বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিক ডিজঅর্ডার গবেষণা ও পুনর্বাসন সংস্থা (Bangladesh Institute of Research and Rehabilitation in Diabetes, Endocrine and Metabolic Disorders) বারডেম হাসপাতাল সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ডা: মোহাম্মদ ইব্রাহিম কর্তৃক ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল ও সংস্থা বাংলাদেশের ডায়াবেটিক রোগিদের ডায়াবেটিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে। ডা: মোহাম্মদ ইব্রাহিম সম্পর্কে বলা হয় তিনি বহুদিন আগেই এমন একটি রোগের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিকল্পনা করেছিলেন যা পরবর্তী ৩০ বছরের ভিতর মহামারী হয়ে উঠবে। ১৯৮০ এর দিকে বাংলাদেশ তখনও রোগতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যায় নাই। সংক্রামক ব্যাধি ছিল তখনও মৃত্যুর প্রধান কারণ। সেই সময় ডা: মোহাম্মদ ইব্রাহিম যে দূরদৃষ্টি দিয়ে ডায়াবেটিসের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিকল্পনা করেছিলেন, তা অনন্য সাধারণ।
এই রকম আরেকজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মহামানবের কথা বলব আজ। তাঁর নাম ডাঃ এ কে এম আব্দুল ওয়াহেদ। পঞ্চাশের দশকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তাঁর যে অবদানের কথা কেউ জানে না তা হচ্ছে তিনি ১৯৬০ সালে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৬০ সালে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের কথা শুনলে সবাই হাসবে। তখন গড় আয়ুষ্কাল ছিল অনেক কম। কিন্তু এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির কারণে গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিহার হ্রাস পেয়েছে। ফলে এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭% প্রবীণ (ষাট ও তর্দুধ)। ১৯১১, ১৯৫১, ১৯৭৪, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালরে প্রবীণ শুমারী অনুযায়ী বাংলাদশেরে প্রবীণ (ষাট ও তর্দুধ) জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছলি যথাক্রমে ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার, ২৮ লক্ষ ৬০ হাজার, ৪৯ লক্ষ, ৬০ লক্ষ ৫ হাজার এবং ৭০ লক্ষ। ২০৫০ সালে জনসংখ্যার ২০% প্রবীণ হবে। এই জনগোষ্ঠীর ভিতর অসংক্রামক রোগ বেশি হয়। এই জনমিতির পরিবর্তন আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
আজ থেকে ৫০/৬০ বছর আগেই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম আব্দুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালে বাংলাদশে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান নামে একটি প্রতষ্ঠিান গড়ে তোলেন। তাঁর এই প্রতিষ্ঠান কতখানি সফল জানি না, কিন্তু তাঁর এই দূরদৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমাদের উচিত প্রবীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সচেতনতা গড়ে তোলা। এই মহান চিকিৎসকের স্মৃতির প্রতি রইল শ্রদ্ধা।