesh and currently working in Australia as a Docotor for last 2 years. I had to struggle for around 4 years but that’s not at all a issue now. I knew what I wanted to do and I never lost my determination at any point. Writers first point of the above topic is the most important thing to do career overseas. Best wishes for everyone